শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবী-জীবনে সত্যবাদিতা-১

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

সূরাতুল আহযাবের ২১ নং আয়াতে আল্লাহপাক মুমিনদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) এর মাঝে রয়েছে উত্তম অনুসরণ’। অর্থাৎ তিনিই উম্মাহর আদর্শ, তাঁর অনুসরণই কাম্য। ‘তোমাদের জন্য’ মানে তোমরা যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করো, আখেরাতের নাজাত প্রত্যাশা করো, যারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর তাদের জন্য।

এই আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, রাসূলে কারীম (সা.) এর অনুসরণ, তাঁকে উসওয়া হিসেবে গ্রহণ করা ঈমানের প্রধান দাবি। এই দাবি পূরণের জন্য আমাদের নবী-আদর্শ সঠিকভাবে জানতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে। যেন আমরা হতে পারি তাঁর প্রকৃত অনুসারী এবং আদায় করতে পারি তাঁর উম্মত হওয়ার হক।

রাসূলে কারীম (সা.) জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ। ইবাদত-বন্দেগি, আকীদা-বিশ্বাস, আচার-ব্যবহার, আদব-আখলাক, স্বভাব-চরিত্র সকল বিষয়ে আদর্শ। আর তা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কাজেই তাঁর আদর্শের অনুসরণে নিজের কর্ম ও জীবনকে গড়ে তোলা আল্লাহর আদেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব হবে।

আল্লাহর রাসূল (সা.) হচ্ছেন পবিত্র ও নির্মল জীবনের নমুনা, কাজেই জীবনের যে ক্ষেত্রেই তাঁকে অনুসরণ করা হবে, জীবনের ঐ ক্ষেত্রটি পবিত্র ও নির্মল হয়ে উঠবে। জীবনের অনেক অধ্যায়, অনেক অঙ্গন। এক বড় অধ্যায় স্বভাব-চরিত্র। কেউ যদি জীবনের এই অধ্যায়টিকে জ্যোতির্ময় করতে চায় তার কর্তব্য আল্লাহর রাসূল (সা.) এর অনুসরণ করা। আল্লাহপাক তাঁর সম্পর্কে এই সনদ দিয়েছেন : ‘নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী, মহান আখলাকের অধিকারী।’ সুতরাং স্বভাব-চরিত্র, আচার-ব্যবহার উসওয়ায়ে রাসূলের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
তাঁর জীবনের, স্বভাবের এক উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সত্যবাদিতা। নবুওতের আগ থেকেই তিনি তাঁর সমাজে প্রসিদ্ধ ছিলেন সত্যবাদী ও আমানতদার হিসেবে। আমরা সবাই এই বিষয়টি জানি। এই প্রসিদ্ধি কি একদিনে হয়েছিল? না, একদিনে হয়নি। ভাবমর্যাদা একদিনে গড়ে ওঠে না। তা গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে, নানা ঘটনায়, নানা পরিস্থিতিতে। আরবের কুরাইশের মাঝে তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাঁর কথা-কাজ, তাঁর আচার-আচরণ সব তাদের সামনে ছিল। তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবন তাদের সামনে ছিল। এই দীর্ঘ জীবনে তাঁর কর্ম ও আচরণ থেকে তাঁর সমাজ এই বিশ্বাস গ্রহণ করেছে যে, এই মানুষটি একজন সত্যবাদী, আমানতদার মানুষ।

নবুওতের পূর্বের ঘটনাবলিও আলোচনা করা যেতে পারে। বিভিন্ন ঘটনা আপনাদেরও অনেকের জানা আছে। লম্বা আলোচনার সুযোগ নেই। তবে এক দুইটি দৃষ্টান্ত আমরা স্মরণ করতে পারি। সহীহ বুখারীতে এক অসাধারণ ঘটনা আছে।

আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর ওপর যখন প্রথম ওহী নাযিল হলো এবং তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন ওই সময় উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা (রা.) যে কথাগুলো বলে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, তা তাঁর উন্নত কর্ম ও চরিত্রের এক অসাধারণ সনদ। আম্মাজানের কথাগুলো সহীহ সনদে, সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) উম্মুল মুমিনীন খাদীজা (রা.)-এর কাছে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছিলেন : আমি আজ যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, এতে আমার প্রাণের আশংকা হচ্ছে।

উম্মুল মুমিনীন তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন : না, এ হতেই পারে না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আল্লাহপাক কখনো আপনাকে অপদস্থ করবেন না, (আল্লাহপাক তো আপনাকে সম্মানিত করবেন,) কারণ আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, সত্যকথা বলেন, অন্যের ভার বহন করেন, মেহমানদারী করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ান- (এইসকল গুণের অধিকারী যিনি, তাকে আল্লাহপাক সম্মানিত করবেন, তাকে তিনি কখনো অপদস্থ করবেন না।) (সহীহ বুখারী : ৬৯৮২)।

এখানে হযরত খাদীজা রাযিআল্লাহু আনহা, যিনি এই মানুষটির সাথে ইতোমধ্যে পনের বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন, তাঁর সনদ : ‘আপনি সত্য কথা বলেন।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
সাইফ আহমেদ ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০২ এএম says : 0
নবী করিম (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ থেকে মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা ও মানবকল্যাণ সুনিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়
Total Reply(0)
তারেক আজিজ ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৩ এএম says : 0
মহানবী (সা.) সৎ স্বভাব, সত্যনিষ্ঠা, সৌজন্যবোধ, বিনয় ও নম্রতার যে অনুপম শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পারস্পরিক সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারি। তাঁর সাধারণ জীবনযাপন, বিনম্র আচার-আচরণ, উপদেশাবলি অনুশীলন করলে এবং আদর্শ গুণাবলি নিজেদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুশীলন করে চললে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভে ধন্য হতে পারে
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৪ এএম says : 0
তিনি সব সময় মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন ও সদালাপ করতেন। তাঁর মধুর বচনে সবাই অভিভূত হতো। তাঁর অভিভাষণ শুনে জনসাধারণ অশ্রু সংবরণ করতে পারত না। তিনি জনগণকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দয়ালু প্রভু আল্লাহর ইবাদত করো, ক্ষুধার্তকে খাদ্য প্রদান করো, সালামের বহুল প্রচলন করো এবং এসব কাজের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করো।’
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৪ এএম says : 0
তাঁর কোমল ব্যবহার সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) কঠোর ভাষী ছিলেন না, এমনকি প্রয়োজনেও তিনি কঠোর ভাষা প্রয়োগ করতেন না। প্রতিশোধপ্রবণতা তাঁর মধ্যে আদৌ ছিল না। মন্দের প্রতিবাদ তিনি মন্দ দিয়ে করতেন না, বরং মন্দের বিনিময়ে তিনি উত্তম আচরণ করতেন। সব বিষয়েই | তিনি ক্ষমাকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি এতটা বিনয়ী ও নম্র ছিলেন যে কথা বলার সময় কারও মুখমণ্ডলের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করে কথা বলতেন না। কোনো অশোভন বিষয় উল্লেখ করতেন না।’
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৪ এএম says : 0
তাঁর কাছ থেকে বিধর্মীরাও আশাতীত সুন্দর কোমল আচরণ লাভ করত। তিনি এতই নমনীয় ও কোমলতর ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন যে তাঁর পবিত্র সংস্রব কিংবা সামান্যতম সুদৃষ্টির কারণেও অনুসারীরা তাঁকে প্রাণাধিক ভালোবাসত এবং মনে-প্রাণে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করত।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন