দেশের মানুষের চাহিদা থাকা সত্বেও সদ্য শেষ হওয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতে ১ হাজার ১৩৭ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ভারতীয়দের মুখ থেকে রূপালি ইলিশের গন্ধ এখনও দূর না হতেই তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে পানিতে ডুবিয়ে মারছে ভারত।
প্রতিবেশী দেশটির এমন অকৃতজ্ঞ আচরণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইলিশ পাঠানোর প্রতিদানেই কি তারা ডুবিয়ে মারছে আমাদের? ভারত থেকে নেমে আসা বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথেই যেন ক্ষোভ উতলে পড়ছে ফেসবুকে। বন্ধু দেশের এই নিষ্ঠুর আচরণের ব্যাপক সমালোচনা চলছে নেট দুনিয়ায়।
সর্বশেষ তথ্যমতে, তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তা ও আশপাশের এলাকায় ৪০০ ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভারত থেকে নেমে আসা পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাস ভেঙ্গে গেছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে রেড এলার্ট জারি করে তিস্তার তীরবর্তী লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাইকিং করছে। বুধবার দুপুর ২ টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেসবুকে আবরার আসিফ বিশ্বাস লিখেছেন, ‘‘ভারত সরকার বাহ। আপনাদের দেশের সকল পন্য আমরা কিনি ব্যবহার করি, টিভি চ্যানেল সব কিছু আমাদের দেশের মানুষ আপনাদের চ্যানেল দেখে। আমাদের টাকায় আপনাদের অর্থনীতি সচল অথচ অনেক বৃষ্টি বেশি হয় তখনই আপনারা পানি ছেড়ে দেন আমরা বন্যায় ভেসে যাই। আবার যখন পানির দরকার তখন একটু ও পানি দেন না।আমাদের সেচ দিতে কষ্ট হয়।’’
ভারতের সমেোচনা করে আসিফ জামান মুগ্ধ লিখেছেন, ‘‘যখন পানি দরকার হয় তখন দেয় নাহ, আর যখনই... উতলে পড়ে তখন ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ ভাসায়ে দেয়, অথচ স্বাভাবিক গতিপথ ঠিক রাখলে, না ডোবে ভারতে না ডোবে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশ ২০০০ টন ইলিশ উপহার পাঠাবে।’’
মোঃ রাইহান লিখেছেন, ‘‘ভারত বেশি করে পানি দিচ্ছে ।চিন্তা কইরেন না, সরকার সেই পানিতে বছরের বেশিরভাগ সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইলিশের প্রজননের সুযোগ করে ঐ ইলিশ আগামী বছর আরো বেশি করে ভারতে রপ্তানি করা হবে।’’
মোঃ লিটন গাজীর পরামর্শ, ‘‘কোরাবানির ঈদে গরু রফতানি বন্ধ করে ছিলো সাময়িক দুই-তিন বছর সমস্যা হয়েছিল এখন যদি ভারতের গরু লাগে বাংলাদেশ থেকে দেয়া যাবে, যেকোনো সমস্যা সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করে সেই সঠিক পথ সঠিক সময়ে কাজে লাগালে পরবর্তীতে সেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়না, বাংলাদেশের সবচেয়ে নজর দেয়া উচিৎ যেসকল জিনিসের উপর আমাদের অন্যের দেশের উপর নির্ভর করতে হয় সেই সকল জিনিস যেগুলো আমাদের উৎপাদন সম্ভব সেগুলো উৎপাদন করা। নইলে এভাবেই আমাদের সাথে অন্যায় ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে প্রতিবেশী বন্ধুরা আর বন্ধুদের নমুনা যদি হয় এরকম তাহলে শত্রুরা কেমন হতে পারে একবার ভেবে দেখুন।’’
তিস্তায় ভারতের চেয়ে উঁচু বাধ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে ইয়াসিন খান লিখেছেন, ‘‘প্রতিবছরই তো এমন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারের কি কিছুই করার নাই? আমাদের সীমানায় কেন আমরা ওর চেয়ে বড় বাধ নির্মাণ করতে পারি না।সমস্যা কোথায় আমাদের।’’
নয়ন লিখেছেন, ‘‘এজন্যই দেখি ওপারে বেশী পানি হলে একটু নামধারী বৃষ্টিতে এখানে কেন। বন্যায় বাড়িঘর ভেসে উত্তরের মানুষের মাঝে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। আর যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন পানি আটকায় দিয়ে আমাদের অসহায় বানিয়ে তারা খেলতে পছন্দ করে। ওনাদের মন্ত্রিরা এসে মিথ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেন আর অভিনয় করে পাওয়ারটা হাতে রেখে দেয়।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা মোঃ আক্তারুজ্জামান লিখেছেন, ‘‘ভয়ংকর রূপে তিস্তা নদী ও এর আশপাশ। ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানির ঢলে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধায় তলিয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের অনেক নিম্নাঞ্চল। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।’’
শহিদুল ইসলাম সুমন লিখেছেন, ‘‘সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি,বাংলাদেশের ভারতপ্রেমী সকল... ভাইদেরকে তিস্তার তীরবর্তী এলাকা গুলো তাদের জন্য বরাদ্দ করা হোক।’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন