ক্রিকেটপাগল এক জাতি বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ যেই-ই হোক, স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা চাই-ই চাই। শুধু দেশেই নয়, যেখানেই বাংলাদেশের খেলা হোক স্টেডিয়ামে বসে দলকে উজ্জ্বীবিত করার যে আপ্রাণ প্রয়াস সেটি খুব কম জাতিতেই দেখা যায়। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীদের লাল-সবুজের পতকা উড়িয়ে, নানান রঙয়ে সেজে, বাঘের অবয়ব নিয়ে গ্যালারি মাতাতে এদেশের মানুষের জুড়ি মেলা ভার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এর ব্যতিক্রম নয়। শত কর্মব্যস্ততা ঊপেক্ষা করে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের দূর-দুরান্ত থেকে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন হাজার হাজার বাংলাদেশী। তবে খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বিমাতা সূলভ আচরণের শিকার হয়েছেন তাদের অনেকেই! প্রবাসী বাংলাদেশিরা অভিযোগ করেছেন, ভারতের দর্শকদের মাঠে পতাকা নিয়ে প্রবেশাধিকার থাকলেও লাল-সবুজের পতাকা দেখলেই ‘ভারত নিয়ন্ত্রিত’ বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার কর্মীরা তাদের হাত থেকে পতাকা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়েছেন ওয়েস্ট বিনে!
মরূর দেশের তিনটি ভেন্যু শারজা, আবুধাবি আর দুবাইয়ে বর্তমানে চলছে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের খেলা। মূল পর্বে নাম লেখানোর আগে শুরুতে কথা ছিল বাছাই বৈতরণী পেরুলে বাংলাদেশ খেলবে খেলবে এক নম্বর গ্রুপে। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ আইসিসির খামখেয়ালিতে নিয়ম বদলে দেওয়ায় বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে দুই নম্বর গ্রুপে। আর তাতে প্রথমে এই পর্বে যেখানে ৫ ম্যাচের দুটি হবার কথা ছিল দুবাইয়ে, হচ্ছে একটি। শারজা আর আবুধাবিতেও বদলে গেছে ম্যাচের তারিখ ও প্রতিপক্ষ। আর তাতে আগে থেকেই টিকি কিনে রাখা দর্শক কিংবা অ্যাক্রেডিটেশন করা বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরও কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি। এতেও খ্যান্ত হয়নি আইসিসি। নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে এক শহর থেকে অন্য শহরে এসেও যখন বাংলাদেশের খেলা দেখতে প্রবাসীরা হাজির হয়েছেন স্টেডিয়ামে, গ্যালারিতে ঢোকার প্রবেশমুখেই তাদের হাতে থাকা লাল-সবুজের পতাকা কেড়ে নিয়েছে নিরাপত্তা কর্মীরা। আমাদের গর্বের পতাকার ঠাঁই হয় পাশে রাখা ডাস্টবিনে!
প্রিয়জন রেখে বিদেশ বিভূঁইয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিটি বাংলাদেশি প্রবাসী অর্থ পাঠান এদেশে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ঐ সমস্ত ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’দের অবদান অনস্বিকার্য। এদেশে আমাদের অনেকেই যেখানে দেশপ্রেম দেখাতে কার্পণ্য করি সাত সমূদ্র তের নদীর ওপারে থাকা ঐ মানুষগুলোর কাছে দেশের নাম, পতাকার মুল্য অপরিসীম। তাদের এহেন হেনস্তা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গতপরশু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে আবুধাবিতে ম্যাচ শেষে দেশের একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলকে এক প্রবাসী বলেন, ‘আমরা এখানে আমাদের দেশের খেলা দেখতে এসেছি। আমাদের অনেকের হাতেই ছিল বাংলাদেশের পতাকা। তবে গেটে প্রবেশের সময় আমাদের গর্বের সেই পতাকা কেড়ে নিয়েছে গেটম্যানরা। শুধু তাই নয়, পতাকাগুলো নিয়ে ডাস্ট বিনে ফেলে দিয়েছেন তারা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
এতো গেল মাঠের বাইরের কথা। মাঠের ভেতরেও আইসিসির খামখেয়ালিপনার খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। আগের সূচিতে যেখানে কমপক্ষে দুদিন পর পর খেলার যুযোগ পেতো মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা, নতুন সূচিতে সেখানে টানা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। আর তার পরিণতি আমাদের চোখের সামনেই। এক শহর থেকে আরেক শহরের টানা ভ্রমণক্লান্তি আর অবসাদের ছাপ পড়ছে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে। এই ভ্রমণ ক্লান্তি কমাতে ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ভেন্যুতে অনুশীলন না করে দুবাইয়েই অনুশীলন সেরেছে বাংলাদেশ দল। আর আজকের বাঁচা মরার ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবার আগে গতকাল শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অনুশীলনই বাতিল করেছে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। বিনা অনুশীলনেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলতে হবে মুশফিক-সাকিবদের। অথচ, গত রোববার পাকিস্তানের সাথে ম্যাচ খেলার এক সপ্তাহ আগামী রোববার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত!
আইসিসির এমন দ্বিমুখী আচরণ কি শুধু বাংলাদেশের জন্যই? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আমিরাতে বিশ্বকাপ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিক থেকে শুরু করে প্রবাসী দর্শকদের মনেও। এমন বিমাতাসূলভ আচরণের পর তারা আইসিসির কাছে জানতে চেয়েছেন, আইসিসি কি “ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল” নাকি “ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল”?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন