সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কানকথা, আড়িপাতা, গোপন পরামর্শ-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইহুদী-মোনাফেকদের বদঅভ্যাস ছিল, তারা হুজুর (সা.)-এর মজলিসে বসে কানাকানি করত, মজলিসের লোকদের উপহাস করত, তাদের দোষ বের করত, একে অপরের কানে এমনভাবে কথা বলত এবং চোখের ইশারা করত, যাতে খাঁটি মুসলমানদের মনে কষ্ট হতো এবং তারা হুজুর (সা.)-এর বক্তব্য শ্রবণ করে বলত ‘এ কঠিন কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ সূরা ‘নিসা’র আয়াতে এ ধরনের কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল এইভাবে: ‘তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই তবে কল্যাণ আছে যে সলা-পরামর্শ, দান-খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকল্পে করত, তা স্বতন্ত্র , যে এ কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, আমি তাকে বিরাট পুরস্কার দান করব।’

কিন্তু এ বেহায়া কষ্ট দানকারীরা তাদের এসব আচরণ হতে বিরত হওয়ার পরিবর্তে তাদের হঠকারিতা অব্যাহত রাখে। তারা মনে করতে থাকে, এরূপ অশালীন-অসদাচরণ করলে লোকদের নিকট তারা বাহবা কুড়াতে পারবে, তাদের মান-সম্মান বাড়বে। মজলিসে মুসলমানদেরকে অপদস্ত ও লজ্জিত করার এ ঘৃণ্য আচরণের বিরুদ্ধে আয়াতে বলা হয়েছে, এহেন আচরণে তাদের কোনো কল্যাণ নেই। গোপনীয়তার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে যারা বর্ণিত কাজগুলো করবে, তাদের জন্য পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে।

সূরা মোজাদালাহতে কানকথার বিরুদ্ধে সরাসরি বলা হয়েছে : ‘মোমেনগণ! তোমরা যখন কানাকানি কর তখন পাপাচার, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো যার কাছে তোমরা একত্রিত হবে। এ কানাঘুষা শয়তানের কাজ; মোমেনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্য। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৯-১০)।

‘নাজওয়া’ মানে কু-মন্ত্রণা ও কু-পরামর্শ। বিপক্ষের প্রতিক‚লে মন্ত্রণা বা গুপ্ত পরামর্শ করাকে নাজওয়া বলা হয়। সদুদ্দেশ্য ব্যতীত এরূপ মন্ত্রণায় কোনোই সুফল হতে পারে না, যা সূরা নিসা এর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে পরস্পর কানকথার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়েছে। সেকালে ইহুদী-মোনাফেকদের মধ্যে এ মারাত্মক ব্যাধি এতই ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল যে, সে সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোরআনে বিভিন্ন আয়াত নাজেল হয়।

সূরা মোজাদালাহতে একইসঙ্গে আরো কয়েকটি আয়াত নাজেল এবং শানে-নুজুল সম্পর্কে বলা হয়, এগুলোর সাথে কয়েকটি ঘটনা জড়িত। ইহুদী ও মুসলমানদের মধ্যে শান্তিচুক্তি ছিল, কিন্তু ইহুদীরা যখন কোনো মুসলমানকে দেখত, তখন চিন্তা-ধারাকে বিক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে পরস্পরে কানাকানি শুরু করে দিত। মুসলমান ব্যক্তি মনে করতো যে, তার বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্ত করা হচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সা.) ইহুদীদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করেন; কিন্তু তারা বিরত হলো না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭নং আয়াতটি নাজেল হয় এবং প্রত্যেকটি আয়াতের বিবরণ তফসীরসমূহে রয়েছে।

বিভিন্ন সৎ উদ্দেশ্যে কোনো বিষয় বা পরিকল্পনা গোপন রাখা জরুরি হয়ে পড়ে এবং বিশেষ বা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়। এজন্য গোপনে পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এরূপ মঙ্গলজনক কাজের জন্য পরামর্শ করাকে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করা যায় না। ষড়যন্ত্র সেসব বিষয়ে হয় যা মানুষের ক্ষতি সাধন ও অনিষ্ট সাধনের জন্য হয়ে থাকে।

প্রকাশ্য বা গোপনে, কখনো মন্দ ও অবাধ্যতার জন্য পরামর্শ হলে প্রচলিত ভাষায় তাই ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত। তার পরিবর্তে সর্বদা সৎ ও খোদাভীতির জন্য হলে তা ষড়যন্ত্র নয়। সূরা মোজাদালাহ এর সংশ্লিষ্ট আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে, যাতে কারো ক্ষতি সাধন নেই। গোপন পরামর্শ বা কানাঘুষা করার বিষয়টি আয়াতে সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। গুপ্তকথা বা কানাকানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ সর্ম্পকে সূরা ‘আল হুজুরাতে’ আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন এবং তা হচ্ছে, কারো দোষ-ত্রুটি খোঁজে বেড়ানো এবং তা লোকের মধ্যে গোপনে প্রচার করা।
আয়াতে বলা হয়েছে : ‘হে মোমেনগণ! তোমরা অনেক মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাক, নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত: তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরমদয়ালু।’ (আয়াত : ১২)।

এ আয়াতে সমাজে প্রচলিত তিনটি প্রথাকে হারাম করা হয়েছে। ধারণা, কোনো গোপন দোষ সন্ধান করা এবং গীবত বা পরনিন্দা করা। এ তিনটি পাপের মধ্যে দ্বিতীয় পাপটি যেহেতু গোপনীয়তার সাথে জড়িত এবং গুপ্তকথা বা কানাকানির ভিন্ন রূপ, যা বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যাকে প্রচলিত অর্থে আড়িপাতাও বলা যেতে পারে। তাই বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে আলোচনার দাবি রাখে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Rutbatul Sakhil ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৪৮ এএম says : 0
What is the punishment of backbiting???
Total Reply(0)
Jahidul Islam ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৪৮ এএম says : 0
If someone is backbiting of others to me but I remain quite and just listened but didn't give a reply of it! Would that be also haram? I mean to say if I am not commenting on it but listening that would be a sin or not? Plz someone reply me accurately I need to know about it clearly.
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
আড়িপাতা বা অন্যায় গোয়েন্দাগিরি করা (হুজুরাত/২২) কবীরা গুণাহ
Total Reply(0)
Arifur Rahman ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
মানব জাতিকে কড়া ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে তারা যেন মানুষের দোষ-ত্রুটি সমাজে প্রকাশ করে না বেড়ায়। কারণ, মানুষের দোষ-ত্রুটি সমাজে প্রকাশ করার দ্বারা দুনিয়ায় ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়
Total Reply(0)
Mulla Tashfin ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
‘যেসব লোক চায়, ইমানদার লোকদের মধ্যে নির্লজ্জতা-বেহায়াপনা বিস্তার লাভ করুক, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন, তোমরা জানো না।’ সূরা নূর : ১৯।
Total Reply(0)
Md.Rashadujaman ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫৪ এএম says : 0
কোনো মুসলিম অন্য কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে বেড়াতে পারবে না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নবুয়তি জিন্দেগিতে মানবজাতিকে আখলাক শিক্ষা দিয়েছেন। অপরাধ মার্জনার তালিম ও মানুষের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষাই বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা।
Total Reply(0)
GM Abdul Zalil ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫৫ এএম says : 0
মানবজাতি এ শিক্ষা গ্রহণ করলে সমাজে বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি হবে না। মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে না। তৈরি হবে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরস্পর মায়া-মহব্বত।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন