শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ই-কমার্স খাতে প্রতারণা

কালো তালিকাভুক্ত ২৩ প্রতিষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ই-কমার্স ব্যবসায় নেমে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করার পর এবার ২৩ প্রতিষ্ঠানকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলবও করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টের লেনদেন, গ্রাহকদের পাওনা, অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণসহ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে আগামী ১১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া হবে। গ্রাহকদের অর্থ ফেরতসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কেনাকাটায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। ঘরে বসেই যেকোন পণ্য হাতের নাগালে পাওয়া এবং কম মূল্যে হওয়ায় ক্রেতারাও ঝুঁকছিলেন এই মাধ্যমে। কিন্তু সম্ভাবনাময়ী এই খাতে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অর্থ হাতিয়ে নিতে এবং প্রতারণা উদ্দেশ্যে জড়িত হওয়ার পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠে ই-কমার্স ব্যবসা। ব্যবসার শুরুতেই অবিশ্বাস্য অফার ঘোষণা, পণ্য কেনার পর শতভাগ মূল্য ফেরত, প্রতিযোগিতা করে ছাড়ে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দেয়। আর এই ফাঁদে দলে দলে পা দিয়েছেন অনেক ক্রেতাই। এরপরই সক্ষমতার বেশি পণ্য অর্ডার নিয়ে সরবরাহ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর গ্রাহকের অর্থ কেউ কেউ পাচার করেছেন বিদেশে, কেউবা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে। আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রতারণা উন্মোচিত হওয়ার পর থেকেই গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা প্রকাশ পেতে থাকে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীও ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ, রিং আইডি, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, দালাল প্লাস, বাজাজ কালেকশন, টুয়েন্টিফোর টিকেট ডট কম, গ্রিন বাংলা, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এ্যাগ্রো ফুড এন্ড কনজ্যুমারস, গ্লিটার্স আরএসটি ওয়ার্ল্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তথ্য সংগ্রহ শুরু করে এধরণের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর। সন্দেহজনক লেনদেন করছে এমন ৬০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে ৩০-৩২টি প্রতিষ্ঠানকে মনিটরিং করে সিআইডি। ই-কমার্স ব্যবসায় নেমে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে গত ১ নভেম্বর হস্তান্তর করে সংস্থাগুলো।

সেই তালিকার ভিত্তিতে চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার মালিকানাধীন দারাজসহ ২৩ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একইসাথে এসব প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তও করা হয়েছে। এর আগে ইভ্যালিসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। সেই তালিকার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ২৩ প্রতিষ্ঠান। ফলে কালো তালিকাভুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩টিতে।

এসব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টের লেনদেন, গ্রাহকদের পাওনা, অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণসহ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে আগামী ১১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া হবে। গ্রাহকদের অর্থ ফেরতসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে।
ব্যাংক হিসাব তলব করা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে দারাজ ও এর স্বত্বাধিকারী আলিবাবা ডটকম এবং প্রিয়শপ ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আশিকুল আলম খান। এছাড়া রয়েছে বাংলাদেশ ডিল এবং এ কোম্পানির ফারজানা কবির ইশিতা ও ফিদা মাহমুদ আশফাক, ইনফিনিটি মার্কেটিং ও এর চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে রয়েছে ওয়ালমার্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ ফরিদ আহম্মদ, আলীফ ওয়ার্ল্ড ও এর এমডি রাশেদুল ইসলাম রেয়ন, পরিচালক মিজানুর রহমান, সাজ্জাদ ও সাইফ; অ্যামস বিডি ও এর এমডি আশেকুল ইসলাম তানজীল, চেয়ারম্যান কায়সার হাবিব, পরিচালক মো. আবদুর রউফ বারেক, আহনাফ তাহমিদ নাহিয়ান ও মো. কামরুজ্জামান; অ্যানেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী রিমন, এমডি মোহাম্মদ জুলফিকার আলী, পরিচালক মো. মোফাজ্জেল হোসেন ও মো. ফিরোজ আলম এবং ব্রাইট হ্যাশ ও এর মালিক মো. ছালেকিন।

এছাড়াও রয়েছে স্বাধীন ও এর পরিচালক শাদমান ওয়াই, শামীরা ও ডেডরিক ভ্যান ওম্মেরেন; আকাশ নীল ও এর এমডি মসিউর রহমান এবং পরিচালক ইফতেখার উজ জামান রনি; গেজেট মার্ট ডটকম ও এর মালিক হারুন অর রশিদ। শেরেস্ত ডটকম ও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান ইমরান রাসেল, পরিচালক মো. শামীম রেজা, ইরফান হোসাইন, জুনায়েদ হোসাইন, রাহাত হোসাইন চৌধুরী ও শেখ আহমেদ; আস্থার প্রতীক ও এর মালিক রুশো তালুকদার; টিকটিকি, শপ আপ ই-লোন, বাড়ি দোকান ডটকম, ই-শপ ইন্ডিয়া, বিডি লাইক, সান টিউন, চলন্তিকা, সুপম প্রোডাক্ট এবং নিউ নাভানা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ ইমরান আখন্দ ১০ নভেম্বর, ২০২১, ২:০৪ পিএম says : 0
আমার মতে কাউকে তলব করলে সে অপরাধী হয় না। আপনি শতভাগ শুদ্ধ হলেও আপনাকে তলব করা হতে পারে। তবেকি আপনি প্রতারক হবেন? না। বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। একটি মুখরোচক কথা চালিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করার চেষ্টা করে বরং জনপ্রিয়তা হারানো ক্ষেত্রে অগ্রগামী হলেন। বিষয়টি গুরুত্ত্ব সহকারে অনুধাবন করে জনগনকে ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা করতে অগ্রণী ভুমিকা রাখবেন, সে্ আশায় থাকলাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন