আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হলো বাংলাদেশ দলের। অনেক আশা নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। কিন্তু প্রভাত যে ইঙ্গিত দিয়েছিল, অর্থাৎ প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হার, সেটাই বাকি দিনটার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ প্রতিটি ম্যাচেই হেরেছে। গ্রæপে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী তিন দলের বিপক্ষে কদর্য হারে নিজেদের অক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মার্ক ওয়াহর মতো সাবেক ক্রিকেটার তো বাংলাদেশের ব্যাটিংকে লজ্জাদায়ক বলেছেন। ওদিকে হার্শা ভোগলে বাংলাদেশের সমর্থকদের কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করেছেন। এমন এক দলকে সমর্থনের দুঃখ টের পেয়েছেন এই ধারাভাষ্যকার। চলুন, দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেট দুনিয়ার পরিচিত অন্য বিশ্লেষকেরা বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৮৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮০ রানও পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসে আরেকটি লজ্জার রেকর্ড যোগ করেছে কাল। ৮২ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে বলের হিসাবে এত বড় হার বাংলাদেশকে এর আগে পেতে হয়নি।
এমন এক পারফরম্যান্স দেখে মার্ক ওয়াহ রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে, ‘বিষয়টা লজ্জাজনক। এমন মানের ব্যাটিং আপনি পার্কের তৃতীয় শ্রেণির ক্রিকেটেও দেখতে পাবেন না।’ শেন ওয়ার্ন সরাসরি বাংলাদেশের সমালোচনা করেননি। তবে নিজ দলের প্রশংসা করতে বাংলাদেশকে নিয়ে কটু কথা বলা থামাতে পারেননি, ‘বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ছেলেরা দারুণ দেখিয়েছ! ছেলেদের মানসিকতা ভালো লেগেছে। কোনো ভয় ছাড়া পশুর মতো খেলেছ। এমন খেলতে থাক, তাহলে বিশ্বকাপে আরও কিছু দেখাতে পারবে। আমি জানি, বাংলাদেশ একেবারেই ফর্মে নেই, কিন্তু আজ যে ইচ্ছা দেখিয়েছ, এটাই দরকার।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং হার্শা ভোগলেকে হতাশ করেছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে সমর্থকদের জন্যই মায়া হয়েছে তার। ১০ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে টুইট করেছিলেন, ‘গত ১০ মিনিটে মাহমুদউল্লাহ ও নাঈমের ব্যাটিং দেখলেই বোঝা যায়, বাংলাদেশি সমর্থক হওয়া কতটা হতাশার।’ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশকে নিয়ে হতাশা লুকাতে পারেননি ভোগলে, ‘বাংলাদেশ খুব হতাশ করল। এই টুর্নামেন্ট ২টি জয়ের সঙ্গে ৬টি হার দিয়ে শেষ করল। এখন ড্রয়িং বোর্ডে ফেরা ছাড়া উপায়ও নেই। দুশ্চিন্তার ব্যাপার হলো, প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা তাদের প্রত্যাশিত মানে উঠে আসছে না।’
পাক প্যাশনের সম্পাদক সাজ সাদিক বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সারাংশ দিয়েছেন একটি টুইটে, ‘খুব জঘন্য এক টুর্নামেন্ট কাটাল বাংলাদেশ। মাত্র দুটি জয় এবং সেগুলোও পাপুয়া নিউগিনি ও ওমানের বিপক্ষে। ছয় ম্যাচে হেরেছে, এর মধ্যে একটি স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।’
ক্রিকেট বিশ্লেষক ফ্রেডি ওয়াইল্ড পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন। ডেটা ব্যবহার করে ব্যাটসম্যান, বোলার ও বিভিন্ন দলের খুঁত ও শক্তির জায়গা বের করেন। তার অনেক বিশ্লেষণ বুঝতেই ক্রিকেটের গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের সমস্যা দেখাতে গিয়ে খুব সহজ-সরল এক টুইট করেছেন ওয়াইল্ড, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় হতাশার নাম বাংলাদেশ। তাদের বোলিং ভালোই ছিল, কিন্তু ব্যাটিং একদম ছন্নছাড়া। বিশ্বকাপের জন্য দায়টা হয়তো কোচিং দলকে দেওয়া হবে। তাদের জন্য খারাপ লাগছে। কিন্তু যারা পেস ও বাউন্সের বিপক্ষে খেলতে পারে না এবং যাদের জোরে শট খেলার সামর্থ্য নেই, তাদের নিয়ে আপনি কীই-বা করতে পারেন।’
ক্রিকেটের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন মাজহার আরশাদও। কিন্তু বিখ্যাত এই ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদের টুইটেও পরিসংখ্যানের চেয়ে বাংলাদেশ নিয়ে হতাশাই বেশি প্রকাশ পেয়েছে, ‘ক্রিকেট বিশ্বকাপে দারুণ সব পারফরম্যান্স দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা খুবই বাজে খেলে। সাতটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে মাত্র এক জয়। খুবই বাজে পরিসংখ্যান!’
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম কোডের ক্রীড়া সাংবাদিক ডেনিয়েল চেরনি বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়েই টুইট করেছেন, ‘গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের উন্নতি দেখলে মনে হয়, ওরা সাত ধাপ এগোলে ছয় ধাপ পেছায় এবং এটা চলতেই থাকে। কিছু উন্নতি আছে, কিন্তু সেটা যন্ত্রণাদায়কভাবে ধীরগতির।’ উইজডেনের বর্ষসেরা বই ‘ক্রিকেট টু পয়েন্ট জিরো’র লেখক টিম উইগমোরের ভাষায়, সুপার টুয়েলভের সবচেয়ে বাজে দল বাংলাদেশ, ‘বাংলাদেশ খুবই জঘন্য খেলল, সম্ভবত সুপার টুয়েলভের সবচেয়ে বাজে দল তারা। এর পেছনে অনেক কারণ, তবে ম‚ল কারণ ঘরে যে বাজে উইকেট বানিয়েছে, সেগুলো। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জয় পেয়েছে, কিন্তু সেটা ক্রিকেটের উন্নতিতে কোনো ভ‚মিকা রাখেনি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন