দেশ, মাটি ও মানুষের কল্যাণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। এরই মাঝে হাজারো লড়াই, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেটে গেছে ৪৯টি বছর। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এ দেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল আজকের দেশমাতৃকার সোনালী অর্জন যুবলীগ। ইতোমধ্যে যুবলীগ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সর্ববৃহৎ শক্তিশালী যুব সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সব ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠাই যুবলীগের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়ে তোলাই যুবলীগের উদ্দেশ্য।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগের পাশাপাশি যেকোন অপশক্তি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে বারবার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার মধ্য দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে বগুড়ায় যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক খসরু, চট্টগ্রামে যুবলীগ নেতা মৌলভী ছৈয়দ আহমদ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগ নেতা নূর হোসেনের তাজা রক্তের ঋণ শোধ করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয় স্বৈরশাসক এরশাদ। ১৯৯০ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৫৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ বদু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মহুতি দেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুবলীগের অনবদ্য ভূমিকা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, বিএনপি জোট সরকারের সরাসরি মদদে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে যুবলীগ ছিলো সোচ্চার ও প্রতিবাদমুখর। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা আন্দোলন, ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী যুবলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
১/১১ এর প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কারান্তরীণ হলে তার মুক্তির আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে কারা নির্যাতনের শিকার হয় শত-সহস্র যুবলীগ নেতা-কর্মী। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লবের অগ্রভাগে আওয়ামী যুবলীগের অবদান ছিল অসামান্য। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের বিচারকাজ শেষ এবং ২০১৩ সালের ৫ এবং ৬ মে হেফাজতের ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন ছায়াসঙ্গী হিসেবেও যুবলীগ রাজপথে সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করায় বিএনপি-জামায়াত আগুন, বোমা, সন্ত্রাস ও জ্বালাওপোড়াও করে মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার তৈরি করলে যুবলীগ তাদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনের আগে পূর্বের ন্যায় সেই বিএনপি-জামায়াত নানা ষড়যন্ত্র করে কিভাবে নির্বাচনকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা যায়। কারণ বিএনপি-জামায়াত আগে থেকেই জানতো জনগণ তাদের সাথে নেই, যে কারণে তারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল কিন্তু যুবলীগ সেটা হতে দেয়নি। যুবলীগ রাজপথে থেকে তাদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছে। আগামীতেও যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে যুবলীগ দেশ, মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাতটি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সর্বশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর। যুবলীগের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় সভায় শেখ ফজলে শামস্ পরশকে চেয়ারম্যান ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
তারপর থেকে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল যুবলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যুবলীগ কর্মীদের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের আদর্শ বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন, যার ফলে বর্তমানে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে সংগঠন আরও বেশি সুসংগঠিত হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে যুবলীগ। এমনকি যখনই যুবলীগের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক অভিযোগ পেয়েছে সাথে সাথেই সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করেছে। এতে প্রমাণিত হয় যুবলীগে অন্যায়কারীদের কোন জায়গা নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের আহ্বানে সারাদেশের প্রতিটি জেলায় অসহায় গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয় এবং ইতোমধ্যে এই কর্মসূচির কাজ এগিয়ে চলেছে। এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয় আশ্রয় কর্মসূচি। দেশব্যাপী যুবলীগের সকল ইউনিটকে নিজ নিজ এলাকার গৃহহীন মানুষ চিহ্নিত করে সচ্ছল যুবলীগ নেতাকর্মীর মাধ্যমে গৃহনির্মাণের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। শুধু তাই নয় যুবলীগ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করেছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, মানুষ নানা সংকটে জর্জরিত ঠিক তখনি রাজপথের লড়াই সংগ্রামের সংগঠন যুবলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের আহ্বানে যুবলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল নেতাকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাগরিক সচেতনতায় মাঠে নেমেছিল। প্রথমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করে পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ায় পথচারী, ভাসমান মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদান করেছে। যুবলীগের কর্মী থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যার যার সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
করোনার সময় যখন ধান কাটার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের আহ্বানে সারাদেশে যুবলীগের নেতাকর্মীরা কৃষকের পাকা ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে এমনকি মাড়াই করে গোলায় ভরে দিয়েছে।
মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ। ফলজ, বনজ এবং ঔষধি এই তিন রকম বৃক্ষরোপণে অংশ নিয়েছে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রের আহ্বানের পর থেকে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়সহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংগঠনের পাশাপাশি বক্তিগত উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করেছে।
ঠিক এভাবেই দীর্ঘ ৪৯ বছরে যুবলীগ দেশমাতৃকার সোনালি অর্জন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুবলীগ মাঠে ময়দানে অবস্থান করে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছি।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন