মানিলন্ডারিং বা বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার সংস্থাটির ১৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। তিনি বলেন, মানিলন্ডারিংয়ের কাজটি সরকার আইন করে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থ পাচারের ২৮টি ধারার মধ্যে ২৭টি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা (দুদক) আমাদের জুরিসডিকশনের ওপর কর্তৃত্ব দেখাবো। যেটি আমাদের জুরিডিকশনে নেই তাতে আমরা যাবো না। ওই বদনাম যাতে আমাদের ঘাড়ে না আসে। অনেক ব্যক্তি মানিলন্ডারিং করে, হাজার হাজার কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করে। লক্ষ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করে। আমরা কী করবো! আমরা কিছু করতে পারি নাই।
সেগুনবাগিচাস্থ দুদক কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আব্দুল্লাহ। এ সময় দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান, দুদক সচিব ড. মুহা.আনোয়ার হোসেন হাওলাদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের মতামতের শেষে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, সব দেশেই দুর্নীতি হয়। আমাদের দেশেও হচ্ছে। এটি প্রতিরোধ করতে সকলে একত্রে কাজ করবো। শুধুমাত্র দুদক ও একটা আইনের উপর নির্ভর করে দুর্নীতি দূর করতে পারবে না। দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। আমরা তিলকে তাল বানিয়ে বলি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেও মিথ্যা বলে। সাক্ষীও সত্যি কথা বলে না। দুর্নীতি প্রমাণ করাটা অনেক দুরূহ। এজন্য আমি বলবো, যারা সমাজে দুর্নীতিবাজ হিসাবে জনশ্রুত তাদেরকে চিহ্নিত করে বর্জন করলেই হয়তো সমাজে একটি প্রভাব তৈরি হবে। সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সংবাদকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাংবাদিকরা দুদককে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকবে এটা আমরা আশা করি। তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা তদন্ত, অনুসন্ধানে কোন ব্যাঘাত যাতে না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি রেখে তথ্য দিয়ে থাকি। বিষয়টি আমাদের কর্মকর্তাদের বলা আছে। তিনি বলেন, দুদক সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা তো একই দেশের নাগরিক। একই সমাজ থেকে এসেছি। আমাদের উদ্দেশ্যও অভিন্ন। সরকারি অফিসে কিছু নিয়মকানুন পালন করতে হয়। এটি আপনি হয়রানি হিসেবে ভাবছেন। যেটা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে ‘রিপোর্টার্স এগেনস্ট করাপশন-র্যাক’ আয়োজিত ‘বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আব্দুল্লাহ। এ সময় জুরিবোর্ডের প্রধান হিসেবে ঢাবি’র সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান, জুরিবোর্ডের সদস্য এএফপি’র ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রিন্ট মিডিয়ায় দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কাওসার সোহেলী এবং অনলাইন মিডিয়ায় বাংলা ট্রিবিউন’র নূরুজ্জামান লাবু বেস্ট রিপোর্টিং এওয়ার্ড লাভ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন র্যাক’র সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন