বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২০৩০ সালে ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে

অর্থ পাচার বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫২ এএম

আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। একই সঙ্গে সা¤প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডেলিভারিং এসডিজি ইন বাংলাদেশ: রোল অব নন স্টেট একটরস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসডিজির চারবছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি শীর্ষক বইয়ে জিএফআই’র প্রতিবেদনের এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে অর্থনীতিবিদ, সাবেক আমলা, এনজিও কর্মকর্তা, কূটনীতি ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে প্রতিবছর যে ভয়াবহ আকারে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে এটি ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থপাচারের এই প্রবণতা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রতিবেদনে জিএফআই উল্লেখ করেছে, কোনও দেশ থেকে অবৈধভাবে আর্থিক মূল্যবান সম্পদগুলো সরিয়ে দিলে তা ওই জাতিকে দেশের কর আয়ের হাত থেকে বঞ্চিত করে। এটি সে দেশের অর্থনীতিকে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাদের ধারণা ২০১৩ সালে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে তা সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তারা বলছে, সা¤প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডি’র চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদে আলাদা অধিবেশন হওয়া উচিত। এতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এসডিজি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মতামত পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ে একধরনের জবাবদিহি তৈরি হবে।

রেহমান সোবহান বলেন, এসডিজি নিয়ে জাতীয় সংসদে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। অথচ জনপ্রতিনিধিরা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর মতে, পুরো এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের কথা খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে না। পুরোটা যেন সরকারের বাস্তবায়নের বিষয়। তিনি সুশীল সমাজকে এসডিজি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে আমরা শিক্ষা খাতে ভালো করছি। কিন্তু মানের প্রশ্ন এলে এটি কোথায় যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বৈষম্য এবং ন্যায়বিচারে আমরা ভালো করছি না। তিনি মনে করেন, বৈষম্য থাকলে অন্য লক্ষ্যগুলো অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।

সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন করা যাবে না। প্রথম শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। ১২ বছর পড়াশোনা করেও শিক্ষার্থীরা তিন পাতা ইংরেজি লিখতে পারে না।

এসডিজি অর্জনে সর্বস্তরে সামাজিক অংশগ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেনে হোলেনস্টেন। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে এসডিজি অর্জন করতে হবে। তাঁর মতে, বেসরকারি খাত হলো একটি দেশের ডিএনএ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করে যাচ্ছে। এসডিজি বাস্তবায়নের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেশি লাগবে।

সংলাপে দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা এবং নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এসডিজি অগ্রগতি নিয়ে দুটি উপস্থাপনা দেন। অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

সংলাপে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬টি লক্ষ্যের ২০১৫-২০১৯ সময়কালের বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরেন ড. ফাহমিদা খাতুন। ওই ছয়টি লক্ষ্য হলো- শিক্ষা, শোভন কাজ, বৈষম্য, জলবায়ু রক্ষা পদক্ষেপ, শান্তি ও ন্যায় বিচার এবং অংশীদারিত্ব। শিক্ষা, অংশীদারিত্ব ও শোভন কাজ এই তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়নে মোটামুটি সঠিক দিকে রয়েছে। কিন্তু নীতিগত অনেক সংস্কার প্রয়োজন। বৈষম্য, জলবায়ু রক্ষায় পদক্ষেপ এবং শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে ভুল পথে রয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে বিদ্যমান নীতিতে ব্যাপক সংস্কার এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের তাৎপর্য ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে উভয়পক্ষীয় সংলাপ চলমান রাখতে হবে। জবাবদিহীমূলক অংশীদারিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে এসডিজি অর্জন করতে হবে। তাঁর মতে, বেসরকারি খাত হলো একটি দেশের ডিএনএ।

সুইডেন রাষ্ট্রদূত ড. রেনে হোলেস্টেইন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ণে সামাজিক আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে চিন্তা, কাজ ও উন্নয়ন রূপরেখায় বেসরকারি অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। তবে এটি যেন শুধু ফ্যাশনে পরিণত না হয়। কোনভাবেই নাগরিক সমাজের কথা বলার জায়গাকে সঙ্কুচিত করা যাবে না। তাহলে এসডিজি অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে অর্ন্তভ‚ক্ত করে কাজ করে যাচ্ছে এটি ভালো দিক।

এছাড়াও একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন