অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে দেয়া হাইকোর্টের নির্দেশনার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও তালিকা দাখিল করেনি ১৩ বিবাদী। এ কারণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ এ উষ্মা প্রকাশ করেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক এ তথ্য জানান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে শুধু পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। বাকি ১৩ বিবাদী ৮ মাসেও প্রতিবেদন দাখিল করেননি। হাইকোর্ট তাই বিবাদীদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিলের পর বাকিদের প্রতিবেদন দাখিল করতে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন আদালত। গতকাল রিটের পক্ষে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান।
বিদেশি ব্যাংক, বিশেষত সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারিসহ আদেশ দেন।
সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো সত্তা কে কত টাকা পাচার করেছে, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছেÑ তা জানতে চাওয়া হয়।
এ মামলায় ১৪ নম্বর বিবাদী ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। এ আদেশ অনুসারে সিআইডির দেয়া এসব তথ্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষে গত ১২ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। প্রতিবেদনে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা এবং ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৪ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাকি অর্থ উদ্ধারে যেসব দেশে পাচার হয়েছে, তাদের মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্সের মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারত ও ফিলিপাইনে পাচার করার কথাও বলেছে সিআইডি। এর মধ্যে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৪ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে আদালত বলেন, কেন আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি? শুধু পুলিশ আদেশ প্রতিপালন করেছে। বাকিরা কোথায়?। এটা ঠিক নয়, আমরা কোর্ট একটা আদেশ দিলাম। আমরা রুল দিয়েছি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় এক বছর হয়ে গেল রুলের জবাবটাই দাখিল করা হলো না। আর কী বলব? এ নিয়ে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
পরে আদালত অর্থসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাণিজ্যসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের রেজিস্টারকে আগামী ২১ নভেম্বর জবাব দাখিলের জন্য সময় বেধে দেন আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন