ছিয়াশি বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি নিজেই যে কল্পলোকে বাস করছেন গতকাল এক বছর হলো! গত বছর এই ২৫ নভেম্বরের সন্ধ্যায়ই এসেছিল দুঃসংবাদ হয়ে আসা বজ্রপাত নিয়ে- ম্যারাডোনা নেই! শুধু আর্জেন্টিনা নয়, শুধু ফুটবল নয়; তার মৃত্যুতে দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হলো বিশ্বের প্রতিটি কোণে। ম্যারাডোনা যে ফুটবল ছাপিয়েও সর্বজনীন, আর্জেন্টিনা ছাড়িয়ে সবার। সেই দুঃস্বপড়ব দিনের পর তার স্মৃতি ভাসল মুখে মুখে, তার বিতর্ক-ভালোবাসায় হাত ধরাধরি করে চলা ৬০ বছরের জীবনের টুকরো টুকরো ছবি ভাসল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর্জেন্টিনা তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করল, আর্জেন্টাইনদের মন শোকে ছেয়ে থাকল আরও অনেক দিন। হ্যাঁ, জীবনের নিয়মে এরপর নৈমিত্তিকে ফিরেছেন আর্জেন্টাইনরা, ফুটবলে আবার প্রাণ ফিরেছে। এর মধ্যে আজ আরেকটি ২৫ নভেম্বর এসে মনে করিয়ে দিল- ম্যারাডোনার না থাকার ৩৬৫ দিন পার হয়ে গেল!
‘মনে হচ্ছে যেন গতকালের ঘটনা এবং খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে’- কথাটা লিওনেল মেসির। ম্যারাডোনার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’কে এ কথা বলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। গত বছর ২৫ নভেম্বর ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তির মৃত্যুর পর ইনস্টাগ্রামে মেসি তার পূর্বসূরিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন এভাবে, ‘ফুটবল এবং আর্জেন্টাইনদের জন্য খুব দুঃখের দিন। তিনি চলে গেলেও এটা আসলে প্রস্থান নয়। কারণ ডিয়েগো চিরকালীন।’
সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবলারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের সময় বার্সেলোনার খেলোয়াড় ছিলেন মেসি। তারপর এই এক বছরে মেসির জীবনও পাল্টেছে। বার্সেলোনা ছেড়ে এখন তিনি পিএসজির। এর মাঝে জিতেছেন কোপা আমেরিকাও। আর্জেন্টিনার হয়ে এটি মেসির প্রথম শিরোপা। ম্যারাডোনা বেঁচে থাকতে এমন সাফল্যের দেখা পাননি মেসি। গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা জিতে ম্যারাডোনাকে স্মরণ করতে ভোলেননি আর্জেন্টাইন তারকা, ‘...অবশ্যই এটা (শিরোপা) ডিয়েগোর জন্যও, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।’
মেসির সঙ্গে ম্যারাডোনার সম্পর্কটা সব সময়ই মধুর ছিল। উত্তরসূরিকে সব সময়ই সেড়বহের চোখে দেখতেন ম্যারাডোনা। মৃত্যুর পরও ম্যারাডোনা এখনো আগের মতোই প্রাসঙ্গিক। ফুটবল নিয়ে নানা কথা ও আলোচনায় উঠে আসে তার প্রসঙ্গ। ম্যারাডোনার দুর্দান্ত সব গোল, ড্রিবলিং- এসবের সঙ্গে এখনো তুলনা চলে অন্যদের। বরাবরই ঠোঁটকাটা ম্যারাডোনাকেও অনেকে ভুলতে পারেননি। সংবাদমাধ্যমে তিনি প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন অনেক কিছুর, অনেকের। এমন বর্ণিল চরিত্রকে যে মেসি মিস করেন, ম্যারাডোনার প্রস্থান মেসিকে যে এখনো ভেতরে-ভেতরে কাঁদায়- তা বোঝা গেল পিএসজি তারকার কথায়, ‘অবিশ্বাস্য লাগছে যে এক বছর পেরিয়ে গেছে। আর্জেন্টিনা এত বছর পর শিরোপা জিতল...কিন্তু তিনি নেই। সত্য কথা হলো এটা অদ্ভুত এক অনুভূতি যে (ম্যারাডোনার মৃত্যু) বিশ্বাস হতে চায় না। সব সময়ই মনে হয়, টিভিতে কিংবা সংবাদমাধ্যমে তাকে দেখা যাবে। কোনো বিষয়ে হয়তো নিজের মতামত দেবেন। এতগুলো দিন পেরিয়ে গেল কিন্তু মনে হচ্ছে গতকালের ঘটনা। আমি সেরা স্মৃতিগুলোই মনে রাখব এবং তার সঙ্গে কিছু ভাগ করতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন