বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের সমাপনী দিনে বক্তাদের অভিমত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিদেশি বিনিয়োগের বিপক্ষে সরকার কোনো নীতি গ্রহণ করবে না। বরং বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ বলে মনে করে সরকার। গতকাল রাজধানীর হোটেল রেডিসন বুতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের সমাপনী দিনের একাধিক সেশনে সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা এসব কথা বলেন।

‘লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ শীর্ষক অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য অনেক ভৌত অবকাঠামো বানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি একটি ভালো আইনি কাঠামোও তৈরি করেছেন, যাতে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে ভালো একটি প্রটেকশন পায়। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি বর্তমান সময়ের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি বড় সাফল্য। কোভিড-১৯ আঘাত হানার ঠিক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল আট শতাংশের ওপরে এবং গত এক দশকে তা ছয় শতাংশের বেশি ছিল। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সমযোপযোগী নীতির কারণে। বাংলাদেশ এই সফলতা ধরে রাখতে পারলে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ সফলতা ধরে রাখতে সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কোম্পানি আইনও সংশোধন করেছে।

এই সেশনে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক ও বর্তমান সচিব মো. মইনুল কবির, প্রফেসর ড. রুমানা ইসলাম, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম ‘লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ নিয়ে আলোচনা করেন।

‘পরিবহন ও লজিস্টিকস’ শীর্ষক কারিগরি/প্যারালাল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো অপ্রত্যাশিত নীতি কার্যক্রম গ্রহণ করবে না যা আপনাদের বিনিয়োগের বিপক্ষে যেতে পারে। আপনাদের বিনিয়োগ এই দেশের আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, লজিস্টিকস খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০৪১ সালের বাংলাদেশের জন্য প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় লজিস্টিকস খাতকে একটি প্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দুটি কর্মকৌশলের ওপর ভিত্তি করে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- অধিকতর সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এবং রফতানি বহুমুখীকরণ। এ দুটি কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন একটি গতিশীল লজিস্টিক খাত। লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে অধিকতর বেসরকারি বিনিয়োগ আনয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, লজিস্টিকস খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অপরিসীম। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে প্রায় ২৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং এ খাতসমূহের প্রদত্ত সেবার জন্য বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। ব্যবসার আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে এ বাজারও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রফতানির মূল্য বর্তমানের ৩৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার হতে অচিরেই বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালে প্রায় ৫৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এছাড়া আমদানি পণ্যের মূল্যও বর্তমানের ৫১ বিলিয়ন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে পণ্যাগার, সংরক্ষণাগার, কোল্ড চেইন ব্যবসা, সড়ক, নৌ, সমুদ্র এবং বিমানপথে পণ্য পরিবহন, নৌ, বিমান ও স্থলবন্দরের কার্যক্রম আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। ২০২২ সালের মধ্যে এ ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ৬৪ শতাংশ। এ কারণে এফ শ্রেণির বিমান, যেমন এ-৩৮০, বি৭৪৭-৮এফ, ইত্যাদির অবতরণ ও উড্ডয়ন সহজতর করার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি, বাংলাদেশ’র কো-চেয়ার আবুল কাশেম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটির মহাপরিচালক মো. আবুল বাশার, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটড সিঙ্গাপুরের রিজিওনাল সিইও ওয়ান চী ফুং, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স করপোরেশনের ভিক্টোরিয়া রিগবি ডেলমন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকীব খান।

ইনভেস্টমেন্ট সামিটের ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ শীর্ষক এক সেশনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায়ও ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকার কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ক্লিন ও গ্রিন এনার্জি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ২০৩০ সাল নাগাদ ৪৯ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করে সেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রিন টেকনোলজির ব্যবহার বাড়ানোকে লক্ষ্য ধরে হালনাগাদ করা হচ্ছে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান। ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানোকেও উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৬ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে দুই কোটি মানুষকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। সোলার ইরিগেশন, সোলার মিনি গ্রিড, বায়ুবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, হাইড্রোজেন ফুয়েল নিয়ে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। ক্লিন জ্বালানির প্রতি প্রথমেই গুরুত্ব দেয়া হবে। গ্যাস-তেল অনুসন্ধানে কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা আবশ্যক বলে জানান তিনি। সেশনে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসর’স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপপা) প্রেসিডেন্ট ইমরান করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন-আইএফসি’র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের শিল্প অবকাঠামো ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের প্রধান ইসাবেল চ্যাটারটন, সামিট গ্রæপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান, সিংগাপুরের সেম্বকর্পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল তুলি, বাংলাদেশস্থ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইডিমন গিনটিং ও বাংলাদেশস্থ শেভরনের প্রেসিডেন্ট ইরিক এম ওয়াকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন