হারুন-আর-রশিদ
গত ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফর অর্থনীতির বন্ধ দুয়ার খুলে যাবে, সূচনা হবে নতুন দিগন্তের। ঐতিহাসিক এই সফরে বাংলাদেশের কী পরিমাণ সুযোগ সৃষ্টি হবে তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। এত বড় বিনিয়োগ বিগত ৪৬ বছরে বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র করেনি। এ জন্যই বলতে হয়, এটা স্মরণকালের ঐতিহাসিক বিনিয়োগ বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। উদারনৈতিক রাষ্ট্র চীন সেটা প্রমাণ করছেÑবিনিয়োগের বিশাল ভা-ার থেকে উদারহস্তে স্বল্প সুদে বিনিয়োগ যা অনেকটা অকৃত্রিম বলা যায়।
বন্ধুত্বের পরিচয় হতে হয় নিঃস্বার্থ ও খাদহীন সেটা চীন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তবে দেখিয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে জানান দেয়নি ভারতের মতো। মাত্র দুই বিলিয়ন সাহায্য দিয়ে চড়া সুদে যে হাঁকডাক প্রচার মাধ্যমে করেছে তার ১২ গুণ বেশি বিনিয়োগ করার পরও চীন ঢাকঢোল পিটায়নি চীনের গণমাধ্যমে।
আগাগোড়াই আমরা দেখেছি চীন নীরব থাকত বিশ্বের অন্যান্য যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলো থেকে। ঝামেলায় জড়িত হতো না। শুধু একটি চিন্তায় বিভোর থাকত চীন, সেটা হলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং এ ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের মধ্যে চীন বর্তমানে এক নম্বরে আছে। ১৪ অক্টোবর ২০১৬ শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে নিয়ে যেতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। যৌথ ঘোষণায় ২০১৭ সালকে বন্ধুত্বতার বছর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ২৭ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকসহ ছয়টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ দুরবস্থায় চীন এগিয়ে এসেছে, এতে প্রমাণ হলো প্রবাদবাক্যের কথায়Ñ সুসময়ে বন্ধু হয় অনেকে, অসময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। আরেকটি প্রবাদবাক্যÑ বিপদে বন্ধু চেনা যায়। আমাদের অর্থনৈতিক মন্দাকালীন চীন সবচেয়ে বিশাল অংকের অর্থ নিয়ে আমাদের প্রতি সহায়তার হাত প্রসারিত করেছেÑ এতেই প্রমাণ হয় বিপদে বন্ধু বলতে চীনকেই বুঝায়।
চীন আজ যে জায়গাটিতে এসে পৌঁছেছে সেটা তাদের ঐকান্তিক সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। সময় একেবারেই নষ্ট বা অপচয় তারা করে না। মাও সেতুংয়ের থিওরি হলোÑ কাজ কর। বসে থাকলে মাথায় দুষ্ট চিন্তা আসে। মাথায় দুষ্ট চিন্তা থাকলে দেশ আগায় না। তাই কাজের মধ্যে সময় কাটিয়ে দাও। এতে তুমি ভালো থাকবে। দেশ ভালো থাকবে। মাওয়ের এই থিওরি চীন এখনো ভুলে যায়নি। আমাদের মতো পরনিন্দায় তারা সময় কাটায় না। জাতির মধ্যে বিভাজন নেই। কাজপাগল চীন জাতি দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেÑ তা ভাবা উচিত বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর যারা পালাক্রমে ৪৫ বছর ধরে এ দেশটাকে শাসন করেছেন। পর পর পাঁচ বছর বিশ্বে দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থানকারী বাংলাদেশ নিজের মানমর্যাদা কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে, তা গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১৪ অক্টোবর বৈঠক শেষে এক সুরে বক্তব্য প্রদান করেনÑ বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতায় সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের পথে এগোচ্ছে যা দুই দেশের জনগণকে বৃহত্তর কল্যাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই অঞ্চলের শান্তি, ভূরাজনীতির স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। চীন এ কথাও বলেছেÑ একে অন্যের প্রতি আস্থা ও সমর্থনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সব মিলিয়ে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে থাকছেÑ ব্যবসা ও বিনিয়োগ, সাগর অর্থনীতি, ভৌত অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি ও কৃষি। এ ছাড়া ছয়টি বড় ধরনের প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। এগুলো হলো কর্ণফুলী নদীতে টানেল, শাহজালাল সার কারখানা, বাংলাদেশ ফোর টিয়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার, পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপন।
এ ছাড়া ১৪ অক্টোবর চীনের বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৩৬০ কোটি ডলারের ১৩টি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তি মূলত বিভিন্ন অবকাঠামো বির্নিমাণ ও জ্বালানি খাতের। এ ছাড়া ব্যবসায়ী পর্যায়ে হয়েছে আরও ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের চুক্তি হয়েছে। এসব বিনিয়োগ যথার্থভাবে কার্যকর হবে কিনা সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে শুধু বন্ধত্ব নয় বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার কথাও এখন জোরালোভাবে ভাবতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন রাখবো- আপনি যেভাবেই হোক স্বদেশী পণ্যে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করুন। বৈদেশিক বাণিজ্যে-ব্যাপক বৈষম্য চলছে তা কমিয়ে আনুন। আমদানি শুধু করবো ওরা আমাদের থেকে ২৫ শতাংশ মাল কিনবে নাÑ এটা কি করে হয়। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার মূল্য থাকলো কোথায়। স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মূল জিনিসটি হলো- বাণিজ্যে বৈষম্য দূর করা। পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকার কারণে আমরা মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। ৬ দফার মূল কথাও ছিল বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রে কায়েম করা। এক কথায় জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এবং শক্ত একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোগত প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করা। যেটা পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে আমরা পাইনি। সেহেতু অতীত ভুলগুলো আর হতে দেয়া যায় না। ভুলের খেসারত বাংলাদেশের মানুষ জানমাল দিয়ে বহু দিয়েছে আর নয় এখন শুধু প্রাপ্তির হিসাবের পালা, কিভাবে অর্জন করা যায়। বাংলাদেশের মতো ’৭১-এ আরেকটি দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেটির নাম আরব আমিরাত। তার মাথাপিছু আয় ২০ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বর্তমানে আমাদের মাত্র ১৪শ মার্কিন ডলার। এটা নিতান্তই লজ্জার বিষয়। পত্রিকায় এ ধরনের প্রতিবেদন দেখলাম- যা নিজের কাছে খারাপ লেগেছে। ওরা পারে- আমরা কেন পারবো না।
পর্যটন শিল্পে প্রতিবেশী দেশের আয় আকাশচুম্বি। বাংলাদেশ কি কম সুন্দর। প্রকৃতি সবকিছুই উজার করে বাংলাদেশকে দিয়েছে। বাংলাদেশকে এক কথায় সুন্দরের মহারানী বলা যায়। রাঙামাটি, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেটের পাহাড়ি বনাঞ্চল এসব কি কম সুন্দর। আসলে আমরা সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতে জানি না। স্বার্থপরতার বেড়াজালে এতই আমরা আড়ষ্ট হয়ে পড়েছি যে, নিজের মাতৃভূমিকে কিভাবে সেবা-যতœ করতে হয় তা ভুলেই গেছি। আমি মনে করি বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম যদি পর্যটন শিল্প খাতটিকে বর্জ্যমুক্ত ছিমছামভাবে সুন্দর বেষ্টনীর মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের অর্জনের কমতি নেই কিন্তু আগ্রহের অভাব, নিষ্ঠার অভাব। শিষ্টাচারের দারুণ অভাব-অহেতুক বাক্যালাপ করে রাজনৈতিক অঙ্গন অসহিষ্ণু করে তোলাই যেন আমাদের কাজ। সদাচার-সদালাপ মানুষের কল্যাণ কামনা, সবাইকে এক চোখে দেখা ইত্যাদি গুণগুলো রাজনীতিতে আসা উচিত। আমাদের সমাজ জীবনে এসবের চর্চা অতীতের তুলনায় এখন অনেক কমে গেছে।
দ্য হিন্দু পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থ কথা বলেছেন, এ অঞ্চলের সমস্যা একটাই, সেটা হলো দারিদ্র্য যা দূরীকরণে আমাদের যৌথ শক্তি দিয়ে লড়াই করতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমাদের বহু সমস্যা আছে- তারমধ্যে অনেক সমস্যা সমাধান হয়েছে। আবার কিছু সমস্যা রয়ে গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো সীমান্তে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষগুলো হত্যার ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক। এ নিয়ে বিএসএফ ও বিজিবি কাজ করছে- আমরা আশা করছি এর একটা সুন্দর সমাধান অবশ্যই হবে। কিন্তু পাকিস্তানকে নিয়ে আমরা হতাশ। পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতির কারণেই আমরা সার্ক সম্মেলন বর্জনে বাধ্য হয়েছি। সেখানে সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় ভোগান্তির শিকার নিরীহ জনগণ। পাকিস্তান থেকে সেই সন্ত্রাস সবখানে বিস্তার লাভ করেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আজকের নয়, বরং বেশ পুরনো। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এবারের বাংলাদেশ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদিও ২০১০ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি আরও একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। সেই সময় আজকের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি নিবন্ধ লেখেন। যেটা- প্রথম আলোতে প্রকাশ হয়। এ নিবন্ধে তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন মৈত্রীর সেতু শক্তিশালী করার। এতে উপলব্ধি করা যায় চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। তারই প্রমাণ ১৪ অক্টোবর ২০১৬ জাতি প্রত্যক্ষ করল ২৭টি প্রকল্প চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই এবং উদ্বোধন হয়েছে ছয়টি বড় ধরনের প্রকল্প। আনন্দের বিষয়টি হলো সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছে- আমরা দুই দেশকে ভালো প্রতিবেশী ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার হিসেবে দেখি এবং সে হিসেবে মূল্যায়নও করি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও এক চীন নীতিতে জোরালো সমর্থন জানিয়ে বলেছেন আমরা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ চিত্তে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে উভয়ের স্বার্থে এক সাথে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা হলো- বাংলাদেশের বড় দুটো দল আ’লীগ ও বিএনপি এক সাথে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। এটা দেশের জন্য উভয়েই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। এমনটি হওয়া উচিত ছিল এবং হয়েছেও তাই।
আমরা মনে করি চীনা প্রেসিডেন্টের সফর বাংলাদেশে নতুন যুগের শুভ সূচনা করলো। আমরা হিসাব করে দেখলাম- চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও উৎপাদন ক্ষমতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারকের আওতায় ২৭ মেগা প্রকল্পে চীনের সহায়তায় মোট ব্যয় ১,৯৮০ কোটি ডলার। টাকার অংকে (৮০ দ্ধ ১৯৮০ কোটি ডলার যা দাঁড়ায় এক লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ চুক্তি যা চীনের ১৩টি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের ১১টি বেসরকারি ও ২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে হয়েছে। চুক্তির অংক-১৩৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার হিসাব দাঁড়ায় (৮০ দ্ধ ১৩৬০) এক লাখ ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করবে- পাট ও পাটজাত পণ্য চামড়া ও হিমায়িত খাদ্যদ্রব্য সামগ্রী। চীনের সাত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পন্ন হয়। টাকার অংকে হিসাব করলে দাঁড়ায় (৮০ দ্ধ ১৮ কোটি ৬০ লাখ) এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ১৩৬০ কোটি ডলারের যে বিনিয়োগ চুক্তি চীনের সঙ্গে হয়েছে তার পুরোটা অর্থ মূলত ব্যয় হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। এখন প্রশ্নটা দাঁড়িয়েছে ব্যয়ের স্বচ্চতা নিয়ে। কিভাবে ব্যয় হবে- কারা তত্ত্বাবধায়ক থাকবে। আমাদের দেশে অতীতে যারাই বিনিয়োগ করেছে সবাই কমবেশি দুর্নীতির কথা বলেছে। চীনা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও একই কথা ১৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বলেছে। রাষ্ট্র যদি বিনিয়োগবান্ধব সুযোগ-সুবিধা দিতে অপারগ হয় তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে হোঁচট খাবে। অতীতের অভিজ্ঞতা তাই বলে। আমাদের দেশের শাসকবৃন্দ টেকসই অর্থনীতির গালভরা উক্তি করেন কিন্তু কিভাবে সেটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। আমরা বিনিয়োগ আনি কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারি না নিজেদের চরিত্রের কারণে। বিনিয়োগবান্ধব রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে প্রথমে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সুশাসন-সুরাজনীতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানিকীকরণ একান্ত প্রয়োজন। দেশে যদি অপরাজনীতির সংস্কৃতি বিরাজ করে তাহলে বিনিয়েগ ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। সম্প্রতি এর প্রমাণ আমরা দেখেছি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্মেলন সার্ক অন্তর্দ্বন্দ্বে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশ একসাথে বসতে এবার শুধু নয়, বহুবারই ব্যর্থ হয়েছি। এটা আমাদের দেশে দোষারোপের রাজনীতির পর্যায় রূপ নিয়েছে। ৮টি রাষ্ট্র সার্ককে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে ফেলেছে যা কোনোভাবেই উচিত ছিল না।
আমাদের ম প্রধানমন্ত্রী সহাস্যে ব্রিকস-বিমস্টেক সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের গোয়ায় গিয়েছেন। কারণ এখানে ভারত-রাশিয়া মুখ্য ভূমিকায় থাকছে- এ জন্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। কিন্তু বিমসটেক কখনোই সার্কের বিকল্প হতে পারে না। এটা ৮টি সার্কভুক্ত রাষ্ট্রপ্রধানকে বলতে হবে। এখানে ভূরাজনীতিকে টেনে এনে বারবার তাকে ব্যাহত করে দেওয়ার অর্থ হলো টেকসই উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা একেবারেই অপ্রস্তুত। অথচ পূর্ব এশিয়ার আশিয়ান এবং ইউরোপের চার-পাঁচটি ব্যবসায়িক সংগঠন একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। কোন বিবাধ নেই তাদের মধ্যে। কিন্তু সার্ক নিয়ে কেন এসব হচ্ছে- তা ভাবনার বিষয়। আঞ্চলিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব ৮টি রাষ্ট্রের। শুধু পাকিস্তানের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে এটাকে বর্জন করা একেবারেই বালখিল্যের পরিচয় দেয়ার শামিল বলে আমরা মনে করি। ১৯তম সার্ক সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় শুধু পাকিস্তান নয়, ৮টি দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুইভাবেই সার্কের উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। সার্কের স্থবিরতা বা অপমৃত্যু কোনোভাবেই বাংলাদেশ চাইতে পারে না। আমরা মনে করি সার্ক স্থবির হয়ে গেলে ভূরাজনীতিতে ভারতের খবরদারি বৃদ্ধি পাবে।
সর্বশেষে বলবো চীনের সাথে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্পসহ চীনা বিপুল বিনিয়োগে অতীতে বিশ্বব্যাংকে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল এ ধরনের কোন অভিযোগ যেন না ওঠে সেদিকে উভয় পক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা যাতে কোনভাবেই বিনষ্ট না হয় সেটা জাতি প্রত্যাশা করে।
য় লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক ও কলামিস্ট
যধৎঁহৎধংযরফধৎ@মসধরষ.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন