কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি অপরাধের প্রতি ঘৃণা এবং অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার মনোভাব সৃ’ির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রা’্রকেই পালন করতে হবে।
আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে মানুষ গড়ার কারিগর মুহাম্মদ স. দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত একটি সমাজকে উদ্ধারের নিমিত্তে কী ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন তা লক্ষণীয়। সে শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস ছিল -আল-কুরআন ও আল-হাদীস। এ শিক্ষা গ্রহণ করে গড়ে উঠেছিলেন আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী রা.-এর মত মানবেতিহাস খ্যাত শাসক ও মনীষী। এ ব্যবস্থা আত্মস্থ করে এমন একদল মানুষ তৈরি হলেন যে, যারা অপরাধের পর বিবেকের কশাঘাতে টিকতে না পেরে নিজেদের অপরাধের বিচার প্রার্থনার জন্য রসূলের বিচারালয়ে হাজির হতেন। নিজে ক্ষুধার্ত থেকে অভুক্তকে নিজের খাদ্য বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠলো। এতে এমন এক দল চরিত্রবান নেতৃত্ব গড়ে ওঠলো, যারা এক সময় মানুষের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর জন্য হুমকি ছিল, পরবর্তীতে তাদের পরিচালিত রাষ্ট্রে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রাতে-দিনে সুন্দরী, মূল্যবান সব অলঙ্কার পরিহিতা মহিলা একাকি পথ চলেছে কিন্তু কেউ তাকে জিজ্ঞাসাও করেনি, কেউ তার দিকে চোখ তুলে দৃ’িপাতও করেনি। প্রত্যেকটি মানুষ পরস্পরের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর বিশ্বস্ত আমানতদার বনে গেল। আল-কুরআন এমন সোনার মানুষ তৈরি করল যে, অর্ধেকটা পৃথিবীর বাদশাহী হাতের মুঠোয় পেয়েও দায়িত্বের ভার তাকে এমনভাবে তাড়া করে ফিরতো যে, আরামের ঘুম দূরে ঠেলে দিয়ে রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়লো অভুক্ত মানুষের সন্ধানে। কোথাও কি অসহায় মানবতা জুলুমের শিকার হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করছে? কেউ কি তাঁর শাসন কাজে অসন্তু’? এ সমস্ত প্রশ্ন তাকে সদা অস্থির করে তুললো।
প্রয়োজন পূরণে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দু’টি কাপড় নয় বরং অন্যান্য নাগরিকদের ন্যায় একটিই গ্রহণ করলো। কিন্তু এক টুকরা কাপড় দিয়ে তার জামা হওয়ার কথা নয়; ছেলের ভাগের কাপড় দিয়ে নিজের জামা তৈরি করে নিল।
সুতরাং দুর্নীতির সব ব্যবস্থা উন্মুক্ত রেখে দুর্নীতি দমন অসম্ভব। এ জন্য রসূলের স. পন্থায় আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য আমাদের সেই কুরআন-যা আজো অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে, সেটিকে আমাদের সকল কাজে মূলনীতি রূপে গ্রহণ করতে হবে।
প্রচার মাধ্যম ঃ দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো দুর্নীতি উচ্ছেদে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকার মিডিয়াগুলোকে নৈতিকতাসম্পন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য বাধ্য করতে পারে। এতে মিডিয়ার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে না। কারণ দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য এ ধরনের বাধ্যবাধকতা কারো স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশ মিডিয়া এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দখলে যারা নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না। যারা অবাধ স্বাধীনতার নাম করে কখনো কখনো সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করতে কসুর করে না। অনেক সময় মনে হয়, এদের কাছে সরকার অসহায়। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। কিছু সংখ্যক মিডিয়া আজ ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাচারিতার রূপ ধারণ করেছে। কখনো কখনো দেশের মানুষের চরিত্র হননের সাথে সাথে সমাজ ভাঙনে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। এমন সব তথ্য প্রচার করে, যা আণবিক বোমার চেয়েও অধিক ক্ষতিকর। বোমা একটা নির্দিষ্ট আওতায় কিছু লোকের জান-মালের ক্ষতি করে থাকে কিন্তু একটি বিকৃত মিথ্যা তথ্য সমাজ ভাঙ্গনের কার্যকর হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে থাকে। ইথারে ভেসে ভেসে তার আওতার বিস্তৃতি ঘটায়। সমাজকে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সামনে এনে দাড় করায়। সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধের স্থান দখল করে নেয় হিংসা-হানাহানি, বিদ্বেষ আর অমানবিকতা। ফলে মানুষ চরম দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হয়। সুতরাং সরকারের দায়িত্ব এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রচারমাধ্যমকে নৈতিকতা বিকাশে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাধ্য করা।
দুর্নীতির কারণ ঃ নানা কারণে দুর্নীতি হতে পারে, কোন একক উপাদানকে দুর্নীতির কারণ বলে উল্লেখ করা যায় না। নিম্নে এর কারণগুলো বর্ণনা করা হলো- ক. ইসলামী মূল্যবোধ ও আখিরাতে জবাবদিহিতার অভাব : মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক পরিবেশ থেকে নৈতিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। যে জাতি ইসলামী শিক্ষায় তথা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, যাদের তাকওয়া ও আখিরাতে জবাবদিহিতার বালাই নেই সে সমাজে দুর্নীতি সহজেই প্রবেশ করে। তার সাথে বাড়তে থাকে অনৈতিক কর্ম, দেখা দেয় হানাহানি, মারামারি ইত্যাকার বিষয়।
খ. সামাজিক পরিবর্তন : সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণে সামাজিক মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটছে। সময় সময় সামাজিক অবস্থার প্রচণ্ড পরিবর্তনের চাপে মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তার ভাব জন্মায়। এরূপ অনিশ্চয়তা হতে রক্ষার জন্য মানুষ বৈধ বা অবৈধ যে কোন উপায়েই হোক না কেন টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ অর্জন করতে চায়। ফলে দুর্নীতির জন্ম হয়।
গ. নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ বিবর্জিত রাজনীতি : অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভের পরই নি:সংকোচে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা অবৈধ উপায়ে সুবিধা লাভে লিপ্ত হয় এবং কখনো কখনো একে দূষণীয় মনে না করে যেন অধিকার মনে করে। বিভিন্নপদে স্বজনদেরকে নিয়োগদান, নিজ দলের লোকজনকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধাদান এবং এর মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগদান করে। এভাবে অযোগ্য লোকদের নিয়োগদানের মাধ্যমে দেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন