মুসলমানের চিন্তাচেতনা বিরোধী সিলেবাসের মাধ্যমে জাতিকে ধর্মহীন ও নাস্তিক্যবাদী জাতি তৈরির চক্রান্ত চলছে। অবিলম্বে বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক বাতিল করতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন ইসলামী দলের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, ৯২ ভাগ মুসলমানের চিন্তাচেতনা বিরোধী সিলেবাসের মাধ্যমে জাতিকে ধর্মহীন ও নাস্তিক্যবাদী জাতি তৈরির চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধারাবাহিক আন্দোলন, প্রতিবাদ করে আসছে। শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি আমাদের আন্দোলনকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছিলো। এখন প্রতিবাদের মুখে পড়ে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করার পর প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি তা জানেন না। অথচ প্রধানমন্ত্রী বই বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন। তিনি না জেনে কিভাবে শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উদ্বোধন করলেন? তাহলে কারা এ দেশকে নিয়ন্ত্র্রণ করছে, কারা শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করেছে? এর জবাব কে দিবে? পীর সাহেব চরমোনাই হুঁশিয়ারি করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীও যদি বিষয়গুলো না জানেন তাহলে এ পদ থেকে তাকে সরে দাঁড়ানো উচিত। ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষা চালুর বিষয়ে জড়িতদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তিনি ভুলেভরা বই এবং ইসলাম বিরোধী সিলেবাস বাতিল করার দাবি জানান।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাজী বশির মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দ্বি বার্ষিক নগর সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সহ-সভাপতি মুফতী এএনএম জিয়াউল হক মজুমদার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান শেখ, প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়‚ম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, আলহাজ আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ও মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদার।
সম্মেলনে বিগত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ২০২৩-২৪ সেশনের জন্য মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমকে সভাপতি, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদারকে সহ-সভাপতি এবং ডা. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলামকে সেক্রেটারী করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি।
খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ ঃ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, স্কুল ও আলিয়া
মাদরাসার নতুন পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দেয়া
হয়েছে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইতে বাংলার মুসলিম
শাসকদের অবদানকে খাটো করা হয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার মুসলিম
বীরদের অবদান উপেক্ষা করা হয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে
ইসলাম বিরোধী বিবর্তনবাদ শিখিয়ে তাদের ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে আঘাত
করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সমকামীতার দিকে ধাবিত করার অপচেষ্টা
করা হয়েছে। এভাবে পাঠ্যপুস্তক প্রণেতারা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ইসলামী
সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হৃদয়ে চরম আঘাত
দিয়েছে। এর সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
বিতর্কিত সকল পাঠ্যবই বাতিল করতে হবে। নতুন পাঠ্যবই তৈরিতে বিশেষজ্ঞ
কমিটির মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গকে অন্তর্ভুক্ত করতে
হবে। অন্যথায় এদেশের ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষায় তাওহীদি জনতা
দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর চত্বরে
ধর্মহীন শিক্ষানীতি, বিতর্কিত
পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম তুহিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রী সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী। সমাবেশের পর এক বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে আজাদ প্রোডাক্টস এর সামনে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস ঢাকা মহানগরী ঃ
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সারা জাতি উদ্বিগ্ন। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদেরকে ডারউইনের মতবাদ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদেরকে শেখানো হচ্ছে তাদের পূর্বপুরুষ বানর। মুসলমানরা নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যপুস্তক মেনে নিবে না। পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করে নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাত্রদের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও উলামাদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৭ ফেব্রæয়ারি গুলিস্তান পার্কে জাতীয় সমাবেশ সফল করতে ছাত্রজনতা দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানান। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস ঢাকা মহানগরীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, কিশোরদের মন-মগজে ইসলাম বিমুখিতা তৈরি করতেই পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুয়ানী লেখা ও সংস্কৃতি ঢুকানো হয়েছে। কারা পাঠ্যপুস্তকে ঈমান আক্বিদা বিরোধী লেখা ঢুকিয়ে দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তা বের করে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তিনি শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার আহŸান জানান।
পুরানা পল্টনস্থ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মুহাম্মদ শাকিব সাইফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আশিকুল ইসলামের পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করিম , কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মুফতি নুর মোহাম্মদ আজিজী, মাওলানা সানাউল্লাহ আমিনী, হাফেজ মাওলানা মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঃ
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষার্থীদের ডারউইনের মতবাদ শিক্ষা দিয়ে নাস্তিক বানাতে চায় একটি মহল। এই মহলটি দীর্ঘদিন যাবৎ এদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বর্তমানে তারা সরকারের ভিতরে অনুপ্রবেশ করে পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুত্ববাদ, নাস্তিক্যবাদ অন্তর্ভুক্ত করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান আক্বিদা নষ্ট করতে চাচ্ছে। তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নেত্রকোনা জেলা শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন । মাওলানা মোস্তফা জিহাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আলহাজ আতিক রহমান নান্নু মুন্সি, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস শাকুর, মুফতি আব্দুল বারী, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম মাওলানা আবু সায়েম খান, হাফেজ আনোয়ার শাহ, মৌলবী আব্দুর রকিব, মাওলানা আজিজুল হক আইয়ুবী, মাওলানা ফেরদৌস রহমান, অ্যাডভোকেট মোর্শেদ ব্যাগ, মাওলানা মাসুম বিল্লাহ। আলহাজ আতিক রহমান নান্নু মুন্সী বলেন, যারা মানুষকে বানরের বাচ্চা বানাতে চায় সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি বলেন, শিশুদের নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র দেশবাসি রুখে দিবে। যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক ছাপিয়ে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন