শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

দুর্নীতি দমনে ইসলাম কী বলে

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৩ এএম

নামায : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামায খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। ‘আল-কুরআন, ২৯:৪৫।’ নামাযে পঠিত প্রতি আরবী বাক্যে বান্দা তার মহান প্রভুর দরবারে পুন: পুন: এ স্বীকৃতিই প্রদান করে যে, সে ভালও কল্যাণকর নীতির পক্ষে ও দুর্নীতির বিপক্ষে কাজ করে। দৈনিক এ ভাবে পাঁচবার স্বীকৃতি প্রদানের ফলে এক সময় বাধ্য হয়ে সত্যিই সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ভাল কাজে মনোযোগী হয়।

যাকাত : সমাজের অধিবাসীরা একাধারে নৈতিক, কল্যাণকামী এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন পরস্পরের বন্ধু। আর যাকাত এ শিক্ষাই প্রদান করে থাকে। যেমন আল-কুরআনের ঘোষণা ‘ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। এদের পরিচয় এবং বৈশি’্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও রসূলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।’ ‘আল-কুরআন, ৯:৭১’ সুতরাং এ দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে পারে না।
হজ্জ : সাদা-কালো, বর্ণ-বৈষম্যহীন এক বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে সকলেই একই পোশাকে মাত্র দু’টুকরো কাপড় পরিধান করে দীন-ভিক্ষুকের ন্যায় আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হয়। এখানে কোন ব্যক্তি বা দেশের বিশেষ মর্যাদা ও উঁচু নীচুর শ্রেণী বিন্যাস করা হয় না। রসূলুল্লাহ স. বিদায় হজ্জ অনুষ্ঠানে অমূল্য বাণী শুনিয়েছিলেন যে, ‘তোমরা সবাই একে অপরের ভাই এবং একজন অনারবও আরববাসী থেকে অধিক মর্যাদাশীল নয়।’ এভাবে হজ্জ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃ’ি করে এবং সমাজ ব্যবস্থায় ন্যায়নীতির ভাবধারা চালু হয়। ইসলামের এই টুলসগুলো আইনের আওতায় এনে বাস্তবায়ন করা হলে সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতি থাকবে না। যেই মহান রব মানুষকে সৃ’ি করে মানুষেরই চির শত্রু শয়তানের অভয়ারণ্যে ছেড়ে দিলেন, শয়তানের সাথে যুদ্ধ করে নৈতিকতার সাথে টিকে থাকার জন্য সেই মহান রব উল্লেখিত বিধানগুলো আমাদের দিয়েছেন। এছাড়াও আল-কুরআন ও আল-হাদীস ক্রমাগতভাবে একটি সুন্দর সমাজ তথা রাষ্ট্র কায়েম করার উপড় অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। এমন কি মানুষের ক’ হয় এমন একটি ছোট ব্যাপারও ইসলাম বাদ দেয়নি। আবু মূসা রা. বলেন, ‘সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন মুসলিমের ইসলাম সবচেয়ে ভাল? তিনি বলেন, ঐ মুসলিমের ইসলাম সবচেয়ে ভাল যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।’ ‘ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, অধ্যায়: সিকাতুল কিয়াসা, অনুচ্ছেদ: ......., প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯০৩’ ইসলাম এক সর্বজনীন ও কল্যাণকামী জীবনব্যবস্থা।
আজ থেকে পরেনো শত বৎসর আগে রসূলুল্লাহ স. এর হাতে গড়া রা’্রটির দিকে দৃ’ি নিক্ষেপ করলে দেখা যায়, তিনি আল্লাহর দেয়া ঐ কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে এমন সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যে সমাজের অধিবাসীরা কতটুকু আল্লাহর ভয় পোষণ করার ফলে সাধারণ কোন অপরাধ করার পর পরই বিবেকের ক্রমাগত কশাঘাতে টিকতে না পেরে সাথে সাথে রসুলুল্লাহ স.-এর বিচারালয়ে নিজের দুর্নীতির বিচার প্রার্থনা করতেন। আর এ ধরনের তাকওয়া ভিত্তিক রা’্ররে উন্নয়নকল্পে আল্লাহ আসমান ও জমিনের দুয়ারসমূহ খুলে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘লোকালয়ের মানুষগুলো যদি ঈমান আনতো ও তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করতো তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। সুতরাং তাদের কর্মকা-ের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ ‘আল-কুরআন, ৭ : ৯৬’
এ ধরনের তাকওয়া সম্পন্ন জনগোষ্ঠি নিয়ে যে সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠবে, সেটিই হবে আল-কুরআনের সমাজ, ইসলামী সমাজ ও আল্লাহর পছন্দের সমাজ। এ সমাজের প্রতিটি লোক ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে সম্মানিত হবেন। দুর্নীতির মূলোচ্ছেদে পৃথিবীর কোন জীবন ব্যবস্থাই সম্পূর্ণরূপে সফল হতে পারে নি; যেমন পেরেছে ইসলাম। তাই ইসলামের ঈড়ফব ড়ভ বঃযরপং গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের অর্থনীতির জন্য, রাজনীতির জন্য, ব্যবসার জন্য, জীবনের সর্বক্ষেত্রের জন্যই রয়েছে ঈড়ফব ড়ভ বঃযরপং. বিশেষ করে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থায়, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে।‘শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজির, মাসিক পৃথিবী, জিসেম্বর-২০০৭, পৃ. ৩৪-৩৫’ মানুষের মজ্জাগত অভ্যাসকে পরিবর্তন করার জন্য ইসলামের শাশ্বত বিধান ও পদ্ধতির অনুসরণ একান্ত প্রয়োজন। দুর্নীতি একটি মজ্জাগত পদ্ধতি। দুর্নীতির মধ্যে ব্যক্তি স্বার্থ নিহিত রয়েছে। কিন্তু খারাপ দিকটি ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে বেশী। সুতরাং দুর্নীতি সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য। এ জন্য ব্যাপক প্রচার ব্যাপক প্রপাগা-া চালাতে হবে।
আল্লাহ মদ সম্পর্কে তাঁর চূড়ান্ত মতামত জানালেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ শয়তানী কাজ। সুতরাং তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ ‘আল-কুরআন, ৫ : ৯০’ একইভাবে দুর্নীতি একটি শয়তানী কাজ। সুতরাং তা বর্জনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।’ ‘আল-কুরআন, ২৪ : ২১’ আর এ কথা তো বলাই বাহুল্য যে, দুর্নীতি মন্দ কাজের অন্যতম।
রসূলুল্লাহ স.-এর প্রক্রিয়া অনুসরণ ঃ দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রসূলুল্লাহ স. প্রদর্শিত পথ অনুসরণ সময়ের দাবি। আমাদের দেখতে হবে, দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত তৎকালীন একটি সমাজকে তিনি কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত করেছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন