বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অকাল বর্ষণে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় শত কোটি টাকার ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) পক্ষ থেকে ৫৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমির ফসল দুর্যোগ কবলিত বলে দাবি করে এবং ১৩ হাজার ১৫৩ হেক্টরের ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৮০ কোটি বলে জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য চলতি রবি মৌসুমে বীজ ও সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সরবরাহে অধিদফতরে সুপারিশমালা পাঠানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ১শ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও জোয়ারে পানির প্রবাহ অস্বভাবিকভাবে বাড়েনি। কিন্তু অগ্রহায়নের এ অকাল বর্ষণে মাঠে থাকা পাকা ও আধাপাকা আমন, খেসারি ডাল, মসুর ডাল, সরিষা, গোল আলু, গমসহ শীতকালীন আগাম সবজির যেসব জমি আক্রান্ত হয়েছে তার প্রায় ৩০-৪২ ভাগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিএইর দায়িত্বশীল সূত্র মতে, আমনের ২৪ হাজার ৮৮৫ হেক্টর, খেসারি ডালের ১০ হাজার ১৫৪ হেক্টর, মসুর ডালের ৪ হাজার ৯৬৭ হেক্টর, সরিষার ২ হাজার ৮৭৪ হেক্টর, গমের ২০৮ হেক্টর, মরিচের ৫২১ হেক্টর এবং গোল আলুর ৩২৬ হেক্টর জমি অতি বর্ষণে আক্রান্ত হয়। এভাবে রোপা আমন ও রবি ফসলের প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার হেক্টর জমি বৃষ্টির পানিতে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতির হার ছিল ফসল ভেদে ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত। ডিএই’র হিসেবে সম্পূর্ণ ক্ষতি ছিল ১৩ হাজার ১৬৩ হেক্টর বা প্রায় ৩৩ হাজার একর। যা অঙ্কে প্রায় ৮০ কোটি বলা হলেও বেসরকারি সূত্রগুলো তা শত কোটি টাকারও বেশি বলে দাবি করছে। তবে ক্ষতি ৮০ কোটি বা ১০০ কোটি যাই হোক না কেন, বরিশাল অঞ্চলের কৃষকের ঘরে এখন ফসল হারানো শোক। আমননির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যবস্থায় এ ক্ষতি কৃষি অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এবার খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে যে ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিল, সেখানে উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন চাল। জাওয়াদ আঘাতের আগের দিন পর্যন্ত মাত্র ২৫ ভাগ জমির আমন ঘরে তুলেছিল কৃষকরা। জাওয়াদের ক্ষতির আগে এ অঞ্চলের মাঠে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হেক্টরে রবিসহ বিভিন্ন ফসল ছিল।
তবে বোরো বীজতলার ক্ষতি হলেও তা কাটিয়ে ওঠার যথেষ্ট সময় রয়েছে। এবার রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন