মাটির উর্বরাশক্তি, অনুকূল আবহাওয়া, তুলনামূলক কম উৎপাদন ব্যয় আর কৃষকদের প্রবল আগ্রহে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদের বিভিন্ন হাটবাজার এখন আদায় সয়লাব। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খাগড়াছড়ির আদা এখন পাইকারদের হাত ধরে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীসহ দেশের সমতলের বিভিন্ন জেলায়। উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদার দামও। গত মৌসুমের লোকসান পুষিয়ে কৃষকরা তুলছে তৃপ্তির ঢেকুর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়া আর গোড়া পচা রোগের প্রাদুর্ভাব কম থাকায় এবছর আদার বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে আদা। কৃষি অধিদফতর বলছে, এবছর খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। যা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
খাগড়াছড়ির ভুয়াছড়ির আদাচাষি বুচা মিয়া জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিনি গত কয়েক বছর ধরে আদার চাষ করছেন। পাইকাররা তার জমি থেকেই আদা সংগ্রহ করে থাকেন। এজন্য কোনো বাড়তি খরচ হয় না। বসতবাড়ির আঙিনায় ৫০ শতক ভূমিতে আদার আবাদ করেছেন কামিনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, এতে করে সংসারে বাড়তি আয়ের পথ খুলে গেছে। প্রতি হাটে নিজেই আদা বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রি করায় আদার দাম বেশি পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি। দেশজুড়ে পাহাড়ের আদার চাহিদার কথা জানিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বাজারে এবছর আদার দাম বেশি হওয়ায় মুনাফা কম হচ্ছে। বিগত সময়ে মণ প্রতি ৫০০-৭০০ টাকা মুনাফা হলেও এ বছর তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আদার চাষ করে বাড়ি, জমি কিনেছেন মাটিরাঙ্গার মোল্লা বাজার গ্রামের আলী হোসেন। তিনি বলেন, ধানের চেয়ে আদা চাষে লাভ বেশি। এক একরে আমন ধান চাষ করতে ব্যয় হয় ২০-২২ হাজার টাকা। উৎপাদিত ধান বিক্রি হয় ৩০-৩২ হাজার টাকা। লাভ ৮-১০ হাজার টাকা। কিন্তু এক একরে আদা চাষে ব্যয় হয় ৮০-৯০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। একরে আদা চাষ করে আয় আসে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তরুন ভট্টাচার্য বলেন, আদা পাহাড়ের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। পাহাড়ে আদা চাষে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন