সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএমইটিতে জালিয়াতি দিন দিন বাড়ছেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিএমইটিতে জালিয়াতির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে অবাধে জাল ভিসায় বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু হচ্ছে। অভিযুক্ত প্রতারক চক্র বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সাতটি জাল ভিসায় তথ্য গোপন করে সুইজারল্যান্ডে মানবপাচারের লক্ষ্যে মেসার্স মল্লিক রিক্রুটিং এজেন্সি গত ২৯ জুন বিএমইটিতে আবেদনপত্র পেশ করে।

ওই ভিসাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য নিউজেল্যান্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সেলর প্রথম সচিব (শ্রম) মো. সালাহ উদ্দিনের কাছে পাঠানো হয়। প্রথম সচিব যাচাই-বাছাই করে ভিসাগুলোর কোনো বৈধতা পাননি। তিনি গত ১৭ জুলাই এক জরুরি চিঠিতে বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম, বিএমইটির পরিচালক ইমিগ্রেশন ও প্রটোকল এবং প্রবাসী সচিবের একান্ত সচিবের কাছে অভিযুক্ত মেসার্স মল্লিক রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ পেশ করেন।

বিএমইটির উপ-পরিচালক (বর্হিগমন) ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান মোল্লা গত ২৮ অক্টোবর এক তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সি মল্লিক কর্মীর স্বার্থ সংরক্ষণের চেয়ে আর্থিক লাভের বিষয়ে অধিক মনোযোগী। তিনি নিউজিল্যান্ডে জাল ভিসায় সাত বাংলাদেশিকে প্রেরণের জন্য বর্হিগমন ছাড়পত্র গ্রহণের আবেদন জমা দেয়ায় মল্লিক রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩১ ও ৩৩ ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।

এ বিষয়টি রাতারাতি ছড়িয়ে পড়লে বিএমইটিতে তোলপাড় শুরু হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রতারক চক্র উল্লেখিত ৭টি জাল ভিসা থেকে নরসিংদীর হাবিবুর রহমান নামে এক জনের বর্হিগমন ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য পৃথক রিক্রুটিং এজেন্সি জে এস এ ওভারসীজের মাধ্যমে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিএমইটি থেকে অনুমতি লাভ করে। এতে বিএমইটির কর্মকর্তারা হতবাক হন। এ ব্যাপারে গতকাল রাতে জে এস এ ওভারসীজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম হোসেন জহিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেস্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, অভিযুক্ত মল্লিক রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের সাথে বিএমইটির জনৈক কর্মকর্তার ‘বিশেষ’ সর্ম্পক থাকায় প্রতারণার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাছাড় ৭ জাল ভিসার প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত মল্লিক রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিবাসী আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করায় সম্প্রতি বিএমইটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক (বর্হিগমন) আসাদুজ্জামান মোল্লাকে গত ২৩ ডিসেম্বর বিএমইটির প্রশিক্ষণ শাখায় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বর্হিগমন ছাড়পত্র পেতে কেন চরম হয়রানি, টেবিলে টেবিলে ঘুষ বাণিজ্য এবং বিএমইটিতে জালিয়াতির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল সোমবার বিএমইটির সম্মেলন কক্ষে মিডিয়া কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় ডিজি শহীদুল আলম বলেন, নানা অনিয়ম দূর এবং বর্হিগমন ছাড়পত্র দ্রুত ইস্যুর লক্ষ্যে সম্প্রতি ২৩ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এতে ভালো সুফল পাওয়া যাবে বলে ডিজি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনিয়ম বন্ধে শিগগিরই অনলাইন প্রক্রিয়ায় বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুর আবেদন নেয়া হবে। এতে ঘুষ নেয়ার সুযোগ থাকবে না।

ডিজি শহীদুল আলম বলেন, গত নভেম্বর মাসে এক লাখ দুই হাজার ৮০০ বিদেশগামী কর্মীর বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। এতেই বুঝা যাচ্ছে প্রবাসী কর্মীদের ভোগান্তি কমছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও জনসচেতনাতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার দায়িত্বশীলদের অবদান শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে ডিজি বলেন, আমাদের কিছু কিছু ভুলত্রæটি আছেই। এসব ত্রæটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন।

গতকাল রাতে মল্লিক রিক্রুটিং এজেন্সির প্রধান ইমরান হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সাত ব্যক্তি নিজেরা নিউজিল্যান্ড থেকে ভিসা সংগ্রহ করেছিল। তারা অঙ্গীকারনামা দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্হিগমন ছাড়পত্র সংগ্রহের জন্য দিযেছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিসা জালিয়াতির সাথে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। এ ঘটনার পর উক্ত ভিসার বর্হিগমন আবেদনপত্র প্রত্যাহারের জন্য তিনি বিএমইটিতে চিঠি দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন