সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বাহরাইনের নামে প্রতারণা

দালাল চক্র ধরা ছোঁয়ার বাইরে: বিএমইটি নীরব !

শামসুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

ভিটে-মাটি বিক্রি ও ঋণ করে সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে স্বপ্নের দেশ বাহরাইনে গিয়ে ভাগ্যে চাকুরি জোটেনি। ভালো চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সী রংপুরের নিরীহ যুবকদের কাছ থেকে জনপ্রতি সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে বাহরাইনে পাঠিয়েছিল। প্রতারণার শিকার রংপুরের চার যুবক বাহরাইনের রাস্তার কাগজ-ক্যান কুঁড়িয়ে বিক্রি করে খাবার খেয়ে ২/৩ মাস পরেই খালি হাতে দেশে ফিরেছে। পরিবার-পরিজন নিতে তারা এখন অনাহার-অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ ঈসরাফিল আলম এমপি ২০১৭ সনের ২২ নভেম্বর এক গণশুনানিতে প্রতারণার শিকার উল্লেখিত যুবকদের ক্ষতিপূরণ আদায়সহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিএমইটিকে নিদের্শ দিলেও অদ্যাবধি চোখে পড়ার মতো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। গতকাল বুধবার এসব যুবক এ প্রতিবেদকের কাছে প্রতারণার ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাহরাইনে জনশক্তি রফতানি ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬ সনে বাহরাইনে ৭২ হাজার ১৬৭ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। ২০১৭ সনে দেশটিতে ১৯ হাজার ৩১৮ জন কর্মী চাকুরি লাভ করে। গত জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র ৭শ’ ৩১ জন চাকুরি লাভ করেছে। দালাল চক্রের অপতৎপরতার দরুণ বাহরাইনের শ্রমবাজার হাত ছাড়ার উপক্রম হচ্ছে।
মেসার্স মক্কা-মদিনা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৮১০)-এর স্বত্বাধিকারী আইয়ূব আলী তার দালাল মুসা ও দেলোয়ারের মাধ্যমে রংপুরের মিঠাপুকুরের মোঃ বেলাল মিয়া, মোঃ মোনারুল মিয়া, মোঃ শফি আলম ও আবুল কালাম আজাদকে ভালো চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৬ সনে বাহরাইনে পাঠায়। অভিবাসন ব্যয় হিসেবে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মক্কা-মদিনার ট্রেডের দালাল আল-আমিন বাহরাইন বিমান বন্দরে এসব কর্মীদের রিসিভ করে একটি ভাড়া বাসায় উঠায়। ঐ দালাল প্রতারণার শিকার এসব কর্মীদের বাহরাইনে নিজেদের চেষ্টায় কাজ খুঁজে নেয়ার কথা জানালে তারা হতবাক হন। তারা নিরুপায় হয়ে একজন প্রবাসী বাংলাদেশীর সহায়তায় রাস্তার কাগজের কার্টুন, ক্যান কুঁড়িয়ে বিক্রি করে নিজেদের খাবার জোগাতে থাকে। পরে দেশের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিমান ভাড়ার ৩০ হাজার টাকা নিয়ে টিকিট কেটে দেশে ফিরেছে। প্রতারণার শিকার এসব কর্মী বাংলাদেশ মাইগ্র্যান্টস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় এবং প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন পেশ করে। বিএমইটির উপ-পরিচালক (কর্মসংস্থান) খালেদা পারভীন কয়েক দফা মোবাইল ফোনে এসব কর্মীদের ঢাকায় ডেকে এনে শুনানি নেয়। গতকাল বুধবারও উপ-সচিব খালেদা পারভীন রংপুর থেকে প্রতারণার শিকার এসব কর্মীদের শুনানির জন্য তার দপ্তরে ডেকে আনেন । কিন্ত অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সীর স্বত্বাধিকারী আইয়ূব আলী বিএমইটির শুনানিতে উপস্থিত না হয়ে তার অফিসের পিয়ন দেলোয়ার হোসেনকে পাঠায়। এ ব্যাপারে রাতে উপ-পরিচালক খালেদা পারভীনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না বলে ফোন রেখে দেন। মক্কা-মদিনার ট্রেডের স্বত্বাধিকারী আইয়ূব আলী এক প্রশ্নের জবাবে ইনকিলাবকে বলেন, চারজন কর্মীকে বাহরাইনে পাঠানোর ঘটনায় তার রিক্রুটিং এজেন্সী ১০০% দায়ী। তাদেরকে বাহরাইনে মানবপাচার করা হয়নি বলেও তিনি দাবী করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন