বিএমইটিতে সিন্ডিকেট চক্র আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দোদাণ্ড প্রতাপশালী কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের উপদ্রপে বিএমইটির কর্মকর্তারা চরমভাবে ক্ষ্ব্ধু। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের বর্হিগমন ছাড়পত্র নিতে তৎপর মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট চক্র। বিএমইটির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে দহরমহর সর্ম্পক গড়ে তুলছে সিন্ডিকেট চক্র। সক্রিয় বেশকিছু অসাধু মানবপাচার সিন্ডিকেট। মানবপাচারের এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের খোঁদ অসাধু কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি এইচপি ওভারসীজ (লাইসেন্স নাম্বার ১৩৮৮) নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির বেশ কিছু ভুয়া ডকুমেন্টস ও জাল জালিয়াতি ধরা পড়ায় বিষয়টি নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে বিএমইটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
চলতি বছর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিদের্শে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বহির্গমন ছাড়পত্র দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে কর্মী প্রেরণের ঘটনায় কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকার চাঞ্চল্যক তথ্য বেড়িয়ে আসে। এতে বিএমইটির ডিজি অভিযুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করেন।
এছাড়া স্বপ্নের দেশ ইউরোপে পৌঁছে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শত শত নিরীহ যুবক। ইউরোপ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে গ্রামাঞ্চলের নিরীহ যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মানবপাচারকারী দালাল চক্র। এসব দালাল চক্রের সাথে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রও জড়িত রয়েছে। ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ না জুটলেও মাসের পর মাস কারাবন্দি দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে অনেককেই। দালাল চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে গ্রিসে গিয়ে দেশটির কারাগারগুলোতে প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশি যুবক দেশে ফেরার আতঙ্কে ভুগছে। গ্রিস থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। আবার ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতেও কেউ কেউ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আইওএম এর আর্থিক সহায়তায় লিবিয়ার কারাগার থেকে মাঝে মধ্যেই শত শত ভাগ্যান্বেষী বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
বিএমইটির সূত্র অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ২০ হাজার ৬১৩ জন নারী পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এসব প্রবাসী কর্মীরা প্রতি মাসে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে কর্মী প্রেরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব না হলে জনশক্তি রফতানিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। একাধিক জনশক্তি রফতানি কারক এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এইচপি ওভারসীজের স্বত্বাধিকারী প্রবীর বণিক গত ১৫ নভেম্বরের দুবাই গমনেচ্ছু ৩০জন কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য বিএমইটিতে একটি ফাইল দাখিল করেছিলেন। যেখানে ২০ টি সনদ জাল ও ভুয়া দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নথি উপস্থাপন করেন।
উক্ত ভুয়া সার্টিফিকেটের ফাইলে স্বাক্ষর করেন বিএমইটির সহকারি পরিচালক ও উপপরিচালক। কিন্তু পরিচালকের টেবিলে গিয়ে আটকে যায় ভুয়া কাগজপত্র সংযুক্ত ফাইলটি। যাচাই বাছাই করে সকল সনদ জাল ও ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত ফাইল বাতিল করা হয়। গত ১৬ নভেম্বর বিএমইটির উপসচিব পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ, বহির্গমন) মো. জাকির হোসেন সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ প্রেরণ করেন। মেসার্স এইচ পি ওভারসীজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রবীর বণিককে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে কর্মী প্রেরণের চেষ্টার ব্যাপারে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।
বিএমইটির ওই নোটিশে বলা হয়, এইচ পি ওভারসীজ লিমিটেড গত ১৫ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী ৩০জন কর্মীর ছাড়পত্র ইস্যুর জন্য আবেদন পেশ করা হয়। কিউ আর কোড স্ক্যান করে (যাচাই বাছাই করে) ২০ কর্মীর পিডিও সার্টিফিকেট জাল ও ভুয়া প্রমাণিত হয়।এ ধরনের জাল জালিয়াতি অভিবাসী আইন, ২০১৩ এবং বৈদেশিক কমংস্থান ও অভিবাসী (রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স ও আচরণ) বিধিমালা ২০১৯ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিন দিনের মধ্যে স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নিদের্শ জারি করা হয়। অন্যথায় একতরফা নিস্পত্তি এবং আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ভুয়া ফাইলে সই দেয়ায় সরকারি দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
উক্ত ভুয়া জালিয়াতি ফাইলে স্বাক্ষরকারী বিএমইটির কর্মকর্তা ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে স্বীকার করেন বিষয়টি। তিনি বলেন, ইন্টারনেট দুর্বলতার কারণে ঐদিন অনলাইনে চেক করা সম্ভব হয়নি। তাই সরল বিশ্বাসে আমি ফাইলটিতে স্বাক্ষর করি কিন্তু প্রবীর বণিক এভাবে প্রতারণা করবেন সেটি আমার কল্পনাতেও ছিল না।
এসব জাল জালিয়াতির কাগজপত্র সিন্ডিকেট ধরা পরার পর বেরিয়ে এসেছে আর চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী প্রবীর বণিকের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অবৈধ অর্থ অর্জন করে ভারতে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর চিটাগাং রোডে বিলাসবহুল আটতলা বাড়ি ছাড়াও ভারতে পাছারকৃত অর্থে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। তার পরিবারের অনেকেই ভারতে বসবাস করেন এবং তার সম্পদের দেখভাল করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে এইচ পি ওভারসীজের মালিক প্রবীর বণিক বিএমইটিতে জাল জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জারিকৃত নোটিশ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, কে বা কারা বিএমইটিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের জারিকৃত নোটিশের কথা স্বীকার করে প্রবীর বণিক বলেন, নোটিশের জবাব দিয়েছি। জালিয়াতি করে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর অপচেষ্টা এবং ভারতে অর্থপাচারের অভিযোগ সর্ম্পকে প্রবীর বলেন, এসব ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন