পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ৭টিতে নৌকার বিপক্ষে লড়ছেন স্থানীয় এমপি ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সমর্থিতরা। নৌকার বিপক্ষে খোদ এমপির লোকেরা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ভোটের মাঠে সুবিধা নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াত ইসলামির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্থানীয়রা বলছেন চান্দিনায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামী লীগ।
রবিবার রাতে ফেসবুকে লাইভে এসে চান্দিনা আসনের প্রয়াত এমপি অধ্যাপক আলী আশ্রাফের ছেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোন্তাকিম আশরাফ টিটু বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্নভাবে নৌকার প্রার্থীদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নৌকার প্রার্থীদের ফেল করানোর জন্য স্থানীয় সাংসদ ডা. প্রাণ গোপালের নির্দেশে নৌকার নেতাকর্মী-সমর্থকদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। মোন্তাকিম আশরাফ টিটিু ফেসবুক লাইভে আরো বলেন, এমপি প্রাণ গোপাল চাচা তৃণমূল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যেসব প্রার্থীদের ডিউ লেটার দিয়েছিলেন তারাই এখন বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি- ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির জন্য এমপি বিভিন্নভাবে কাজ করছেন, বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছেন, নিজের প্রভাব খাটিয়ে নৌকার প্রার্থীদের ফেল করানোর জন্য সবকিছু করছেন।
চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, এমপি প্রাণ গোপালের কট্টর রাজনৈতিক মনোভাবের কারণে চান্দিনায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছে। চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমর্থিত ১০ চেয়ারম্যান প্রার্থী দলের মনোনয়ন পেয়ে এমপি প্রাণ গোপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন। ওই সময় এমপি প্রাণ গোপাল উদার হলে আজকে নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় না। ১২ ইউনিয়ের ১০টিতে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন মুন্তাকিম আশরাফ টিটুর লোক ও বাকি দুইটিতে এমপি প্রাণ গোপালের লোক।
এমপি প্রাণ গোপাল সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন- শুহিলপুর ইউনিয়নে আবু বকর ছিদ্দিক, বাতাঘাসী ইউনিয়নে আ.ন.ম. কামরুজ্জামান ভূইয়া, কেরণখাল ইউনিয়নে সুমন ভূইয়া, বাড়েরা ইউনিয়নে আহসান হাবীব ভূইয়া, এতবারপুর ইউনিয়নে মো. ইউসুফ, বরকইট ইউনিয়নে মোহাম্মদ আবুল কালাম, মাইজখার ইউনিয়নে শাহ সেলিম প্রধান।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে এমপি প্রাণ গোপালের লোকজন ভোটের মাঠে নেমে পড়ায় চান্দিনা আওয়ামী লীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নৌকা ও বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের ফলে বেশির ভাগ ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর ভরাডুবির আশংকা রয়েছে। বেশ কিছু ইউনিয়নে বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াত প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ আলম জানান, নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করায় নৌকার ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বিএনপি-জামায়াত, এলডিপি সুবিধে নিতে পারে। এমপি মহোদয় প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ না করলেও উনার ডিউ লেটার প্রাপ্ত প্রার্থীরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
এদিকে চান্দিনার ১২ ইউনিয়নের ৬টিতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াত প্রার্থীরা। এরমধ্যে বাতাঘাসী ইউনিয়নে টেবিল ফ্যান প্রতীকে উপজেলা এলডিপি সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ ও ঘোড়া প্রতীকে বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন, কেরণখাল ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে বিএনপি সমর্থক আতিকুর রহমান,বাড়েরা ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকে সাবেক এলডিপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন কালা, এতবারপুর ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে বিএনপি সমর্থক কাউসার আহমেদ,বরকইট ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকে সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম এবং মটর সাইকেল প্রতীকে ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম, দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মো. শাহজাহান এবং জোয়াগ ইউনিয়নে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের ভূইয়া চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন