আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র (হাতি মার্কা) মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার গতকাল নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, আমার সেøাগান হল সিটি করপোরেশনে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সিটি করপোরেশন জনমুখী হবে। জনগণকে সিটি করপোরেশনের পেছনে দৌড়াতে হবে না। সিটি করপোরেশন এলাকায়-এলাকায় যাবে। তাদের সাথে কথা বলে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবো। গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। গণসংযোগে তৈমূরের সাথে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, বিএনপির নেতাকর্মীসহ অসংখ্য কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, জনগণ যেভাবে আমার পক্ষ হয়ে মাঠে নামছে, আর সিটি করপোরেশনের যে ব্যর্থতা, ট্যাক্সের বোঝা তাতে জনগণ এবার হাতি মার্কার প্রতি রায় দিবে। কেন না, আমার চিন্তা এবারের সিটি করপোরেশন হবে জনমুখি, মানুষ সিটি করপোরেশনের পিছে ছুটবে না, সিটি করপোরেশন মহল্লায় মহল্লায় যাবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তৈমূর বলেন, একটা কথা বার বার ভালো লাগে না। আমি বসিনি, বিএনপি বসে গেছে ২০১১ সালে। এবার বিএনপি আমাকে বলতে পারবে না তুমি বসে যাও। কারণ আমার যে পদ ছিল তা নিয়ে গেছে তারা। এখন আর দল বলতে পারবে না। এখন আমি সম্পূর্ণ নাগরিকদের কন্ট্রোলে। জনগণ যেভাবে দলমত নির্বিশেষে নেমেছেন, জনগণ হাতির পক্ষে রায় দেবে আমার পক্ষে রায় দেবে।
তিনি বলেন, সকলে আমাকে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে কারণ এখন আমি দলীয় কোন প্রার্থী না। যারা ধানের শীষে ভোট দিত, তারা কেন নৌকায় ভোট দিবে? তারা আমাকেই ভোট দিবে। নাগরিকদের চাহিদার কারণেই তো আমার এই প্রার্থিতা। নাগরিকরা আমার জন্য নেমেছে, বিএনপি নেমেছে, সকল দল আমার জন্য নামছে। আমার আশেপাশে যাদের দেখছেন তারা সবাই বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তিনি আরো বলেন, সরকারি দলের কিছু নেতার বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা যায়। একজন নেতা বলে গিয়েছে তৈমূরকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না। এসব কথা আমি গায়ে মাখি না। তবে এই ধরনের কথাবার্তা উস্কানিমূলক। এ ধরনের কথাবার্তায় বিশৃঙ্খলার বীজ বপন করা হয়।
তৈমূর বলেন, নির্বাচন কমিশন আমার শো ডাউনকে বাধাগ্রস্থ করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের শো ডাউনকে নির্বাচন কমিশন বাধগ্রস্থ করতে পারেনি এবং কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী শামীম ওসমান সম্পর্কে বলেছেন, তাঁর সমর্থন খুব জরুরি আজকের আমাদের এই নির্বাচনে। তিনি একজন মাননীয় এমপি। উনি ইচ্ছা করলেও আসতে পারবেন না। আমরা নির্বাচনের মধ্যেই থাকি।
গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকা থেকে ১নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন আইভী। এসময় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার পক্ষে আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলে।
তৈমূরের অব্যাহতি প্রসঙ্গে আইভী বলেন, এটা একটা দলের কৌশল হতে পারে। এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। এটা উনাদের দলীয় কৌশল। আমি মাঠে লড়ছি তার সাথে, সে আমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, আরও আছে। আমি এভাবেই শেষ পর্যন্ত লড়বো।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে কাজ করতে সবসময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। এখানে সবধরনের চ্যালেঞ্জই আছে। এখানে আলাদাভাবে কিছু বলা যাবে না। যে কোন কাজেই চ্যালেঞ্জ আছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কখনও বিভাজন ছিল না। তৃণমুল সবসময় একত্রিত ছিল। নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা থাকতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগে কোন বিভাজন নেই, আগেও ছিলনা। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক শেখ হাসিনার কর্মী। আমাদের মতবিরোধ থাকতে পারে কিন্তু দিনের শেষে সকলে শেখ হাসিনার কর্মী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।
চাঁদা দাবি করা সেই যুবক গ্রেফতার : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয়ে চাঁদা দাবি করা সেই যুবককে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) পুলিশ তাকে আটক করেন। আটককৃত যুবকের নাম মো. সুমন। তিনি কুমিল্লা এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে রাজধানীর রাজারবাগ এলাকায় বসবাস করেন। মো. সুমন নও মুসলিম বলে জানায় ডিবি পুলিশ।
গত শনিবার রাতে এই ব্যাপারে তৈমূর আলম সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযোগটি গ্রহণ করলেও সেটিকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি। লিখিত অভিযোগে তৈমূর আলম উল্লেখ করেন, তিনি আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। গত কয়েকদিন যাবৎ গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয় দিয়ে একটি মোবাইল নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন দিয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করছে। তৈমূর আলম বলেছিলেন, বিষয়টি বিব্রতকর। কিন্তু আমি এতটাই ডিস্টার্ব হচ্ছিলাম যে, বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে পারছিলাম না। তাই লিখিতভাবে পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে রেখেছি। ওই সদর মডেল থানার ওসি শাহজামান অভিযোগ বিষয়ে বলেছিলেন, তৈমূর আলমের কাছে কেউ একজন চাঁদা দাবি করছে বলে তিনি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তার অভিযোগটি তদন্ত করে দেখছি।
নারায়ণগঞ্জের ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি পশ্চিম) জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ প্রশাসন কাজ শুরু করে। আমরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গোপন অভিযান চালিয়ে ওই অভিযুক্তকে আটক করতে সক্ষম হই। প্রাথমিক অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন