র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে এখনও এ ইস্যুতে বায়ারদের কোনো অর্ডার স্থগিত কিংবা বাতিল হয়নি। গতকাল বুধবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘ইআরএফ ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপটি আয়োজন করে ইআরএফ।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমরা চিন্তিত। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের জায়গায় ঠিক আছি। তাদের সঙ্গে কিভাবে ফ্রেন্ডলি রিলেশন রাখতে পারি, সে চেষ্টা করছি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। কোনো বায়ারকে হারাতে চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে করোনা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে কিছু ইউরোপীয় বায়ার ডেলিভারি এক সপ্তাহ, কিংবা ১০ দিন পেছাতে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বায়ারের অর্ডার বাতিল হয়নি।
পোশাক মালিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিস্তার লাভ করছে। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে যেন এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার না হয়, সেজন্য আগেই সবাইকে সতর্ক হতে হবে। আমরা চাই না করোনার শুরুর দিকের মতো অবস্থা আবারও সৃষ্টি হোক। সম্প্রতি আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছি তারা যেন নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় সব ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। তিনি আরো বলেন, মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব আমরা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি। যে কারণে এখন আমরা নতুন অর্ডার পাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে আমরা যেন পেছনে না যাই, সে জন্য আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে কৌশল হচ্ছে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিকাল অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা নেয়া। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৬ সালের পর যে বাড়তি তিন বছর শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় রফতানির সুযোগ দেবে, আলোচনার মাধ্যমে তা বাড়ানো। বিজিএমইএ ইইউ’র কাছে ১০ বছরের জন্য এই সুবিধা চায়। এরপর বিজিএমইএ ইইউ’র সঙ্গে জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা করবে। তবে পোশাক মালিকরা চান এই সময়ের মধ্যে সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করবে। তিনি বলেন, বিজিএমইএ সব সময় পুরো খাতের উন্নয়নে কাজ করেছে, এখনও করে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি-বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহত্তম এই বাজারে তৈরী পোশাক জিএসপি সুবিধা পেত না। এখনও পাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো পোশাক মালিকরা ও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এদেশের উদ্যোক্তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। বিশ্বের নিরাপদ কারখানা এখন বাংলাদেশে। ১৫৩টি গ্রিন ফ্যাক্টরী রয়েছে দেশে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাদের কাজটি করছেন। এখন জিএসপি দেয়া না দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়। তিনি বলেন, দেশটির জিএসপি সুবিধা দেয়ার সঙ্গে শুধু শর্ত বাস্তবায়ন নয়, রাজনীতিও জড়িত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স ২০ থেকে ৩০ বছর আগে নেয়া। তিন দশক আগে বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য তৈরি করত এখন তার চেয়ে ভিন্ন ও উন্নত পণ্য তৈরি করছে। ফলে পুরনো বন্ড লাইসেন্সে অনেক পণ্যেরই উল্লেখ নেই, কিন্তু ওই লাইসেন্সধারী কারখানার নতুন পণ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। লাইসেন্সে উল্লেখ না থাকলেও ব্যবহারিক ঘোষণাপত্রে (ইউডি) তা থাকছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনেক সময় পণ্য ছাড় করছে না। এতে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের রফতানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত বেড়েছে আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। এছাড়া করোনার সময়ে ক্রেতাদের অনেক দাবি দেশের রফতানিকারকরা রেখেছেন। বিশেষ করে পরে ডেলিভারি, দেরিতে মূল্য পরিশোধ, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি সুবিধা দেয়া হয়েছে। যে কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে রফতানিকারকদের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ক্রেতারা তাদের বাড়তি চাহিদার পণ্য বাংলাদেশ থেকেই নিচ্ছেন। এছাড়া করোনার কারণে মানুষের ভ্রমণসহ অন্যান্য ব্যয় কমেছে। ফলে পশ্চিমারা তাদের অন্য খাতের অর্থ পোশাক কেনায় ব্যয় করছে। পোশাকের সামগ্রিকভাবে মূল্য সামান্য বাড়লেও কাটিং ও মেকিং চার্জ বাড়েনি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এ সময় ইআরএফের সহ-সভাপতি এম শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন