বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নতুন নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব এড়িয়ে দেশ এক রকম স্বাভাবিক অবস্থায় পর্দাপণের মধ্যেই এখন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৃত্যুর হার শূন্যের কাছাকাছি অবস্থা থেকে এখন তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। করোনা শনাক্তের সংখ্যা গত সোমবার আবারো দুই হাজারের কোটা অতিক্রম করেছে। আগের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক এবং মৃদু লক্ষণযুক্ত ওমিক্রনের মহামারি প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশ কঠোর বিধিনিষেধ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ লকডাউনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। ওমিক্রনসহ নতুন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার আবারো বিধিনিষেধ নির্দেশনা জারি করেছে। সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা, টিকা সনদ ছাড়া হোটেল-রে¯েঁÍারায় থাকা-খাওয়ার সুযোগ রহিত করা, সব ধরণের জনসমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ ১১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ কথা সত্য যে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা এবং বিধিনিষেধ মেনে চলার বিকল্প নেই। তবে বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং দেশের সামগ্রিক সামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরেকটি লকডাউনের ভার আমাদের অর্থনীতি বহন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

করোনার নতুন বিধিনিষেধ সামনে রেখে দেশে এক ধরণের বিভ্রান্তি ও রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পহেলা জানুয়ারি থেকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চলছে। ফেব্রæয়ারিতে একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়েছে। উন্মুক্ত স্থানে অনেক কিছুই চলছে। সামাজিক অনুষ্ঠানসহ বিয়ে-সাদী হচ্ছে। রাস্তায়, মার্কেটে, শপিংমল, গণপরিবহণে করোনা বিধিনিষেধ, স্বাস্থ্যবিধি ও দূরত্ব মানার কোনো বালাই নেই। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ভার্চুয়ালি বা ঘরের ভেতর সভা-সমাবেশ করা যাবে কিনা, এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঘরের ভেতর ব্যাপক লোকজনের সমাগম করোনা বিস্তারে আরও বেশি সহায়ক। গাদাগাদি করে মানুষের অবস্থান থেকে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা অতিমাত্রায় হতে পারে। বরং খোলা জায়গায় সমাবেশ হলে তাতে কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় থাকে। দেখা যাচ্ছে, নির্দেশনায় কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খোলা রাখা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের টিকা দেয়া সম্পন্ন করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। এ অবস্থায়, শিক্ষার্থী-অভিভাবক মিলে লোক সমাগম হবে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি শিথিল হয়ে যেতে পারে। ১১ দফা নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে লকডাউনের মত কঠোর পদক্ষেপ এড়ানো হয়তো সম্ভব হতে পারে। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা জারি করা হলেও তা কার্যকর করতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে দুই মাস আগে। এ সময়ে দেশের সবচেয়ে জনসম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো অব্যাহত রাখা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি বা নিরাপদ দূরত্ব মানার বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা নির্দেশনা দেখা যায়নি। আর কয়েকদিন পরেই নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সেখানে এখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে নারায়ণগঞ্জ রেডজোনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার রফতানিতে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও শিল্পনগরী নারায়নগঞ্জসহ ঢাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে তা অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনাকে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিবে। এই বাস্তবতার বাইরেও দেশ একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় উপনীত হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো যখন সভা-সমাবেশ করতে শুরু করেছে তখন বিধি নিষেধের নামে সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। বিশেষত, নির্বাচন, বাণিজ্যমেলাসহ সবকিছু খোলা রেখে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সভাসমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি আলোচনায় আসছে। জনসমাগমে সকলকে মাস্ক পরিধান করতে বাধ্য করা এবং গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের মত নির্দেশনা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রেও জারি রাখা যেতে পারে। তা না করে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দেয়া স্বাভাবিক। শিথিল এবং বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা অনেক সময় সাধারণ মানুষকে নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রে আস্থাহীন করে তোলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিতে পারে, তবে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের। এসব কর্তৃপক্ষ যদি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন না করে, তাহলে সব নির্দেশনা উপেক্ষিত থেকে যাবে। এ বাস্তবতায় যেসব বিধিনিষেদের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি করোনা টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং বুস্টার ডোজের চলমান কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৪ পিএম says : 0
If our economy destroyed by corona virus, it will not affect PM and their parties people.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন