শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম কমানো সরকার বিবেচনা করবে

সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্ব বাজারে নিম্নমুখী ধারার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে কি না, সে বিষয়ে সরকার বিবেচনা করবে। জ্বালানি তেলের দাম কমার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কি না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। এটা আমাদের পর্যায়ে এলে আপনাদের জানাতে পারবো। তবে আমার বিশ্বাস, যখন যা করা দরকার সরকার অবশ্যই করবে।

গতকাল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন, জ্বালানি তেলের দাম কতটা ঊর্ধ্বমুখী ছিলো। এখন আমরা নিম্নমুখী দেখতে পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস সরকার সেটি বিবেচনা করবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ নির্ধারণ বিষয়ে একটি প্রস্তাব ছিলো। আমরা কীভাবে রফতানি বাণিজ্য করবো এর নীতি নির্ধারণ করার বিষয়টি প্রস্তাবে আসে। আমরা ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এর খসড়া নীতি নির্ধারণ করেছি, এটা অনুমোদন করে দিয়েছি। আমাদের বিদ্যমান রফতানি বাণিজ্যের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি ৬০ বিলিয়ন মর্কিন ডলার, এটিকে বাড়িয়ে ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। এরজন্য আনুসাঙ্গিক যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলোর জন্য যা যা করা দরকার করবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এ মুহুর্তে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ট্র্যাপের মধ্যে পড়াটা আমাদের জন্য কার্যকর নয়। ২০৪১ সাল পর্যন্ত আমরা যে পরিকল্পনা করেছি, সেখানে বাৎসরিক আমাদের প্রক্ষেপণ এবং বাস্তবায়ন সবকিছু উল্লেখ করা আছে। আমি মনে করি অন্যদের সঙ্গে আমাদের মেলানো যাবে না। যদি ভিয়েতনামের কথা বলেন, তাদের বিনিয়োগ অলমোস্ট আসে বাইরে থেকে। সেখানে আন্তর্জাতিক বাজার আপস অ্যান্ড ডাউন কিছু হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ ইম্প্যাক্টেড হয়। আমাদের দেশে তা উল্টো। আমাদের দেশে আমরা যা করছি নিজেদের বিনিয়োগ থেকে করে আসছি। মূলত লার্জলি আমাদের বিনিয়োগ। ফলে আমাদের ওপর এর ইম্প্যাক্ট আসবে বলে মনে করি না। এদিকে বাজারে দাম ওঠা-নামা করলেও ডলারের রেট খুব বেশি বাড়ার সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ডলারের রেট বাড়ার বিষয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের কিছু ডিফারেন্স (পার্থক্য) আছে, সেটি আমরা স্বীকার করি। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জিনিসপত্রের দাম কমে যায়, আমাদের মূল্যস্ফীতিতে আমদানি মূল্যস্ফীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা বাইরে থেকে মালামাল ক্রয় করি, রেটের কারণে সেই মালামালের দামটা বাড়ে।
তিনি বলেন, যেহেতু রফতানি বাড়ছে, আমদানিও বাড়ছে। আমদানির জন্য সেখানে ফিন্যান্সিং করা লাগে। তাই মার্কেট ওঠা-নামা করবেই। সেটা অনেক বেশি ওঠা-নামা দেখতে পারবো না। আমাদের এখানে রেট বেশি বাড়ার সম্ভবনা নেই।

এছাড়া দেশের আটটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পুনর্ভবা নদীর ৩৩ কিলোমিটার খনন কাজ করাবে সরকার। ১১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে এ সংক্রান্ত পাঁচটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত সাংবাদিকদের তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

তিনি জানান, অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য একটি এবং ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাতটি, বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দুইটি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রস্তাবনা ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১৩টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৭৯৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) থেকে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৮৯ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৭ টাকা এবং ভারত থেকে ঋণ ১ হাজার ২০৫ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ২২১ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকার কনক কনস্ট্রাকশন কোং-এর কাছ থেকে ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ১৬ হাজার টাকায় পুনর্ভবা নদীর পাঁচ কিলোমিটার খনন কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক যৌথ উদ্যোগে (১) মেসার্স তাজুল ইসলাম এবং (২) বেঙ্গল স্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে ২৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ টাকায় পুনর্ভবা নদীর সাত কিলোমিটার খনন কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

অপর এক প্রস্তাবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক যৌথ উদ্যোগে (১) নবারুণ ট্রেডার্স লিমিটেড এবং (২) এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের কাছ থেকে ৩১ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকায় পুনর্ভবা নদীর আট কিলোমিটার খনন কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এস এস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কাছ থেকে ২২ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকায় পুনর্ভবা নদীর সাত কিলোমিটার খনন কাজ ক্রয়ের অনুমোদন এবং যৌথ উদ্যোগ (১) এস এস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং (২) আবদুল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং-এর কাছ থেকে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ৭ হাজার ৬০০ টাকায় পুনর্ভবা নদীর ছয় কিলোমিটার খনন কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সভায় অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবগুলো হলো
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) কর্তৃক হংকংয়ের প্রতিষ্ঠান চিওয় লি শিপইয়ার্ডস লিমিটেডের কাছ থেকে ১৮৮ কোটি ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় দুইটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতিটি ৫০০০ বিএইচপি/৭০টন বোলার্ড পুল) টাগবোট কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হংকংয়ের চিওয় লি শিপইয়ার্ডস লিমিটেডের কাছ থেকে ২২২ কোটি ৮৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৮০ টাকায় দুইটি টাগবোট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সেবা ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন