শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ফেরি সঙ্কটে দুর্ভোগ চরমে

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট

শাহজাহান বিশ্বাস, আরিচা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘাট ও ফেরি সঙ্কটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের স্বাভাবিক ফেরি সার্ভিস। ফলে এসব ঘাটগুলোতে ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে শতশত যানবাহন। ঘাট এলাকার উভয় পারেই মহাসড়কে দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা এবং পাবনা, ইশ্বরদীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬টি জেলার মানুষের। ফেরি পারাপারের জন্য ঘাটে এসে এদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ফেরি পারাপার হতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন দিন করে। এসব যানবাহন শ্রমিকরাও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন যানবাহন শ্রমিকরা। অতিদ্রুত উক্ত নৌরুটে সকল সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসির) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ফেরি লোড-আনলোডের জন্য পদ্মার নদীর এপারে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াতে ৫টি ঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫নং এ ৩টি ঘাট সচল রয়েছে। বাকী ১ ও ২নং ঘাটের কাছে পানি কম এবং লঞ্চ ঘাটের কারণে এ দু’টি ঘাট ব্যবহার করা হচ্ছে না। নদীর ওপারে রাজবাড়ির দৌলতদিয়াতে ৭টি ঘাটের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৫ ও ৭ নং এ ৫টি ঘাট সচল রয়েছে। এর মধ্যে পন্টুন না থাকায় ১ নং ঘাটটি দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না এবং ঘাটে কাছে পানি কমে যাওয়ায় প্রায় এক মাসে আগে ৬ নং ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ঘাট সঙ্কটের কারণে ফেরি লোড-আনলোডে সময় বেশি লাগছে বলে জানিয়েছেন ফেরি চালকরা।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে রো-রো (বড়) ১২টি, ইউটিলিটি (ছোট) ৭টি এবং কে-টাইপ (মাঝারি) আকারের ২টিসহ ছোট-বড় সবমিলে ২১টি ফেরি চলাচল করছিল। হঠাৎ করে গত ২৭ অক্টোবর পাটুরিয়া ঘাটের কাছে আমানত শাহ নামের একটি রো-রো ফেরি দুর্ঘটনায় ডুবে যায়। এরপর কয়েক দফায় উক্ত নৌরুট থেকে রো-রো ফেরি রুহুল আমিন, শাহ আলী ও কেরামত আলী নামের তিনটি ফেরি মেরামতের জন্য নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এ নৌবহর থেকে ৪টি বড় ফেরি কমে গিয়ে বর্তমানে ৮টি বড় ফেরিসহ মোট ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। ফলে চাহিদার তুলনায় ফেরির সঙ্কট রয়েছে।

এদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি যমুনার এপারে মানিকগঞ্জের আরিচায় ১টি এবং ওপারে পাবনার কাজিরহাটে ১টি মাত্র ঘাট নির্মাণ করে এবং ২টি ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এখান দিয়ে পাবনা, ইশ্বরদীসহ উত্তরাঞ্চের মানুষের যাতায়াতে খরচ কম ও সহজ হওয়ায় এসব অঞ্চলের লোকজন এ নৌরুটটি ব্যবহার করছেন। ফেরি সার্ভিস চালু হবার পর থেকেই যানবাহন এবং যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উক্ত এ রুটটি। কিন্তু অদ্যবধিও এখানে ফেরি এবং ঘাট বাড়ানো হয়নি। গত এক সপ্তাহ ধরে একটি মাত্র মাঝারি আকারের ফেরি দিয়ে কোনো রকম চালু রাখা হয়েছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। মাঝে মধ্যে দু’ একটি ফেরি যোগ হলেও তা আবার এখান থেকে অন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে এ নৌরুটে ঘাট ও ফেরি সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে।

গতকাল শুক্রবার আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পণ্যবাহী ট্রাকে পাটুরিয়া ঘাটের টার্মিনাল ফেরি পারের অপেক্ষা রয়েছে। আরিচা ঘাটের টার্মিনাল এলাকা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের থানার মোড় হয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র গেট পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এসব ট্রাক গত বৃহস্পতিবার রাতে আসে ঘাট এলাকায়। আর টার্মিনালে যেসব ট্রাক দেখা গেছে সেগুলো আরো দু’দিন আগে এসেছে ফেরি পারের উদ্দেশ্যে।

ট্রাক ড্রাইভার হাসমত আলী জানান, ঢাকা থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় পাটুরিয়া ঘাটে আসি ফেরি পারের উদ্দেশ্যে। এরমধ্যে একদিন কাটে রাস্তায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে অতিবাহিত করি। শুক্রবার দুপুর ১২টাতেও ফেরি পার হতে পারিনি। কখন পার হবো তাও বলতে পারছি না।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে পানি কম থাকায় দু’টি ঘাট বন্ধ রয়েছে। আর পাটুরিয়া দু’টি ঘাটের একই অবস্থা। আর কাজিরহাটে জায়গা সমস্যার কারণে নতুন করে ঘাট বানানো সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাটের ম্যানেরজার আবু আব্দুল্লাহ জানান, ফেরি ও ঘাটের সঙ্কট রয়েছে। এব্যাপারে আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি খুব তাড়াতাড়িই উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে আরিচা আসবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন