বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কেবল রাজপথে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং এর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ ছির সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও। বাংলা ভাষায় সঙ্গীত রচনার মাধ্যমে বাঙালি জনমনে তীব্র আবেগ গড়ে তুলে। আর এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন রমেশ শীল, আলতাফ মাহমুদ ও আবদুল লতিফসহ আরও অনেকে। ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত উত্তাপকে বাংলা সঙ্গীতের ভূবনে ছড়িয়ে দিয়েছেন এই তিনজন শিল্পী-সংগ্রামী। রাজপথের প্রত্যক্ষ সংগ্রামকারীরাই কেবল ভাষা-সংগ্রামী নন, আমাদের যেসব মহান শিল্পী ১৯৫২’র একুশের ঘটনার পর তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে জনমনে তীব্র আবেগ গড়ে তুলেছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য, যারা ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে তাঁদের শিল্পকর্মের উপজীব্য করে তুলেছিলেন পরবর্তী আন্দোলনসমূহের প্রেরণা যোগানোর জন্য। যার ফলে ভাষা-সংগ্রাম সফলতা অর্জন করেছিল। যখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাধা দেয়া আর একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি চালিয়ে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারের মতো দেশপ্রেমিক নিষ্পাপ মানুষদের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়। তবে পাকিস্তানীরা কেবল তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি।
বরং শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারটিকেও ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যেখানে পুলিশের নির্মম গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ভাষা শহীদরা, সেখানেই গড়া হয় স্মৃতির মিনার। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ শফিউর রহমানের বাবাকে দিয়ে উদ্বোধন করা হয় শহীদ মিনার। তারপর ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি আবার উদ্বোধন করন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। ওইদিনই পুলিশ এসে গুঁড়িয়ে দেয় শহীদ মিনারটি। এইসব করে কোনভাবে শহীদদের স্মৃতি মুছে দিতে পারেনি বাঙালি জাতির মন থেকে। আবার ১৯৫৩ সালে শহীদ দিবসে একইস্থানে প্রথম শহীদ মিনারের আদলে কালো কাপড় আর লাল কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয় শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। অবশেষে ৫৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশায় নির্মিত হয় এই শহীদ মিনার (বর্তমান শহীদ মিনার)। আর এখন চলছে সেই সংগ্রামী ভাষার মাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন