শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভাষা শহীদ ভাষা সৈনিক লও সালাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

মাগো, ওরা বলে/ সবার কথা কেড়ে নেবে/ তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না।/ বলো মা, তাই কি হয়? হয় না। আর তাই মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল বাঙালিরা। এই প্রস্তুতি চলে পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়েই। আজ সেই রক্তে রাঙা ফেব্রুয়ারির দশম দিন। আর কয়েকদিন পরেই ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বায়ান্নর এই দিনে বাঙালির বীর সন্তানেরা রাজপথে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে আদায় করেছিলো মাতৃভাষা বাংলা। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কেবল বাংলাদেশেই মাতৃভাষার জন্য দামাল ছেলেরা সংগ্রাম ও রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করেছে। তবে আমরা এখন ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস পালন করলেও ‹৫২-এর আগে প্রতিবছর ১১ মার্চকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হতো। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে এই মর্মে তৎকালীন পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন সরলমনা বাঙালিরা কল্পনাই করতে পারেনি এই নাজিমুদ্দীনই ৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পূর্বের চুক্তি লঙ্ঘন করে বক্তব্য দেবেন। সেদিন ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক জনসভায় তিনি ঘোষণা দেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের আমজনতা। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয় ধর্মঘট। ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গঠিত হয় ৪০ সদস্যের একটি সর্বদলীয় কর্মপরিষদ।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে এই কমিটির ওপর। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মওলানা ভাসানী, সদস্য ছিলেন আবুল হাশিম, আব্দুল গফুর, সামসুল হক, আবুল কাশেম, আতাউর রহমান খান, খয়রাত হোসেন, অলি আহাদ, আনোয়ারা খাতুন, আব্দুল আওয়াল, শামসুল হক চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুর রহিমসহ আরও অনেকে। এই কর্মপরিষদের দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয় বেগবান, আর বাঙালির মায়ের ভাষা পায় রাষ্ট্রভাষার অধিকার ও মর্যাদা। তবে খুব সহজেই এই অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং প্রথম দিকে পাকিস্তানীরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলো বাঙালি জাতিকে। তাই তারা আরবি হরফে বাংলা লেখানোর অপচেষ্টা করেছিল। বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের বৈঠকে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে অন্য অনেকের সঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহরও সহায়তা আশা করা হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান এ সহায়তা চেয়ে চিঠি লিখেন তাঁকে। এতে বলা হয় সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, পাকিস্তানকে ইসলামী মতে গঠন করতে এবং সেই উদ্দেশ্যে তারা বাংলা ভাষায় উর্দু অক্ষর প্রবর্তণ করতে চান। কিন্তু খুব সঙ্গত কারণেই এ চিঠির কোন জবাব দেননি বাংলা ভাষার পণ্ডিতরা। নিজের ভাবনার কথা তিনি লিখে পাঠান সংবাদপত্রে। আর তার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে মাহমুদ হাসান ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে উল্লেখ করেন। পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে তার মধ্যে নানা রকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এ সময় নিজের পুরনো মতের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এই চিন্তায় বিস্মিত হয়ে প্রতিবাদ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মুস্তাফা নূর উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। একই সময় গঠিত হয় বর্ণমালা সাব কমিটি। জগন্নাথ ও ইডেন কলেজ মিলনায়তনেও প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। এ অবস্থায়ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় আরবি হরফে লেখা বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দানের জন্য ২০টি কেন্দ্র খোলা হয়। এ সময় উর্দু হরফে বাংলা বই লিখে দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের এই অপচেষ্টা সফল হয়নি। বাঙালির বীর সন্তানেরা তাদের এই চেষ্টা রুখে দেয়। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন