অসংখ্য ভাষা আছে পৃথিবীতে। কিন্তু মায়ের মুখে শোনা ভাষাটির প্রতি দুর্বলতা সহজাত। এ ভাষাতে মনের ভাব প্রকাশ করতে শেখে শিশু। ফলে মায়ের ভাষার অমর্যাদা কেউ মানতে পারে না। যেমন পারেনি বাঙালি বীর সন্তানেরা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিল তাঁরা। ইতিহাসে নাম লিখিয়েছিল বরকত, শফিক, রফিক, সালাম, জব্বারেরা। তাঁদের রক্তের বিনিময়ে নতুন প্রাণ পায় বাংলা ভাষা। তবে এখানেই শেষ নয়। নতুন করে আন্দোলন শুরু হয় সার্বিক মুক্তির জন্য। অধিকারের দাবিতে স্বোচ্চার হয়ে ওঠা বাংলা পাকিস্তানীদের কপালে চিন্তার বলি রেখা টেনে দেয়।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আজ ১৪তম দিন। আর মাত্র সাত দিন পরেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। যেদিন বাঙালি বীর সন্তানরা ভাষার দাবিতে রাজপথে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে আদায় করে ছিল মাতৃভাষার দাবি। ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে। তবে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার দাবিটি প্রথম উপস্থাপন করেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত বাঙালি গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য একটি বিল আনেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ বাঙালি পার্লামেন্ট সদস্যদের একাংশ এর পক্ষে সমর্থন দিলেও মুসলিম লীগের এমপিরা এর বিরোধীতা করে। ফলে বাতিল হয়ে যায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উত্থাপিত এই প্রস্তাবটি। তার পরেও দমে যাননি ধীরেন্দ্রনাথ। তিন তিন বার বিভিন্ন সংশোধনীসহ বিলটি পুনরায় উত্থাপন করেন। কিন্তু প্রতিবারই একই ভাগ্য বরণ করে এই প্রস্তাবটি। মুসলিম লীগের তীব্র বিরোধীতার মুখে বাতিল হয়ে যায় তার প্রস্তাবটি।
এর পর ৪ থেকে ৭ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠাকে সামনে রেখে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির শীর্ষমুখদের সমন্বয়ে গঠিত হয় স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি’। এ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করে। স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটির উদ্যোগে ১১ মার্চ ১৯৪৮ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এভাবেই শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্বটি। যার ফলে ধীরে ধীরে বাংলা ভাষার পক্ষে সমর্থন আসতে থাকে সাধারণ মানুষের। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন