ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় প্রকাশিত হয়েছে। বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর গতকাল (বুধবার) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশিত হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)র কৌঁসুলি খুরশিদ আলম খান।
গতবছর ৯ মার্চ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী মো. সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেয়া ১০ বছরের কারদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
রায়ে জরিমানার টাকা অনাদায়ে হাজী মো. সেলিমকে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। আত্মসমর্পণ না করলে জামিন বাতিল করে হাজী মো. সেলিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে নির্দেশও ছিল হাইকোর্টের। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রায়ের আগে বিচারপতিদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
এদিকে হাইকোর্টের এ রায় কার্যকর হলে সংবিধান অনুযায়ী হাজী মোহাম্মদ সেলিমের এমপি পদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইন প্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এমপি পদে থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর ৫ বছর পর্যন্ত তিনি আর এমপি হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। আমি মনে করি এটি তার (হাজী সেলিম) নৈতিক স্খলন। তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
এর আগে গতবছর ৯ মার্চ হাইকোর্ট রায় ঘোষণার পর খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালত ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুদক এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই অভিযোগে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডও বহাল রেখেছেন। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলা হয়েছে। যেসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ সাজা দেয়া হয়েছে সেসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে হবে।
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতে থাকা যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেছিলেন উচ্চ আদালত। সে আদেশ অনুসারে নথি আসার পর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন