অভিনব কায়দায় শরীরের পাকস্থলীতে করে ইয়াবা বহনের সময় ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ সদস্যরা। পরে একটি হাসপাতালে নিয়ে তাদের শরীরের পাকস্থলী থেকে
২৩ হাজার ৯৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদরের আমতলী বিশ্বরোড এলাকায় সোমবার রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব ওই ৯ জনকে আটক করে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর শাকতলা র্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আটক আসামীদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
আটকরা হলেন-কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে এইচএসসি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ তোফায়েল আহমেদ (১৯), ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার দত্তের বাজার গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ মিনহাজুল ইসলাম রিফাত (২২), পটুয়াখালী সদর থানার পশুরবুনিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে এসএসসি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ সোহেল (২১), নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পিজাহাতি গ্রামের কামরুল হাসানের ছেলে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী মোঃ মিতুল হাসান মাহফুজ (২২), কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মাজাহারুল ইসলামের ছেলে এইচএসসি পাশকৃত মোঃ আশিকুল ইসলাম (১৯), গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার আমবাগ (কোনাবাড়ী) গ্রামের মৃত মাসুদ ইসলামের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ সিয়াম ইসলাম (১৯), ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাকশি (পাঠানবাড়ী) গ্রামের ফখরুদ্দিন পাঠানের ছেলে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী মোঃ রিশাত পাঠান (২২), ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার নয়াবাড়ী গ্রামের মোঃ আসাদ মিয়ার ছেলে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী মোঃ গোলাপ (২২) এবং ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাগশি গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ সেলিম (২২) ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়,গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৯ জনকে একটি বাস থেকে আটক করা হয়। এরপর স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে তাদেগর শরীর এক্সরে করলে প্রত্যেকের পেটে ইয়াবার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ পদ্ধতিতে তাদের পেটের ভেতর থেকে ২৩ হাজার ৯৯০ পিস অক্ষত ইয়াবা ও আনুমানিক ৪০০ পিস ভাঙ্গা ইয়াবা বের করা হয়।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে জানায়। সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে তারা এ পথে নেমেছে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
এদিকে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী মাদক পরিবহনের কাজে কারা তাদের এপথে এনেছে এব্যাপারে জানায়,
ময়মনসিংহের জনৈক এক বড় ভাই মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত এবং এ পদ্ধতি অনুসরন করেই সে টেকনাফ থেকে ইয়াবা বহন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত। তার গ্রুপের কয়েকজন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে সে এলাকার তরুণদের টার্গেট করে এবং প্রথমে শিক্ষার্থী সেলিমকে ম্যানেজ করার পর সেলিমের মাধ্যমে রিফাত, গোলাপ, রিশাদ, তোফায়েল ও আশিককে এ কাজে আসতে বাধ্য করে। অপরদিকে জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর মহাখালীর বন্ধুর মাধ্যমে প্রথমে সোহেলকে এবং সোহেলের মাধ্যমে মিতুল ও সিয়ামকে মাদক পরিবহনের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়। প্রথমে তাদেরকে গাঁজা ও ইয়াবা সেবনের জন্য ফ্রি সরবরাহ করা হয় এবং মাদকের আসরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তাদেরকে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়।
অপরদিকে মাদকাসক্ত হয়ে এই তরুণেরা মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্য জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর দেয়া প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথম পেটের ভিতরে করে ইয়াবা বহন করে সফলভাবে তা ডেলিভারী দিতে সক্ষম হয় তারা। তবে তাদেরকে প্রাপ্ত টাকা না দিয়ে অর্ধেক টাকা ট্রাক্স হিসেবে রেখে দেয় জনৈক মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই এই তরুণরা এ কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পূর্বের কাজের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুনরায় এ কাজ করতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।
ইয়াবা বহনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আটক তরুণরা র্যাবকে জানায়- মাদক কারবারীদের নির্দেশে তাদের আব্দুল্লাপুরের একটি বাস কাউন্টারে যেতে বলা হয়। সেই কাউন্টারে আগে থেকেই উক্ত তরুণদের জন্য কক্সবাজার জেলার টেকনাফগামী বাসের টিকিট কেটে রাখা হয়। বাস টেকনাফ গিয়ে থামলে সেখানে থাকাজনৈক মাদক কারবারী তাদের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় এবং হোটেলের যে কক্ষে তাদের রাখা হয় সে কক্ষটি সারাদিন বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। সন্ধ্যা নাগাদ জনৈক মাদক কারবারীর দুই থেকে তিনজন লোক হোটেলে এসে ওই তরুণদের সাথে দেখা করে এবং ইয়াবা পেটে বহন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে প্রথমে কলার রস দিয়ে খেজুরের মতন ছোট ছোট পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবার পোটলাগুলো পিচ্ছিল করে তারা গিলে ফেলে। এরপর নাইটকোচে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পথে সার্বক্ষণিক মাদক কারবারীরা তাদেরকে নির্দেশনা দিতে থাকে। মাদক কারবারীদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইয়াবাগুলো কখনো নরসিংদী,কখনো আশুলিয়া আবার কখনো মহাখালীতে নির্ধারিত স্পটে মাদক কারবারীদের নিকট পৌছে দিতে হয়।
আটকরা র্যাবকে আরো জানায় গত এক বছরে অসংখ্যবার তারা এ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা এনেছে। পারিবারিক দৈন্যদশা, বেকারত্ব ও মানসিক অবসাদের কারণে মাদক কারবারীদের ব্লাকমেইলিংয়ের ফাঁদে পা দিতে হয়েছে তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, রাজধানী ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন আরো কয়েকটি তরুণ শিক্ষার্থীদের গ্রুপ এ পন্থায় মাদক কারবারীদের নির্দেশনায় ইয়াবা আনা নেয়া করে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন