শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাজ চলছে বিরতিহীন

মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমন-নির্গমন ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

মোংলা বন্দরে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা চলছে আমদানি রফতানির কাজ। করোনার সাময়িক মন্দাভাব কাটিয়ে বন্দরে বিরাজ করছে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। বেড়েছে জাহাজ আগমন-নির্গমন সংখ্যা। অন্যদিকে, গত ১২ বছরে ১৫টি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং কাজে এসেছে গতিশীলতা। ৯টি বড় প্রকল্পের কাজ এ মুহুর্তে চলমান রয়েছে। প্রকল্প গুলোর কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা আরো কয়েক গুন বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বের যে কোনো আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরের প্রায় সকল সুযোগ সুবিধাই এখানে বিদ্যমান রয়েছে। তাই এ বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্র বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেড়েছে।
চলতি ২০২২ সালে মোংলা বন্দর ৭১ বছর এ পা দিয়েছে। ৯০ দশকে মোংলা সমুদ্র বন্দর (ডেট পোর্ট) অর্থাৎ মৃত বন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার। সে সময় মোংলা বন্দরে কোনো কোনো মাসে জাহাজশূন্য পড়ে থাকত। প্রতি অর্থবছরে ১শ’ থেকে ৩শ’ কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান দেয়ার নজিরও এ বন্দরের রয়েছে। ওই সময় কাজ হারিয়ে শতশত শ্রমিক মোংলা বন্দর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বন্দর সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছিল। তারা এখন আবার বন্দরে ফিরে এসেছে। রাত দিন ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে চলছে পণ্য আমদানি রফতানির কাজ।
মোংলা বন্দরকে উজ্জীবিত করতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিক ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২১ সালের আগেই ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হয়। বর্তমান সরকারের সময় এবং উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা হিসাবে (জিওবি অর্থায়নে) এবং বরাদ্দে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা প্রধান মো. জহিরুল হক জানান, ২০০৯ সালের মে মাস হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরো ৯টি চলমান প্রকল্পের মধ্যে ৩টির কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের সমাপ্তি বন্দরের কাজে গতিশীলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে বন্দরের অভ্যন্তরে জেটি এলাকায় কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ‘যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে মোট ৭৫টি ইকুইপমেন্ট ক্রয় করা হয়েছে যা বন্দরের সমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বন্দরে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় আউটার বারে ড্রেজিংয়ের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে এবং ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয় ইনার বারে ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আউটারবারে ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হওয়ায় মোংলা বন্দরের প্রথম সীমানা বঙ্গোপসাগর মোহনা অ্যাংকারেজে বয়া থেকে ইতোমধ্যে ৯ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা সম্ভব হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা (বিএন) জানান, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সারাদেশে যখন ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল তখন মোংলা সমুদ্র বন্দরে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৯৭০টি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন ঘটেছে। যার মাধ্যমে ১১৯ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কার্গো, ৪৩ হাজার ৯৫৯ রিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা এবং পণ্য আমদানি-রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। যাতে এক সময়ের লোকসানের স্থানে ৩৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা বন্দরের পূর্বের ৭০ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্জন করেছে। পরিবেশবান্ধব ও ব্যবসায় সাফল্যের সম্ভাবনাময় মোংলা সমুদ্র বন্দর। তিনি আরও বলেন, বন্দর কেন্দ্রিক অন্যান্য অবকাঠামোসহ পদ্মা সেতু নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মোংলা বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। যার ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যাবে। এ বিবেচনায় ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য মোংলা বন্দরকে আরো সক্ষম করে গড়তে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Foyaz Ahmed ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:১৪ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো খবর।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:১৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতি ফিরে পাক সেই আসা রইলো।
Total Reply(0)
তাসনোবা তামান্না ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:১৫ এএম says : 0
আমদানি রফতানি স্বাভাবিক রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন