শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুরস্কের প্রভাব ক্রমবর্ধমান

উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্ব যখন একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট পর্যবেক্ষণ করছে, তখন আরেকদিকে তুরস্কের বৈদেশিক নীতিতে যুগান্তকারী উন্নয়ন গতিশীল হচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরে তাকে জাঁকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানানোর পর সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ ৯ থেকে ১০ মার্চ তুরস্ক সফর করতে যাচ্ছেন।

আবুধাবি থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় এরদোগান জানিয়েছিলেন যে, সউদী আরবের সাথেও ইতিবাচক সংলাপ চলছে। আগামী মাসের আন্টালিয়া কূটনীতি ফোরাম উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে তুরস্কের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ নীতিগুলোর বিষয়ে একটি আভাস দেবে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ তুরস্কের বিরুদ্ধে অবরোধ ভাঙার সমান।
এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তুরস্ক পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুর্কিদের কোণঠাসা করার লক্ষ্যে গ্রীস, গ্রীক সাইপ্রিয়টস, মিসর, ইসরাইল এবং অন্যান্য উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচেষ্টাগুলোকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হল, তুরস্কের এই স্বাভাবিককীরণের নীতি উপসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যকে বদলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।

তুরস্ক তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, শুধু কথা নয়, সঠিকভাবে যুক্ত থাকলে দেশটি স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রণয়ন করতে পারে। তুরস্ক ২০১৬ সালে প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল, যখন দেশটি সিরিয়ায় দায়েশ এবং ওয়াইপিজি/পিকেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
পরের বছর দেশটি কাতার অবরোধের সময় দোহায় একটি সম্ভাব্য অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করে। ২০১৯ সালে তুরস্ক লিবিয়ার সাথে একটি ধারাবাহিক চুক্তি সমাপ্ত করে এবং ত্রিপোলিতে গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল একর্ড (জিএনএ) সরকারকে সফলভাবে সহযোগিতা করে। আর তা স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী শক্তি হিসাবে তার ভূমিকাকে সুসংহত করেছে।

সর্বশেষ, তুরস্ক আজারবাইজানকে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলমান কারাবাখ সঙ্কটে সাহায্য করার মাধ্যমে তার প্রভাবকে অবিসংবাদিত করে তুলেছে। সে কারণে বর্তমানে প্রযুক্তি, শক্তি, সরবরাহ এবং প্রতিরক্ষাসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রে তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত তার তুর্কি-বিরোধী নীতি পরিত্যাগ করেছে।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের লজ্জাস্কর ব্যর্থতা এবং মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি এবং সেইসাথে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-যুগের নিষেধাজ্ঞার আংশিক প্রত্যাহার মার্কিন মিত্রতার বিশ^স্ততার বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক সরকারকে শঙ্কিত করে তুলেছে। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র সউদী আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হুথি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

ইসরাইল সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবুও এই তিনটি সরকারই জানে যে, এসব ব্যবস্থা ইরানকে মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট হবে না। তাদের অনুমান, পারমাণবিক চুক্তির অধীনে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত তেহরান তার আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষাকে শক্তিশালী করতে এবং তার কার্যক্ষমকে খুব সহজেই বিস্তৃত করতে তার মিত্রদের ব্যবহার করতে পারে।
সেন্টার ফর ইরানিয়ান স্টাডিজ (আইআরএম) এর প্রেসিডেন্ট হাক্কি উইগুর বলেছেন যে, তেহরান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সাথে সিরিয়া ও ইরাকে তার উপস্থিতি জোরদার করতে তার চুক্তি ব্যবহার করেছে। অতএব, ইরানিরা উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রভাব সুসংহত করতে নতুন চুক্তিটি ব্যবহার করলে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

রাশিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চীনও উপসাগরীয় অঞ্চলে সাহসী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী। ইসরাইল এই অঞ্চলে শক্তি এবং নিরাপত্তার শূন্যতা পূরণ করতে সক্ষম নয়, যেখানে শক্তির মহা প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। ইরান তার প্রভাব বাড়ানোর জন্য একটি নতুন এবং উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পটভূমিতে, ‘স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও নির্ভরতা প্রদানকারী’ হিসেবে তুরস্ক ক্রমেই উপসাগরীয় অঞ্চলের ভারসাম্য রক্ষাকারী সবচেয়ে প্রভাবশালী খেলোয়াড় হয়ে উঠছে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Anamul Hoque ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৫ এএম says : 0
প্রায় ৬শত বছর অর্ধ পৃথিবী শাসন করা অটোমান সাম্রাজ্য যদিও আর হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবেনা,,তবে এরদোয়ানের বর্তমান ইসলাম রক্ষনশীল রাজনীতি কিন্তু ঐ দিকেই যাচ্ছে যে কারণে পশ্চিমারা ক্ষুব্ধ,,, আল্লাহ তুরস্কের মাধ্যমে নির্যাতিত মুসলিমদের মুক্ত করো,,আর তুরস্কের জন্য রইলো দোয়া আর ভালোবাসা বিশেষ করে নয়া সুলতান এরদোয়ানের জন্য
Total Reply(0)
Kamal Hussain ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৬ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ, অচিরেই এরদোয়ান মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। তুরস্কের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।
Total Reply(0)
Shahid Uzzaman ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৬ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ।
Total Reply(0)
Arif ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৬ এএম says : 0
২০২৩ সালে লুজান চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তুরস্ক আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Aminul Islam ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৬ এএম says : 0
তুরস্কের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।
Total Reply(0)
Omar Farook Sharif ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:১৭ এএম says : 0
শুভকামনা তুর্কিদের।
Total Reply(0)
Ahmad ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:০৯ এএম says : 0
May Allah bless help and live long Dear Ardoan.
Total Reply(0)
Nurul Azim ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৫২ পিএম says : 0
মুসলিম বিশ্বের জন‍্য তুরস্কের শক্তির পয়োজন এরদোয়ানের জন্য দোয়া রইল
Total Reply(0)
Azim ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৫২ পিএম says : 0
মুসলিম বিশ্বের জন‍্য তুরস্কের শক্তির পয়োজন এরদোয়ানের জন্য দোয়া রইল
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন