বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মধ্যমপন্থী উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

মহান রাব্বুল আলামীন উম্মতে মোহাম্মাদীকে মধ্যমপন্থী উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত করেছিÑ যাতে করে তোমরা মানবমণ্ডলির জন্য সাক্ষ্যদাতা হও এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা হন। (সূরা বাকারাহ : ১৪৩)। এই আয়াতে কারীমায় ‘ওয়াছাত’ অর্থাৎ মধ্যমপন্থী শব্দটির মাঝেই রয়েছে সমুজ্জল এক দিকে নির্দেশনা এবং ‘শুহাদা’ শব্দের মাঝেও রয়েছে সত্যের এক বাস্তব রূপ। আসুন, এবার সে দিকে নজর দেয়া যাক।

আল কোরআনে ‘ওয়াছাত’ শব্দটি পাঁচটি রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন : (ক) ওয়াছাতান রূপে সূরা বাকারাহ-এর ১৪৩ নং আয়াতে। (খ) আওছাতি রূপে সূরা মায়েদাহ-এর ৮৯ নং আয়াতে। (গ) আওছাতুহুম রূপে সূরা কলম-এর ২৮ নং আয়াতে। (ঘ) ওয়াছাতনা রূপে সূরা আদিয়াত-এর ৫নং আয়াতে। (ঙ) আর আল বুছতা রূপে সূরা বাকারাহ-এর ২৩৮ নং আয়াতে।

‘ওয়াছাত’ শব্দের ব্যবহারিক অর্থ হলো-উৎকৃষ্ট বিষয়, মধ্যমপন্থী ও ন্যায় পরায়ন। এই তিনটি অর্থই ওয়াছাত শব্দটির অর্থ ও মর্মকে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেছে। এতদপ্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন হযরত নূহ (আ.) ও তাঁর উম্মাতকে আল্লাহপাকের দরবারে হাজির করা হবে। তখন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত নূহ (আ.)-কে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি আবার বাণী পৌঁছিয়েছ? তিনি বলবেন, হে আমার পরওয়ারদিগার! হ্যাঁ, আমি পৌঁছিয়েছি।

তখন আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর উম্মতকে জিজ্ঞেস করবেন : নূহ কি আমার বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছে? তারা বলবে, না, আমাদের নিকট কোনো নবীই আগমন করেননি। তখন আল্লাহ তায়ালা নূহকে বলবেন, তোমার জন্য সাক্ষ্য দিবে কে? তিনি বলবেন, হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর উম্মত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তখন আমরা সাক্ষ্য দেব। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহ পাকের বাণী পৌঁছিয়েছেন। আর এটিই হলো আল্লাহ তায়ালার বাণী-আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত করেছি, যেন তোমরা মানব জাতির ওপর সাক্ষী হও। আর ‘আল ওয়াছাত’ শব্দের অর্থ হলো ন্যায়পরায়ণ। (সহীহ বুখারী : ৪/৩৩৩৯)।

অনুরূপভাবে সকল নবীগণের উম্মতেরা তাঁদের প্রচারকার্য, চেষ্টা ও পরিশ্রম, সাধ্য সাধনাকে অস্বীকার করে উচ্চ স্বরে বলতে থাকবে-দুনিয়ার জীবনে আমাদের নিকট কোনো নবী ও রাসূল আগমন করেননি, কোনো আসমানী কিতাবও পৌঁছেনি। তখন উম্মতে মোহাম্মাদী পয়গাম্বরগণের পক্ষে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে উপস্থিত হবেন এবং এই সাক্ষ্য প্রদান করবেন যে, নবী ও রাসূলগণ সকল যুগেই আল্লাহ পাকের নিকট হতে প্রাপ্ত কিতাব ও হেদায়েত তাদের উম্মতগণের নিকট পৌঁছিয়েছেন এবং তাদেরকে হেদায়েতের পথে আনয়ন করার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছেন।

তখন পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের অবাধ্য উম্মতেরা উম্মতে মোহাম্মাদীর সাক্ষ্যে আপত্তি উত্থাপন করে বলবে আমাদের যুগে উম্মতে মোহাম্মাদীর কোনো অস্তিত্বই ছিল না, তাদের নাম নিশানাও ছিল না। আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদের জানার বা দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না। সুতরাং তাদের সাক্ষ্য আমাদের ব্যাপারে কেমন করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

এ সময়ে উম্মতে মোহাম্মাদী এই উত্তর প্রদান করবে যে, যদিও পূর্ববর্তী উম্মতগণের সময়ের আমাদের অস্তিত্ব ছিল না, তবুও আমাদের নিকট তাদের অবস্থার কথা, তাদের যাবতীয় তথ্যাবলি আল কোরআন তুলে ধরেছে এবং বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) তাদের অবস্থার কথা বিবৃত করেছেন। তাই, আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর বাণী ও আল কোরআনের ওপর সর্বাত্মক ঈমান আনয়ন করেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেয়া তথ্য এবং আল কোরআনের দিক নির্দেশনা আমাদের চাক্ষুষ দেখার চাইতেও অধিক সত্য। অতএব আমাদের দেয়া সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহণ যোগ্যতার দাবি রাখে। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) উপস্থাপিত হবেন এবং উম্মতের সাক্ষ্যের সমর্থন করবেন এবং আল্লাহপাক তা কবুল ও মঞ্জুর করে নেবেন। উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় এই বিশেষত্বটির কথাই তুলে ধরা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Riadul Islam Hridoy ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:১৫ এএম says : 0
প্রত্যেক কাজেই মধ্যম পন্থা অবলম্বন করার গুরুত্ব ইসলামে অনেক বেশি। যে কোনা কাজে বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি ইসলামে কোনো স্থান নেই। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কাজে মধ্যমপন্থা বজায় রাখার উপর জোর তাগিদ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
Abdullah Al Mamun ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:১৫ এএম says : 0
শারীরিক পরিশ্রমে, মস্তিষ্কের পরিচালনায়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে, পানাহারে, ঘুম ও বিশ্রামে, দুঃখ-কষ্টে, হাসি-খুশিতে, আনন্দ-উল্লাসে ও ইবাদত-বন্দেগিতে, চলাফেরা ও কথা-বার্তাসহ সার্বিক দিক থেকেই বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি না করে মধ্যমপন্থা বজায় রেখে কাজ করাই হাদিসের নির্দেশনা এবং মুমিনের অন্যতম গুণ।
Total Reply(0)
Bazlur Rashid ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:১৭ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও সব কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। তিনি উম্মতে মুহাম্মাদিকেও মধ্যমপন্থা বজায় রেখে এভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'সচ্ছল অবস্থায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা কতইনা সুন্দর! দারিদ্র্যের সময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কতইনা ভালো! ইবাদত-বন্দেগিতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কতইনা উত্তম!' (মুসনাদে বাযযার, কানজুল উম্মাল)
Total Reply(0)
Chowdhury Rakib ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:১৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে হাদিসের নির্দেশনা মেনে আমল-ইবাদতসহ সব কাজ করার তাওফিক দান করুন। উত্তম জীবন-যাপন ও ইবাদত-বন্দেগিতে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Deloar Hossain ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:১৮ এএম says : 0
একজন মুসলিমের সৌন্দর্যই হলো তার ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা ও উদারতা। মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী ব্যক্তিরা সব কিছুতে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। মধ্যমপন্থা অবলম্বনের মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ রয়েছে। আমাদের রাসূল সা: সব পরিবেশ পরিস্থিতি সবরের সাথে মোকাবেলা করতেন। যার ফলে হজরত রাসূল সা:-এর জমানায় মুসলমানেরা সব ক্ষেত্রে সাফল্যে লাভ করত। উগ্রতা, হিংস্রতা, অহঙ্কার ও ক্রোধ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মধ্যমপন্থা হলো ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে সাফল্যে লাভের একমাত্র চাবিকাঠি।
Total Reply(0)
Mohammad hanif ৪ মার্চ, ২০২২, ১২:১০ পিএম says : 0
হাদিসের উদ্ধৃতি সঠিক
Total Reply(0)
মোঃ আনারুল ইসলাম ১১ মার্চ, ২০২২, ২:৩৫ পিএম says : 0
ভালো
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন