সম্প্রতি অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী বলেছেন, আমাদের মতো পরিশ্রমী শিল্পী পৃথিবীর কোথাও নেই। এ ব্যাপারে আমরা হলিউডের শিল্পীদেরও চ্যালেঞ্জ করতে পারি। তার এই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে অভিনেতা-নির্মাতা মীর সাব্বির বলেছেন, মেহজাবীন সঠিক কথা বলেছেন। এই কথা আমি আরও ১০ বছর আগে বলেছি। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে মীর সাব্বির লিখেছেন, মেহজাবীন চৌধুরী ওয়েব সিরিজ সাবরিনার মুক্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের দুই-তিন দিনে একটি নাটকে কাজ শেষ করে পরের দিন আরেকটি নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিতে হয়। আমরা অনেক বেশি পরিশ্রম করতে পছন্দ করি, অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আমার মনে হয়, আমাদের মতো পরিশ্রমী শিল্পী পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা হলিউডের শিল্পীদেরও চ্যালেঞ্জ করতে পারি। সাব্বির বলেন, মেহজাবীন হলিউডের শিল্পীদের সঙ্গে যে তুলনা করেছে সেটা কেবলই উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছে। আর সে যে বিষয়গুলো বলেছে তা যৌক্তিক। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় কাউকে সুন্দর লাগছে বুঝাতে বলে থাকি তোমাকে চাঁদের মতো সুন্দর লাগছে। প্রকৃত অর্থে কেউ চাঁদের মতো হয় না। আমরা উপমা হিসেবে বলে থাকি কথাগুলো। মেহজাবীনের বিষয়টিও তাই। আমরা সবাই এটা অন্তত জানি, হলিউড বিশ্বের বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি। সেখান থেকে বিশাল বাজেটে বড় বড় সিনেমা হয়। তাদের সেই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের শিল্পীদের পরিশ্রমের বিষয় শুধু তুলনা করা হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রি নয়। সাব্বির বলেন, মেহজাবীন যা বলেছে তা আমি আরও দশ-বারো বছর আগে বলেছি। আমরা যখন নাটক-সিনেমায় শুটিং করি তখন বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকে। কখনো আমাদের দুই দিনের মধ্যে শুটিং শেষ করতে হয়। কখনো দেখা যায় শুটিং বাড়িগুলো ঠিক থাকে না। সাধারণত যেসব বাড়িতে আমরা শুটিং করি তা শুটিংয়ের জন্য নির্মিত না। মানুষের বসবাসের বাড়িতে শুটিং করি। আমরা রাস্তা-ঘাটে অব্যবস্থাপনা, নানা জটিলতা নিয়ে যেখানে-সেখানে শুটিংয়ের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ি। চাইলেই সুন্দর একটা পার্কে শুটিং করতে পারি না। দেখা যায় পার্কের অনেক মানুষ বিব্রত হয়। বিপরীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে পার্কের সময় নির্ধারণ করা হয়, এই সময় শুধু শুটিং হবে; অন্য কিছু না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ও পরিশ্রমের মধ্যে কাজ করতে হয়। মীর সাব্বির বলেন, ছোট বেলায় শুনেছি এক সময় গ্রামের শুটিং হতো মানিকগঞ্জে মনু মিয়ার বাড়িতে। তারপর শুনেছি পুবাইলে শুটিং হয়। আর এখন আশুলিয়ায় শুটিং করা হয়। এসব জায়গা কারা তৈরি করেছে? একেক জন পরিচালক গিয়ে বাড়ির মালিকদের অনুরোধ করে শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে। এভাবে নানা জটিলতার মধ্যে আমাদের শিল্পীদের কাজ করতে হয়। তিনি বলেন দশ-বারো বছর আগে বলেছিলাম, আমরা যত কষ্ট করে অল্প সময়ে নাটক করি, আবার সেই নাটক শেষ করে আরেকটা নাটক শুরু করি, এই যে একটি নাটক শেষ হতেই আরেকটি শুরু করার প্রক্রিয়া তা কেবলই ভালোবাসা থেকে। ভালোবাসা ছিল বলেই পেশা হিসেবে নিয়েছি আমরা। আর যখন পেশা হিসেবে নেয়া হলো তখন পেশার জন্য প্রতিনিয়ত এক জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় মুভ করতে হচ্ছে। এটা কিন্তু কেবলই আমরা প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী বলেই সম্ভব। তিনি বলেন, পৃথিবীতে বোধ হয় এমন কোনো শিল্পী বা কলাকুশলী নেই, যারা একটি নাটক শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি কাজ শুরু করতে পারে। তাহলে আমরা কীভাবে পারি? আমরা প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী বলেই পারি। এছাড়াও পরিস্থিতির শিকারও বটে। অবশ্য কোনো উপায়ও নেই। এ পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হয়। এখানে শিল্পী-পরিচালক বা সংশ্লিষ্ট কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। শিল্পী যদি পরিচালককে বলে সিস্টেম ঠিক নেই তাহলে পরিচালক বলবে, আমাকে প্রযোজক যে বাজেট দিয়েছে সেই বাজেটে কাজটি এভাবে করতে হচ্ছে আমাকে। আবার প্রযোজক বলবে, আমার বাজেট এত, আমাকে চ্যানেল এই টাকায় কাজটি করতে বলেছে, চ্যানেল বলবে মার্কেটিং থেকে অনেক টাকা পাই না বলেই এই বাজেট দিয়েছি। অন্যরা যদি পারে তাহলে আপনি পারবেন না কেন। কাজেই এখানে কাউকে দোষারোপের সুযোগ নেই। আর সেই জায়গা থেকেই হয়তো আজকের প্রজন্মের মেহজাবীন কথাগুলো বলেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন