চৈত্রের অস্বাভাবিক গরমে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় গত কয়েকদিনে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআ,বি) হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালটির তথ্য মতে শুক্রবার ২৫ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ২৬ মার্চ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে ১ হাজার ৪০১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে আইসিডিডিআর,বির মিডিয়া ম্যানেজার তারিফ হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসা চললেও যায়গার সংকুলান না হওয়ায় অনেক রোগী এসে ফেরত যাচ্ছেন। ফেরত যাওয়া রোগীরা শিশু হাসপাতাল ও রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন।
আইসিডিডিআর,বি থেকে জানানো হয়, শুক্রবার (২৫ মার্চ) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ১ হাজার ১৩৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরপর রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত নতুন ৪৮ জন, ২টা পর্যন্ত ৭৪ জন, ৩টা পর্যন্ত ৯৮ জন, ৪টা পর্যন্ত ১২০ জন, ভোর ৫টা পর্যন্ত ১৪০ জন, ৬টা পর্যন্ত ১৬১ জন, ৭টা পর্যন্ত ২০২ জন এবং সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৬৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী ও উত্তরা থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে।
হাসপাতালটির মিডিয়া বিভাগ সূত্র জানায়, আগের দুই দিনে হাসপাতালটিতে ২ হাজার ৪০৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এক হাজার ১৭৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআর,বি-তে এসে ভর্তি হয়েছেন। তারও আগের দিন বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ২৩৩ জন রোগী ভর্তি হন। এর আগে গত বুধবার ২৩ মার্চ হাসপাতালটির মিডিয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছিল, গত ৭ দিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এরকমই একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, যা একেবারে মহামারির রূপ ধারণ করে। সেটি স্থায়ী হয়েছিল মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দৈনিক ১২০০ থেকে ১৩০০ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসছেন। যাদের অধিকাংশকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরতরা।
জানতে চাইলে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বছরে দুইবার বাড়ে। শীতের সময় আর গরমের সময়ে। সাধারণত প্রতিদিন সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ রোগী থাকলেও রোগী বাড়লে সর্বোচ্চ এক হাজারের মতো হয়। কিন্তু এবারই এটা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
হঠাৎ ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে ডা. বাহারুল আলম বলেন, গরমে ওই জীবাণুটি অনুকূল পরিবেশ পায়। এই সময়ে জীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। তাছাড়া গরমের সময় অনেকে অনিরাপদ পানি পান করেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আমাদের পরামর্শ হলো, বাইরের কোনো খাবার খাবেন না। যেখান সেখান থেকে পানি খাবেন না। পানি যদি খেতে হয় তাহলে সেটি ফোটানো হতে হবে। অন্যথায় নিশ্চিত হতে হবে পানি জীবাণুমুক্ত। সেইসঙ্গে করোনাকালীন সময়ের দুই বছরে হাত ধুয়ার যে একটা ভালো অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, এটা বজায় রাখতে হবে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আইসিডিডিআর,বি-র ঢাকা ও চাঁদপুরে অবস্থিত মতলব হাসপাতাল প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে।
এদিকে শনির আখড়ার রয়েল ক্লিনিকে ভর্তি এক রোগীর পরিবার জানান, তারা রোগী নিয়ে মহাখালির আইসিডিডিআর,বিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু যায়গার সংকুলান না হওয়ায় তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সিট না থাকায় অনেক রোগীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে। ফেরত রোগীদের রাজধানীর বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন