তারাবি, নামাজ
শুরু হচ্ছে মুসলমানদের ইবাদতের মওসুম। আরবি মাসের নবম মাস রমজান। রমজানের ফরজ রোজা পালন করা ছাড়াও অনেক আমল রয়েছে। রমজানের বিশেষ আমলের মধ্যে অন্যতম হলো তারাবির নামাজ। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি রমজানে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে, আল্লাহ তাঁর পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। যে ব্যক্তি রমজানে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় তারাবি পড়বে, আল্লাহ তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেবেন। যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় শবেকদরে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহীহ বুখারী : ৩৮)।
রাসূল (সা.) প্রথমে কয়েকদিন জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়েছিলেন; কিন্তু জামাতে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকলে এবং তারাবি আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে রাসূল (সা.) তখন উম্মতের সহজতার জন্য তারাবির সালাত মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়েননি; বরং একাকী ঘরে পড়েছেন।
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন: রাসূল (সা.) এক রাতের মধ্যভাগে বের হন। এরপর মসজিদে সালাত পড়েন। কিছু সাহাবিও তাঁর সঙ্গে সালাত পড়েন। সকালে সাহাবিগণ পরস্পর এ সালাত নিয়ে কথা বলেন। পরের দিন আরো বেশি মানুষ সমবেত হন। রাসূলের সঙ্গে তারা সালাত পড়েন। তৃতীয় দিন আগের দিনের চেয়ে বেশি মানুষ রাসূলের সঙ্গে সালাত পড়েন। চতুর্থ দিন মসজিদ ভরে গেল। রাসূল (সা.) একেবারে ফজরের সালাতের জন্য বের হন। নামাজান্তে তিনি বলেন, ‘আমি জায়গা সংকুলান নিয়ে ভয় করছি না; বরং ভয় করছি, না-জানি তোমাদের ওপর এ সালাত ফরজ করে দেয়া হয় কি না।’ (সহীহ বুখারী : ৯২৪)।
আবু বকর ও উমর (রা.)-এর খিলাফতের শুরুতে লোকজন এভাবে যে যার মতো বিক্ষিপ্তভাবে তারাবির সালাত আদায় করতেন; কিন্তু এখন যেহেতু ফরজ হওয়ার ভয় নেই, তাই উমর (রা.) বিক্ষিপ্ত জামাতগুলোকে উবাই ইবনু কাআব (রা.)-এর ইমামতিতে একত্র করে দেন। (প্রাগুক্ত : ২০১০)। তারাবির সালাত ২০ রাকাত, এটিই গ্রহণযোগ্য। সাহাবি, তাবিয়িনের স্বর্ণযুগ থেকে গোটা মুসলিম দুনিয়ায় তারাবির সালাত ২০ রাকাত পড়া হচ্ছে।
রাসূল (সা.) মাত্র তিন দিন তারাবির সালাত জামাতের সঙ্গে মসজিদে পড়েছেন। উম্মতের ওপর যাতে এ সালাত ফরজ না হয়ে যায়, এ জন্য বাকি সময় তিনি ঘরে একাকী পড়েছেন; কিন্তু আমরা দেখতে পাই, রাসূল (সা.) তারাবির সালাত ২০ রাকাতই পড়তেন।
ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন: রাসূল (সা.) রমজানে ২০ রাকাত তারাবি এবং বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফু ইবনে আবি শাইবা: ৭৭৭৪)। হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম হায়সামি রাহ. বলেন, ‘হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইবরাহিম আবু শায়বা, তিনি দুর্বল।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৫০১৮)। ইবরাহিম আবু শায়বাকে অনেকেই জয়িফ বলেছেন। কয়েকজন ইমাম তাঁকে বিশ্বস্তও বলেছেন। ইমাম ইবনু আদি বলেন, ‘তাঁর হাদিস গ্রহণযোগ্য। তিনি ইবরাহিম ইবনু আতিয়া থেকে উত্তম।’ ইয়াজিদ ইবনু হারুন বলেন, ‘তিনি তাঁর যুগের ইনসাফকারী বিচারক।’ (ইলাউস সুনানন : ৭/৮২)।
যদি ধরেও নেয়া হয় যে, ইবরাহিম জয়িফ, তারপরও হাদিসটি গ্রহণযোগ্য। কারণ, খুলাফায়ে রাশিদিনের যুগ থেকে ধারাবাহিকভাবে ২০ রাকাতের আমল চলে আসছে। তা ছাড়া কোনো জয়িফ হাদিসের পক্ষে যদি আমলে মুতাওয়ারাস তথা উম্মাহর সম্মিলিত অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা পাওয়া যায়, তাহলে সে জয়িফ হাদিস সহিহ এমনকি মুতাওয়াতিরের পর্যায়েও চলে যায়। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন ইমামের বক্তব্য তুলে ধরা হলো:
ইমাম জারকাশি রাহ. বলেন, ‘জয়িফ হাদিসকে যখন উম্মত গ্রহণ করে নেবে, তখন সে জয়িফ হাদিসের ওপর আমল করা হবে সহিহ হাদিসের মতো। এমনকি সেটা ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ে চলে যায়। এর দ্বারা অকাট্য কোনো বিধানও রহিত হয়ে যায়।’ (আন-নুকাত আলা কিতাবি ইবনিস সালাহ: ১/৩৯০, জারকাশি)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন