শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইরাকে পাসপোর্টের জন্য হাহাকার

শ্রমবাজারের দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে না মেশিনের হার্ডডিক্স বিকল : তিন বছরে ১৮ হাজার বিতরণ

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরাকে পাসপোর্টের জন্য প্রবাসী কর্মীদের মাঝে চলছে হাহাকার। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি ইরাকের বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট শাখার ওয়েবসাইটটির হার্ডডিক্স বিকল হয়ে যাওয়ায় পাসপোর্ট সরবরাহ এবং নবায়নের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রবাসী কর্মীরা পাসপোর্টের জন্য প্রতিদিন বাগদাদস্থ দূতাবাসে জড়ো হয়ে পাসপোর্ট না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পাসপোর্টের অভাবে অনেক প্রবাসীই ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারছে না। এতে তারা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। বাগদাদ থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর দেশটির নির্মাণ খাতসহ বিভিন্ন খাতে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। নানা কারণে বিগত তিন বছর যাবত বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দেশটির উচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারেননি। প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতি মাসে চার শত থেকে পাঁচ শত মার্কিন ডলার বেতন পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল নেই। দেশটির রাজধানী বাগদাদে দু’টি ব্যাংকের শাখা চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও তা’ বাস্তবায়নের তেমন সাড়া মিলছে না। ফলে ইরাক প্রবাসীরা দুবাই হয়ে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। এতে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
বিএমইটির সূত্র জানায়, করোনাউত্তোর বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সউদীসহ বিভিন্ন দেশে ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৫ জন নারী পরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে মার্চ মাসেই চাকরি লাভ করেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৯ জন। উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ইরাকের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা সম্ভব হলে জনশক্তি রফতানিতে আরো গতি বাড়তো।
এদিকে, মাহে রমজান শুরু হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা তাদের জমানো বেতনের টাকা বেশি বেশি দেশে পাঠাতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মার্চ মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৮৬ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৪৯ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে প্রবাসীরা ৩৭ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে।
গতকাল সোমবার বাগদাদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অব চ্য ান্সেরী ওয়াহিদুজ্জামান লিটন ইনকিলাবকে জানান, গত ১৫ মার্চ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম শুরু করতে গেলে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুর মেশিনের হার্ডডিক্স হঠাৎ বিকল হয়ে যায়। বিকল মেশিনটি পরিবর্তন করে নতুন মেশিন সরবরাহ করার জন্য ঢাকায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে। বাগদাদ দূতাবাসে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন মেশিন পাওয়া যাবে বলে হেড অব চ্যান্সেরী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নতুন মেশিন এলেই প্রবাসীদের পাসপোর্ট সরবরাহ কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হেড অব চ্যান্সেরী বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে এ যাবত প্রায় ১৮ হাজার পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পাসপোর্টের চাহিদা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরুল্লাহ আহমদ গতকাল সোমবার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমানে ইরাকে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক বাংলাদেশি কর্মী প্রতি মাসে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মার্কিন ডলার বেতন পাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইরাক সরকার ঘোষিত বাংলাদেশি জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন