আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগানুমতি অনুমোদন প্রদানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের নির্দেশনায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগানুমতি অনুমোদন প্রদানের লক্ষ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, পঁয়তাল্লিশ মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সফর থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। দেশটিতে বর্তমানের প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। দেশটি কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাটার টান শুরু হয়েছে। বায়রার একজন সাবেক ইসি সদস্য গতকাল এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
মালয়েশিয়া সরকার দু’মাস আগে বাংলাদেশের ৩৪টি মেডিক্যাল সেন্টার সরেজমিনে পরিদর্শন করে কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেয়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এসব মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা প্রকাশে গড়িমসি করছে বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক মেডিক্যাল সেন্টারের মালিক জানান। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা প্রকাশে অজ্ঞাত কারণে বিলম্ব হওয়ায় কর্মীদের ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। মেডিক্যালের চ‚ড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলেই মালয়েশিয়াগামী হাজার হাজার কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রম এবং ফ্লাইট দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হবে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি নিউ এইচ ইন্টারন্যাশনালের ১৫০ জন, অরবিটালের ৭০ জন এবং পাত ফাউন্ডারের ৭০ জন মালয়েশিয়াগামী কর্মীর নিয়োগানুমতির অনুমোদন প্রদানে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগানুমতির লিখিত অনুমোদন পাবে বলে নিউ এইচ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শওকত হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এসব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে নিয়োগানুমতির জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে ফাইল জমা দিয়েছিল। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগানুমতির যেসব বাধা ছিল তা মন্ত্রণায় দূর করে ফাইলে অনুমোদন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শওকত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমার নির্বাচিত মেডিক্যাল সেন্টার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখনো মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা প্রকাশিত না হওয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রথম ফ্লাইট দেয়া যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে জনশক্তি রফতানিকারক শওকত হোসেন বলেন, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মীর চরম সঙ্কট বিরাজ করছে। কর্মীর অভাবে দেশটির অনেক ফ্যাক্টরি ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তার মতে, দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু হলে দু’বছরে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ১ গতকাল ইনকিলাবকে জানান, আরো বেশ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে নিয়োগানুমতির জন্য মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এসব চাহিদাপত্রও নিয়োগানুমতি লাভের প্রক্রিয়া চলছে।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে কর্মী প্রতি অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিগত দশ সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই ১০ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকাÐের দরুণ ২০১৮ সালে তৎকালিন সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেশটির কুয়ালালামপুরে উভয় দেশের মধ্যে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী দেশটির নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো কর্মীর লোভির অর্থ এবং কর্মীর আসা যাওয়ার বিমানের টিকিট দেয়ার কথা রয়েছে।
গত ২ জুন ঢাকায় দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়টি চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১২ জুন থেকে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুককর্মীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। জেলা কর্মসংস্থান অনলাইনে আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে এই নিবন্ধন শুরু করা হয়। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুকর্মীদের বিএমইটি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সিরা নিবন্ধনের উপযোগী বলে বিবেচিত হবে। নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে ২ বছর পর্যন্ত। যারা আগে থেকে নিবন্ধন করেছেন, তাদের নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে না।
এদিকে, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি ৩৪টি মেডিক্যাল সেন্টারকে কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত অধিকাংশ মেডিক্যাল সেন্টার পরিদর্শন না করেই নানা অযুহাতে আটকে দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। ফলে সার্ভারে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সক্ষম মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর তালিকা এখনো প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাধার সৃষ্টি হতে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা প্রকাশের লক্ষ্যে গতকালও মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবার কথা ছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন