বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েও নেয়া যাবে ব্যাংক ঋণ

প্রাথমিকের শিক্ষক মারা গেলে শিশু সন্তানের ভরণপোষণ সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্তের তারিখ পেছানোর কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

পদ্মা সেতু কবে চালু হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা বলেছি ৩০ জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু আমরা ওপেন করে দেবো। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আসলে তো পদ্মা সেতু শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করছি যে যদি সম্ভব হয়, দেখা যাক, আমি ওনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেও কথা বলবো যে উনি কী বলেন। উনি (প্রধানমন্ত্রী) যে কথাটি বলেছেন তার একটি লজিক হলো, রিসেন্টলি কিছু মালামাল আসতে সমস্যা হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। এই মালামালগুলো মার্চ মাসে আসার কথা ছিল, কিন্তু এখন কিছুটা অনিশ্চয়তা চলে এসেছে। এ জন্য আমার মনে হয়, আমাদের একটি সেফটি মেজার...আমাদের টাইম আছে ২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব মালামাল আসবে। কিছু কিছু মালামাল আছে যেগুলো পৃথিবীতে একটা বা দুটো দেশই বানায়। এখন এমনিতেও কোভিডের জন্য আসতে দেরি হচ্ছিল, এখন যুদ্ধের কারণে দেরি হচ্ছে।

অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েও নেওয়া যাবে ব্যাংক ঋণ
আমানত, বন্ড, কৃষিপণ্য, মেধাস্বত্ত্বসহ বিভিন্ন অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখেও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বিধান রেখে সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ২০২২ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা একটা নতুন আইন। আমরা ব্যাংক থেকে যেসব লোন দিই, সেটার বিপরীতে একটা ইকুইটি দিতে হয়, স্থাবর সম্পত্তি কিংবা ক্যাপিটাল ইকুয়েপমেন্ট আনলে সেগুলো। এখানে অস্থাবর সম্পত্তিকে ইকুইটি হিসেবে দেওয়ার জন্য একটা প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,এখন থেকে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও কেউ ঋণ নিতে পারবে। কারো যদি স্থায়ী আমানত থাকে সেটার বিপরীতেও, সেটাকে সিকিউরিটি রেখে অনুপাত অনুযায়ী ঋণ নিতে পারবে। কারো যদি বন্ড থাকে সেটা দিয়েও সে ঋণ নিতে পারবে। দামি গাড়ি, স্বর্ণ, মেধাস্বত্ব বন্ধক রেখেও ঋণ নেওয়া যাবে। এছাড়া খনিজসম্পদ, কৃষিজাতপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ ও জলজ প্রাণী, গবাদি পশু, রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত, নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট, কোনো সেবার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃতি বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়া যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা করার কারণ হলো মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বন্ধক দেওয়ার মতো স্থাবর সম্পত্তি নেই। তারা যেন তাদের অস্থাবর সম্পত্তি জমা দিয়ে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এটা বিনিয়োগের ভিত্তিটাকে অনেক বড় করবে।

স্থাবব সম্পত্তি বন্ধক রেখেই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জালিয়াতি হয়। এক্ষেত্রেও জালিয়াতি সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আপনি শিল্প স্থাপন করতে গেলে তো ব্যাংকের আলাদা ক্রাইটেরিয়া আছে। এটা মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেবে। ব্যাংকের এপ্রিজাল (মূল্যায়ন) সিস্টেম আছে, সেটা যদি ফেয়ারলি করে। কেউ স্বর্ণ দিলে ব্যাংক সেটা চেক করে নেবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০২২ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি বাস্তবায়ন হলে চাকরিরত অবস্থায় কোনো শিক্ষক মারা গেলে তার অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানের লেখাপড়ার খরচ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দেওয়া হবে। এটা আজ চূড়ান্ত অনুমোদন হলো। সরকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হবে। তিনি বলেন, মূল বিষয় হলো চাকরিরত অবস্থায় একজন শিক্ষকের মৃত্যু হলে তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো সন্তান থাকলে, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু থাকলে ও তৃতীয় লিঙ্গের কোনো শিশু থাকলে তাদের লেখাপড়ার খরচ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। এটি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। সরাসরি সরকারি নয়, অটোনোমাস টাইপের। এটা আইন দিয়ে হবে। ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে শাখা বা কার্যালয় স্থাপন করা যাবে। পরিচালনায় একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে।

সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য এ কল্যাণ ট্রাস্ট সম্পর্কে তিনি জানান, এতে ২১ সদস্যের একটি ট্রাস্টিবোর্ড থাকবে। সেখানে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করবেন। সদস্য সচিব মহাপরিচালক কর্তৃক নিয়োগ করা একজন শিক্ষক হবেন। তারা তাদের মনোনয়নের তারিখ থেকে তিন বছরের জন্য ওই বোর্ডে থাকতে পারবেন।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ট্রাস্টের একটি তহবিল থাকবে। ট্রাস্টের নামে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোনো তফসিলি ব্যাংকে এটা রাখা হবে। এখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করা হবে। ট্রাস্ট তার আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করবে এবং বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করবে। বার্ষিক প্রতিবেদন পরবর্তী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেবে অর্থাৎ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। তাদের কাজ হবে শিক্ষক ও পোষ্যদের জন্য আর্থিক সাহায্য দেবে। শিক্ষকের স্বামী বা স্ত্রী-সন্তানের শিক্ষা সহায়তার জন্য এককালীন আর্থিক সাহায্য বা বৃত্তি দেবে। শিক্ষকের স্বামী বা স্ত্রী-সন্তানের জন্য বৃত্তিমূলক বা অন্যান্য পেশাগত আর্থিক সহায়তা দেবে। আর চাকরিরত অবস্থায় কোনো শিক্ষকের মৃত্যু হলে সেই শিক্ষকের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের জন্য লেখাপড়ার খরচ ট্রাস্টের তহবিল থেকে নির্বাহ করা হবে।

দ্বৈত কর চুক্তি পরিহারে নতুন আইন
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ-ইরান এবং বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সইয়ের লক্ষ্যে দ্বৈত করারোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ইতোপূর্বে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে যে দ্বৈত করারোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে, এ দুটি তেমনই। বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশের দ্বৈত করারোপ পরিহার চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ সমঝোতার ভিত্তিতে করের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে। এ সুবিধা নিয়ে ওইসব দেশের প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্জিত অর্থ নিজ দেশে পাঠানোর সময় হ্রাসকৃত হারে কর পরিশোধ করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত করের হার কর্তন ছাড়াই বিদেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্বৈত করারোপ চুক্তির আওতায় কী পরিমাণ কর কর্তন আইনসঙ্গত এ সম্পর্কিত এনবিআরের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন নেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন