শুরু হয়েছে রমজান মাস। রমজানের রোজা শেষে ইফতারীতে সবার একটু ভাল ইফতারী করতে মন চাইলেও সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হিমসীম খাওয়া নি¤œবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের সে সাধ খুব একটা পূরন হচ্ছেনা। কারন এবার অন্যান্য দ্রব্যের সাথে তালমিলিয়ে বেড়েছে ইফতার সামগ্রীর দাম। ইফতারী সামগ্রী হিসাবে সবার কাছে প্রিয় খেজুর, বেগুনী, ছোলাভূনা, মুড়ি, আলুর চপ, জিলাপী, খেজুর, শসা আর শরবত। আর বিত্তবানদের পছন্দ শাহী হালিম কাবাব, কবুতর, কোয়েলের রোষ্ট, শাহী জিলাপী, কালো ভূনা, কাচ্চি, গ্রীন চিকেন, নানসহ নানা রকম ফাষ্টফুড। করোনার কারনে গত দু’বছর তেমন ভাবে ইফতারীর বাজার বসতে না পারলেও রাজশাহীতে এবার ভিন্নচিত্র। বড় বড় হোটেল রেস্তরা থেকে পাড়া মহল্লার চায়ের হোটেল আর অস্থায়ী ইফতারীর দোকান। ফাষ্টফুডগুলো নানা প্যাকেজ সাজিয়ে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে। এসব প্যাকেটের সর্বনি¤œ মূল্য তিনশো থেকে সাতশো টাকার মধ্যে। আর গরীবের পেয়াজু বেগুনীসহ অন্যান্য সামগ্রীর দামও কম নয়। বেগুনী পেয়াজুতে বেড়েছে প্রতি পিচ দু’থেকে তিন টাকা। আবার কোথাও এসবের আকারও কমেছে। যে জিলাপী আগে কেজি ছিল একশো বিশ টাকা। এখন তা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে একশো ষাট থেকে একশো আশী টাকা কেজি দরে। নিমকী একশো দশ টাকা কেজি আগে বিক্রি হলেও তা ছাড়িয়েছে একশো ষাটে। রমজান শুরুর আগে শসা কুড়ি টাকা কেজি থাকলেও রমজানের মাসে উঠে যায় ষাট টাকা কেজির আর ষোল টাকা হালির লেবু চল্লিশ টাকা দামের কারনে অপুষ্ট রসহীন লেবু বাজারে টেনে আনা হয়েছে। কলার হালি ষোল টাকা থেকে ত্রিশ টাকা। এমনিভাবে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। দ্বিগুনের কাছাকাছি।
রাজশাহীতে এখন প্রচন্ড গরম। তাপমাত্রা প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। সারাদিন রোজা থাকার পর মানুষ একটু শরবত খেয়ে প্রানটা জুড়াতে চাই। কিন্তু সে উপায় নেই ভেজাল আখের গুড়ের দামও শত টাকা কেজির উপরে। এ সময় তরমুজে বাজার ভরা থাকে। এবারো প্রচুর তরমুজ বাজারে দেখা গেল তা সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে। ষাট টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। ডাবের দাম ষাট থেকে আশী টাকা। বেলের শরবত খেতে মন চাইলেও ছোট আকারের একটি বেল বিক্রি হচ্ছে চল্লিশ টাকায়। প্রত্যেকটা ফলের দাম রমজানে এসে বেড়েছে কেজি প্রতি কুড়ি থেকে একশো টাকা। আপেল, আঙ্গুর, কমলা, মাল্টা, খেজুর সবকিছুর দাম বাড়তি। ফল বিক্রেতা বাদশা মিয়ার সোজা সাপটা জবাব আমরা ইচ্ছে করে ফলের দম বাড়ায়নি। ইফতারের বাজার কোন জিনিষের দাম কম। আমরা পাইকারী বাজারে বেশী দামে কিনছি। ফলে দাম বাড়তি। রমজানে সাধারন মানুষের কাছে ফল কেনা এখন বিলাসীতা। নগরীর সাহেব বাজার, লক্ষীপুর বাজার, নিউমার্কেট, তালাইমারী, বিনোদপুর বাজার, হড়গ্রাম বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ইফতারী বাজারে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। ফুটপাত ও ছোট ছোট দোকান গুলোয় সামান্য কিছু কম দামে পেয়াজু বেগুনী ছোলাসহ কিছু ইফতারী সামগ্রী পাওয়া গেলেও তার মান বিশেষ করে তেলেভাজা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও বড় ছোট সর্বত্র পাম তেলের ছড়াছড়ি।
ইফতার সামগ্রী বিক্রেতাদের দাবী বিগত সময়ের চেয়ে এবার তেল চিনি মাংসসহ সব উপকরনের দাম বেড়েছে। বেগুনীর বেগুনেও দামে আগুন লেগেছে। রমজানের আগে কুড়ি টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ষাট থেকে আশী টাকা কেজি। এসব কারনে স্বাভাবিক ভাবে ইফতারীর দাম বেড়েছে। ইফতার বাজার ঘুরে দেখা যায় দুপুরের পর থেকে শুরু হচ্ছে তৎপরতা। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রহমানীয়া হাটেল তাদের ফিরনীর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বাটার মোড়ের জিলাপীর কদর সারা বছর জুড়ে। ইফতারী বৈচিত্র আনা প্রতিষ্ঠান চিলিস তাদের সুনাম ধরে রেখেছে। বাজারে ঘোল ও মাঠার বিক্রি বেড়েছে। সারাদিন রোজা রাখার পর তৃষ্ণা মেটাতে এসব ঘোল মাঠার কদর কম নয়।
ইফতার বাজারে বিত্তবানদের বিলাসী কেনাকাটা যেমন রয়েছে তেমনি ছোট খাট দোকানে সামান্য কেনাকাটা করছে সাধারন মানুষ। দুটি বড় দোকানের মালিক জানালেন এখনো ইফতারীর বাজার তেমন জমে ওঠেনি। সাধারন মানুষের আয় কমে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের প্রভাব পড়েছে ইফতারীর বাজারেও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন