শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি

অনিয়মের অভিযোগ শুনলেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম কৃষকের কান্না, অরক্ষিত হাওর এলাকা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

অরক্ষিত দেশের হাওর। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকায় আড়াই কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় দুর্যোগ-দুর্বিপাক প্রতিবছরই আঘাত হানে হাওরে। ভারর থেকে নেমে আসা ঢল ঠেকাতে ৭ জেলার এই হাওরে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর এসব বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের বরাদ্দের অর্থ তুলে নেয়া হলেও বাঁধ সংস্কার হয় না। ফলে এবার অসময়ে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্চ, নেত্রকোনাও কিশোরগঞ্জের হাওরের হাজার হাজার একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী। এসময় হাওর এলাকার কৃষকরা ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এদিকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কোনো প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ গতকাল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। সময়মতো বিল না পাওয়ায় ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় বোরো জমি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

আয়তনের দিক থেকে যা দেশের এক-পঞ্চমাংশ নিম্নাঞ্চল। যা হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই হাওর এলাকার অধিবাসীরা সারাদেশের মৎস্য চাহিদার ২০ ভাগ যোগান দেয়। দেশের খাদ্য চাহিদার ১৮ শতাংশ ধান উৎপাদন হয় হাওরে। এখানকার কৃষি উৎপাদন ও মৎস্যের পরিমাণ জনসংখ্যা অনুপাতে উদ্বৃত্ত। ষাটের দশকে নির্মিত হাওর এলাকার বেড়িবাঁধের বেশিরভাগই এখন নাজুক হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় বাঁধের কোনো অস্তিত্বও নেই। হাওর এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও মেরামতের নামে প্রতিবছর চলে সীমাহীন দুর্নীতি। সরকারি অর্থের হয় হরিলুট। কিন্তু হয় না স্থায়ী শক্তিশালী বেড়িবাঁধ। সব সময়ই অভিযোগের তীর দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। কার্যকর বিচারও হয় না সংশ্লিষ্টদের।
ভারত থেকে আসার পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি হাওর এলাকার কৃষকদের। ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে নিমজ্জিত হয়েছে হাওরে বহু এলাকা। বেড়িবাঁধ ভেঙে তালিয়ে গেছে ফসলের জমি ও জনবসতি। ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় এসব হাওর এলাকার সাধারণ মানুষ। বর্ষাকালে হাওরে পানিরাশির ব্যাপ্তি এত বেশি থাকে যে দেখে মনে হয় তীরহীন সমুদ্র। প্রধানত বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে হাওর দেখা যায়। এই হাওরগুলো নদী ও খালের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ পেয়ে থাকে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ছোট-বড় ৪১৪টি হাওর বিল ও ভূমি রয়েছে। বিলমহাল রয়েছে ২৮ হাজার। বিল রয়েছে ৬ হাজার ৩০০। এর মধ্যে হাওরের আয়তন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। ভাটির দেশ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে রয়েছে ১৩৩টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি হাওর রয়েছে। কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা ভারত থেকে আসার পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বর্ষা আসার আগে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে ভারতে পাহাড়ি ঢলের প্লাবিত হয়ে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
দেশের আহরিত মৎস্যের শতকরা ২৫ ভাগ মৎস্য হাওরাঞ্চল থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। হাওর এলাকায় দেশের শতকরা ১৮ ভাগ চাল উৎপাদিত হয়। দেশের শতকরা ২২ ভাগ গবাদিপশু এ এলাকায় পালিত হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায় দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সরাসরি প্রায় ১৩ লাখ মৎস্যজীবীর সার্বক্ষণিক পেশা মাছ ধরা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য খাতের অবদান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কৃষিজ আয়ের শতকরা ২২ দশমিক ২৩ ভাগ আসে মৎস্য খাত থেকে। আমাদের প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৬০ ভাগ যোগান দেয় মৎস্য খাত।
গত ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকে হাওর এলাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলা হয়, দেশের ৪১১টি হাওরের মধ্যে ৪৬টি থেকেই বছরে ৭০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন সম্ভব। আর সবকটি হাওরকে উন্নয়নের আওতায় আনা গেলে শুধু হাওরাঞ্চল থেকে উৎপাদিত ফসল দিয়েই সারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চাল রফতানি করা যেতে পারে।
গতকাল শুক্রবার সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে দুটি বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম গেলে দিরাই উপজেলার চাপতি হাওরপাড়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় পানিসম্পদ উপমন্ত্রীকে কৃষকরা ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার তিনি ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ডুবাইল বাঁধ পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রী জানান, পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের ঘোষণা করা হয়েছে, পাউবোর সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীকে সিলেটে অফিস না করে সুনামগঞ্জে অফিস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সুনামগঞ্জ থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে।
কৃষকদের অভিযোগ বিষয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ কারও অবহেলায় ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বোরবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাওরের বাঁধে অনিয়মের বিষয়ে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাসও দেন তিনি। দেশের খাদ্যশস্যের একটি বড় জোগান আসে হাওর থেকে। বিশাল হাওর বিস্তৃত ৭ জেলা নিয়ে। এ জমির পুরোটাই এক ফসলি। হাওরের বোরো ধান রক্ষায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধ তলিয়ে গেলে মানুষের দুর্দশার সীমা-পরিসীমা থাকে না। তাই বাঁধ নিয়ে শঙ্কা বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত কাটে না কৃষকের। ২ মার্চ থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্ত নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। এই পানি প্রবাহিত হয় ভাটির হাওরের নদ-নদীতে। প্রবল পানির চাপে হাওরের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যায় প্রথম ধাক্কাতেই, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাউবোর বাঁধের বাইরের এলাকা। হাওরের বাঁধ নিয়ে অনিয়ম, সময়মতো কাজ না হওয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই করে আসছিল কৃষক।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে পাউবোর প্রকল্পভুক্ত ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ ভেঙে ১৮৫ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। গত দুদিনে উজানের পানি একটু কমলেও বাঁধগুলো যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল পাউবো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার দিরাইয়ের চাপতির হাওর ডুবে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।
ফসল নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম পরিদর্শনে যান ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ এলাকায়। সেখান থেকে ফিরে রাতে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, কৃষক, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গতকাল শুক্রবার উপমন্ত্রী দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর পরিদর্শন করেন। এ সময় কৃষকরা তার কাছে অভিযোগ করেন, বৈশাখীর কোড়ে’ (গহীন গর্ত) ভালোমতো কাজ না হওয়ায় কালনী নদীর পানির তোড়ে ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে গেছে। অনিয়মের কারণে প্রতি বছরই এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতি হয় বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রকল্পেরই কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। যতটুকু কাজ হয়েছে, সেটাও দায়সারাভাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ না করলে আন্দোলনে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা পাউবোর মাঠ কর্মকর্তা ও ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ-সংস্কার তদারক কমিটির সদস্যসচিব হাসান গাজী বলেন, ৮৪ শতাংশ মাটির কাজ শেষ হয়েছে। আনুষঙ্গিক কাজ, ড্রেসিং ও ঘাস লাগানো শুরু হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় ধনু নদের পানি এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করায় কীর্তনখোলাসহ প্রায় সব ফসল রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিও অনেকটা কমে গেছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল ইনকিলাবকে বলেন, নদের খালিয়াজুরী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় অতিঝুঁকিপূর্ণ কীর্তনখোলাসহ অন্য বাঁধগুলো অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত।
পাউবো ও স্থানীয় কয়েক কৃষককের জানা গেছে, ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমায় চলে আসে। পানির প্রবল চাপে খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে চাপ বেড়ে যায়। ৩ ও ৪ এপ্রিল মদনের ফতেপুর হাওর, খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওর, চুনাই হাওর, বাইদ্যার চর, কাটকাইলের কান্দা, বৈলং হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। কীর্তনখোলা বাঁধের অতিঝুঁকিপূর্ণ ৫ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ চান তারা। ফোল্ডার-২-এর অধীন ৫৫ কিলোমিটার ওই বাঁধের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মাত্র ৫ কিলোমিটার। ওই অংশে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া গেলে কৃষকেরা অনেকটাই নির্ভার থাকবেন। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল বলেন, কীর্তনখোলা বাঁধের অতিঝুঁকিপূর্ণ ৫ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এ নিয়ে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ৫ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৯ এপ্রিল, ২০২২, ২:০৬ পিএম says : 0
বাড়ির মালিক যদি দুর্নীতি পরায়ন হয় তাহলে বাড়ির সকল লোকই তো দুর্নীতি পরায়ন হবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন