শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ডয়েসে ভেলের প্রতিবেদন মাসে আদায় ৯০০ কোটি টাকা চাঁদা

মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন পুলিশ-হাইওয়ে পুলিশ-বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালীরা নেয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৭ এএম

পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সব ধরনের পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ইফতার ও সাহরিতে যেসব পণ্য বেশি ব্যহহৃত হয় সেসব পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে কয়েকগুন। কৃষক পর্যায়ে যে তরমুজ ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে সেই তরমুজ ঢাকা শহরে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেগুন, লেবু, মরিচ, শশাসহ প্রতিটি পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। বাংলাদেশে পবিত্র রমজানে এই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দায়ি করছেন সড়কে চাঁদাবাজিকে। এমনকি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজেই স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পবিত্র রমজান মাসে সড়ক মহাসড়কে চলছে চাঁদাবাজি। এ নিয়ে ডয়েসে ভেলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি ইনকিলাব পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অভিযোগের পরও পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি থামছে না। খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেও এই চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর এই চাঁদার ভার শেষ পর্যন্ত বইতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের।
চাঁদাবাজির কারণেই তরমুজ ঢাকায় বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়, বেগুনের কেজি ১২০ টাকা আর লেবু হয় ৬০ টাকা বলে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. হানিফ খোকন। চাঁদা মেটাতে গিয়ে পণ্য পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে যায়। সাতক্ষীরা থেকে একটি মাছের ট্রাক চট্টগ্রাম রিয়াজউদ্দিন বাজারে যেতে সড়কে তিন-চার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। পচনশীল দ্রব্য হলে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে সকাল সাতটার মধ্যে মাছ নিয়ে যেতে না পারলে সেই মাছ বিক্রি করা সম্ভব নয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারেও তাই। মাছ, শাকসবজি সকাল সাতটার মধ্যে নিয়ে আসতে না পারলে আর উপায় নেই।

আন্তঃজেলা ট্রাক চালক মেহাম্মদ নিয়ামত আলী জানান, প্রতিটি ট্রিপে নানা পর্যায়ে চাঁদা দেয়া ছাড়া মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় একটি ট্রাক পণ্য নিয়ে এলে চার-পাঁচ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। এর মধ্যে মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন, পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালীরা রয়েছেন। এক ট্রিপে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিতে হয় দুই হাজার টাকা। এজন্য তারা আমাদের কার্ড বা টোকেন দেয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যখন ভাড়া ঠিক করি তার মধ্যে এই চাঁদার টাকা ধরেই ভাড়া ঠিক করি। ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। আর এই কারণে বাজারে শাক-সবজি, মাছ বা কাঁচামালের দামও বেড়ে যায়।

পণ্য পরিবহন ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব জানান, পুলিশের কেন্দ্রীয় চাঁদা ছাড়াও হাইওয়ে পুলিশকে আলাদাভাবে চাঁদা দিতে হয়। বিভিন্ন স্পটে নানা অজুহাতে ট্রাক দাঁড় করিয়ে পুলিশ চাঁদা নেয়। এর বাইরে এখন পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, ফেরির সিরিয়াল পেতে ফেরির লোকজনকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিয়ে আমাদের উপায় নেই।

অবশ্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের ৩০ টাকা করে মোট ৬০ টাকা করে চাঁদা আদায় বৈধ বলে দাবি করেন তিনি।
একাধিক সূত্র জানায়, এখানে একটি অশুভ আঁতাতও আছে। ফিটনেসহীন বা চলাচলের অনুপযোগী ট্রাক পুলিশের সাথে সমঝোতা করে পণ্য পরিবহণ করে। তারা মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করে। এই কার্ড তাদের ‘অবৈধতার বৈধতা’। এটা সারা দেশেই তাদের পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়।

বাংলাদেশে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের মোট সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। প্রতিটি ট্রাক যদি ট্রিপ প্রতি দুই হাজার টাকা করেও চাঁদা দেয় তাহলে মোট চাঁদা আদায় হয় ৬০ কোটি টাকা। যদি দুই দিনে একটি ট্রিপ ধরা হয় তাহলে মাসে আদায় হয় কমপক্ষে ৯০০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ চাঁদা অবিশ্বাস্য কী না জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা হানিফ খোকন বলেন, ‘মোটেও অবিশ্বাস্য নয়। আরো অনেক খাতে চাঁদা আদায় হয়। এখন মৃত মানুষের জন্যও চাঁদা নেয়া শুরু হয়েছে।’
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) হায়দার আলি খান বলেন, ‘চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নেই। আর কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও আমরা ব্যবস্থা নেই। ৯৯৯-এ অভিযোগ করা যায়। হাইওয়ে পুলিশ ফেসবুকে প্রচার করেছে, নম্বর দেয়া আছে। পুলিশ সদর দফতর থেকেও প্রচার করা হচ্ছে, নম্বরগুলোতে অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমাদের জানাতে হবে। জেলার এসপি আছেন, রেঞ্জ ডিআইজি সাহেব আছেন, হাইওয়ে পুলিশের আলাদা ইউনিট আছে সেখানে অভিযোগ করতে পারেন।’ আর মাসিক চাঁদার কার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আমরা এই অভিযোগ অনুসন্ধান করে দেখছি।’

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায়ই অভিযোগ দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ দিয়েছি। আর কার কাছে দেব?’
তার অভিযোগ, ‘পুলিশ ছাড়াও এখন সিটি করপোরেশন চাঁদা নেয়া শুরু করেছে। হাইওয়েতে ট্রাক দাঁড় করিয়ে চাঁদা নেয়া হয়।’ তবে মালিক সমিতির চাঁদার প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘এটা এখন নেয়া বন্ধ আছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Dipak Dutta ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৩ এএম says : 0
ঢাকায় এত দাম। আমি আজ বেগুন কিনলাম ৫০ টাকা কেজি,তরমুজ ৫০ টাকা কেজি,১০ টাকায় দু'পিস কাগজী লেবু। অবশ্য দিন পনেরো আগে প্রায় অর্ধেক ছিল। সাধারণ মানুষের তো অবস্থা বেহাল।
Total Reply(0)
Jakir Al Faruki ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৩ এএম says : 0
এটা কিন্তু সবাই জানে। শুধু জানেনা পুলিশ। কারণ তাদের কাছে কেও অভিযোগ করে না। হায় সেলুকাস! আসুন সবাই মন খুলে হাসি, হা! হা! হা!
Total Reply(0)
Humayon Kabir Himu ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৪ এএম says : 0
বলেন ভাই তরমুজে অত উপকার নাই তাহলে গরিব মানুষ সান্ত্বনা পাইবে।তরমুজ ফল টক।
Total Reply(0)
মানবাধিকার কমিশন ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৫ এএম says : 0
এটা ততক্ষণ বন্ধ হবেনা, যতক্ষণ সরকার পুলিশের উপর নির্ভর থাকবে। পুলিশ যা খুশি করবে সরকার এখানে অসহায় কেননা সরকার প্রশাসন নির্ভর বলে অনেকেই মনে করেন। জনগনের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে এর প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে, এর আগে এই জাতীর মুক্তি নাই.....
Total Reply(0)
AJ Intaj Patwary ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৫ এএম says : 0
আমরা এমন এক দেশে বসাবস করি যেখানে প্রতিটা ক্ষেত্রে দূর্নীতি
Total Reply(0)
Assad ৯ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৩৬ এএম says : 0
সরকারের কিছুই বলার মুখ নাই। যে পথেই হোক টাকা গুলি সরকারের লোকের পকেটেই যাচছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন