বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

স্বাদ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে

রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

রমজানের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও রাজশাহীর ঈদবাজার এখনো জমে ওঠেনি। করোনার কারণে গত দু’টি ঈদবাজার প্রায় ছিল অচল। এবার বিগত দিনের লোকসান কাটিয়ে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যা বেচা-কেনা তাতে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না তারা। শেষ দশ দিনে ঈদবাজার জমে উঠবে বলে তারা আশা করছেন।

দু’দিন মহানগরীর ঈদ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বিভিন্ন বয়সী ক্রেতা আসছেন। কেনার চেয়ে দেখছেন বেশী। মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ স্বাদ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে পারছেন না। ফলে হচ্ছে না প্রত্যাশিত কেনাকাটা। এ বাজার ও বাজার ঘুরছেন। দামে স্বস্তি নেই কোথাও। মেয়েদের চাহিদা থ্রি-পিস। এবারে থ্রি-পিসসহ সব কাপড়ের দাম বেশি। প্রতি পিসে বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে যে থ্রি-পিস বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় এখন তা হাজার ছড়িয়ে ১২০০ টাকার নিচে নয়।

রমজান এলে কেন দাম বাড়ল? এর জবাবে ব্যবসায়ীদের কথা, পাইকাররা বাড়িয়েছে। সব জিনিষের দাম বেশি তাই কাপড়ের দামও বেশি। তাছাড়া এবারের ঈদবাজারে ছন্দপতন ঘটিয়েছে প্রখর খরতাপ। দামের উত্তাপ আর খরতাপ মাথায় নিয়ে মানুষ ছুটছে ফুটপাতের দিকে। যে যার সাধ্যমত কেনার চেষ্টা করছে। আর যাই হোক দাম খানিকটা কম। তাছাড়া বেড়েছে শাড়ি লুঙ্গি গেঞ্জির দামও।

রাজশাহীর বড় বাজার, সাহেববাজারে বেশ ভিড়। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরডিএ মার্কেট যা গ্যাস চেম্বার নামে পরিচিত। এই দুটো বাজারে বেশি ক্রেতা আসছে। গণকপাড়া ও সাহেববাজার রাস্তায় ভাসমান কাপড়ের দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিড় বেশি হলেও বেচা-বিক্রি সে তুলনায় কম। রাজশাহীর নামকরা পাঞ্জাবী তৈরির রাজ্জাক টেইলার্সের মালিক জানালেন, স্বাভাবিক সময়ে শবে বরাত থেকে অর্ডার আসতে থাকে এবং দশ রমজানের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এবার এখন পর্যন্ত তেমন কাজ নেই।

প্যান্ট শার্টের জন্য খ্যাত গ্যালারী টেইলাসের বশির আহম্মেদ জানালেন, তার দোকানের প্যান্ট শার্টের কাপড়ও বিক্রি নেই। অর্ডারও নেই। এমনিভাবে মেয়েদের জন্য পোষাক তৈরির প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আব্বাস আলী জানালেন, এখনো তারা অর্ডার নিচ্ছেন। এবার আর কারো টেইলার্স অর্ডার বন্ধ ফলক ঝুলছে না। এবার টেইলার্সগুলোর দুর্দিন যাচ্ছে। দর্জি আর শ্রমিকরা এবারো প্রায় বেকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানুষ বেশী ঝুঁকছে রেডিমেট কাপড়ের দিকে। একটা পাঞ্জাবি পায়জামা শার্টের সেলাই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কাপড় কিনে সেলাই করার চেয়ে বেডিমেট কাপড় সাশ্রয়ী। যদিও তা মনের মত হয় না। রাজশাহীর নিউ মার্কেট ভিড় তেমন নেই। মধ্যবিত্তের ভরসার মার্কেটে সাধারণ মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। খরতাপের কারনে মানুষ বাধ্য হয়ে দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর ভিড় জমাচ্ছেন। ইফতার করে বাজারে চলে আসছে। ফলে সন্ধ্যার পর অনেক রাত পর্যন্ত ভিড় দেখা যাচ্ছে।

তবে উল্টো চিত্র সিল্কসিটি হিসাবে পরিচিত সপুরার রেশম পাড়ায়। বিত্তবানদের বিলাসী কেনাকাটা নজর এড়ায়না। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে এসে শীততাপ শোরুম ঘুরে ঘুরে চলছে কেনাকাটা। বেশ ক’জন রেশম শোরুমের কর্মীরা জানালেন, বিগত দু’বছর তেমন ব্যবসা না হলেও এবার তা পুষিয়ে নেয়া যাবে। ভিড় বাড়ছে।
রাজশাহী মহানগরীর পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটেছে এখানকার শিক্ষানগরী হিসাবে পরিচিত রাজশাহীতে বাইরে থেকে লেখাপড়া করতে আসা লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী। তাদের দিকে লক্ষ্য রেখে চালু হয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের শোরুম। সম্প্রতি কুমারপাড়া এলাকায় একটি বড় কোম্পানী তাদের শোরুম চালু করেছে।

ক’দিন আগে আরেকটি ফ্যাশান শোরুমের উদ্বোধন করেন একজন নামকরা চিত্র নায়ক। লক্ষ্য তরুন তরুণীদের আকৃষ্ট করা। শোরুমগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ভিড় কম নয়। কুমারপাড়ার শোরুমে ভিড় দেখে মানুষ বিস্মিত। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিলাস বহুল এসব শোরুমগুলোয় চলছে বিত্তবানদের বিলাসী কেনাকাটা। এখানে ভিড় দেখলে মনে হয় না মানুষ অর্থকষ্টে রয়েছে।

রানী বাজার এলাকার একটা শোরুমের কর্মী বলেন, যা ভিড় দেখছেন এদের সবাই ক্রেতা না। একদল ফিটফাট যুবক প্রচণ্ড গরম থেকে খানিকটা শীতল হতে কেনাকাটার নামে এ শোরুম ও শোরুমে ঘুরা বেড়ান।
ভিড় দেখা যায় জুতা-স্যান্ডেলের দোকানে। মধ্যবিত্তের ভরসা জুতা-স্যান্ডেলের দোকান ভূবনমোহন পার্কের সামনের ফুটপাতে। নানা রকমের জুতা-স্যান্ডেলের বাজার। কাপড় কেনা কাটার পর ভিড় করছে এখানে। তবে তারা জানান, তাদের ক্রেতার খরা চলছে। কসমেটিক্স ব্যাবসয়ীরা জানান, জামা জুতা কেনা শেষ হলে তারপর বাড়ে কসমেটিক্সের দোকানে। এখনও প্রত্যাশিত ক্রেতা আসেনি।

সাধারণ ব্যবসায়ীরা ঈদ বাজারে এমন বেহাল দশার কারণ হিসাবে বলছেন মানুষের হাতে টাকা নেই। করোনার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মানুষ জীবন ধারনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনবে না কাপড় কিনবে। এনিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটি। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কিছুতেই সমন্বয় ঘটাতে পারছেন না। তবুও ঈদ বলে কথা। যেভাবেই হোক পরিবারের সদস্যদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে রয়েছে প্রানান্তকর চেষ্টা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Yousman Ali ২০ এপ্রিল, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
দাম যায় হোক কিছু হলেও কিনুক সবাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন