ফের বন্ধ হচ্ছে দেশের একমাত্র পাথরখনি মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিডেট। এবারও সেই একই কারণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড (বিস্ফোরক) সংকট। ১৩ মার্চ বন্ধ হওয়ার পর জোড়াতালি দিয়ে ২৮ মার্চ খনি চালু করা হয়। কিন্তু ১৫ দিন যেতে না যেতে আবারও শেষ হওয়ার পথে খনির অপরিহার্য এই কাঁচামাল।
খনি সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে মাত্র এক সপ্তাহের বিস্ফোরক মজুত আছে। অভিযোগ উঠেছে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিডেটের (এমজিএমসিএল) একজন প্রভাবশালী পর্ষদ সদস্য ও একটি সিন্ডিকেটের কমিশন বাণিজ্যের কারণে এবারের এই সংকট।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে বিস্ফোরক সমস্যার সমাধান না হলে এবার দীর্ঘমেয়াদি খনি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় আজ জরুরি পর্ষদ সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানায়, এই বিস্ফোরক আমদানির সঙ্গে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। কিছুদিন পরপর এভাবে বিস্ফোরক আমদানির নামে তারা কোটি কোটি টাকার কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছে। এজন্য বারবার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে শেষ মুহূর্তে বেশি দামে বিস্ফোরক আমদানি করার জন্য সময়ক্ষেপণ করছে। সংস্থাটি এর স্থায়ী সমাধান করার জন্য এবার এমজিএমসিএলকে চাপ দিলেও সিন্ডিকেটের কারণে তা হয়ে উঠছে না।
জানা গেছে, আজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিষয়টি এজেন্ডা আকারে উপস্থাপন করা হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রো কার্বন ইউনিটের ডিজি ও এমজিএমসিএলের পর্ষদ সদস্য আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান বলেন, খনি যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য এবার জরুরিভিত্তিতে বিস্ফোরক আমদানির জন্য তারা চেষ্টা করছেন।
এর আগে বিস্ফোরক আমদানিসহ খনি পরিচালনায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে পেট্রোবাংলা গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে একজন জিএমসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। প্রাথমিক তদন্ত ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী খনির জিএম আবু তালেব ফরাজী, ডিজিএম রফিজুর ইসলাম ও মতিয়ার রহমানকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানির খনি থেকে পাথর উত্তোলন করছে বেলারুশের ঠিকাদার জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। চুক্তি অনুযায়ী পাথর উত্তোলনের জন্য যাবতীয় মেশিনারিজ, ইক্যুইপমেন্ট ও বিস্ফোরক জোগান দেবে এমজিএমসিএল। আর প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ২০০ টন পাথর উত্তোলন করবে জিটিসি।
কিন্তু নানা কমিশন বাণিজ্যের কারণে সিন্ডিকেট প্রায়ই কৌশলে প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ, ইক্যুইপমেন্টের জোগান বন্ধ করে দেয়। এর আগেও এই সিন্ডিকেট চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ১১ মাসের বেশি সময় ঠিকাদার কাজ না করে বসে ছিল। এর ফলে ৬০০ কোটি টাকার বেশি পাথর উত্তোলন সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন