করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর রাজনৈতিক ইফতার মাহফিল বন্ধ ছিল। এবার সারাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো ইফতারের আয়োজন করছে। তবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘ইফতার কূটনীতি’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই বিদেশী কূটনীতিকদের সন্মানে ইফতারের আয়োজন করেছেন। বিশেষ করে ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের ইফতারে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। তারা যাতে ইফতারে আসেন সে জন্য দেনদরবারও করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিরাখার প্রেক্ষাপটে এবারের ইফতার আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই ‘ইফতার কূটনীতি’র। সবার আগে এবার ১২ এপ্রিল কূটনীতিকদের সন্মানে ইফতারের আয়োজন করে বিএনপি। হোটেল ওয়েন্টিনে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। সেখানে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ভারতের হাইকমিশনারসহ ৮ দেশের রাষ্ট্রদূত ও ১১ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ মোট ২৪ কূটনীতিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগম দলগতভাবে কূটনীতিকদের সন্মানে ইফতারের আয়োজন না করে দলের উপকমিটিকে দায়িত্ব দেয়। দলটির আন্তর্জাতিক উপকমিটির আয়োজনে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দূতাবাসের ইফতারে যোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এমনকি ভারতীয় হাইকমিশনের ইফতার পার্টিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগাদান করেছেন। আবার কোন দলের ইফতার আয়োজনে কোন দেশের কূটনীতিক অংশ নেননি এবং কারা কারা ইফতারে গেছেন এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির আয়োজনে গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। গত দুদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা ওই ইফতার আয়োজনে যোগ দেননি। সেসব দেশের নাম উল্লেখ করে এমন দাবি করা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে নানামুখী আলোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আয়োজিত ইফতারে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টার, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ হাশিম, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন ও পাকিস্তানের সহকারী হাইকমিশনার অংশ নেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আগামী নির্বাচানকে কেন্দ্র করে ইফতার কূটনীতি জমে উঠেছে। আওয়ামী লীগ যেমন চাইছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে। অন্যদিকে বিএনপি চায় দেশে জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে বিদেশীরা যেন গুরুত্বপূণূ ভূমিকা রাখেন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে অপ্রকাশ্যে বা অঘোষিতভাবে ক্ষমতার পালাবদলে একটা ভূমিকা রাখেন কূটনীতিকরা। তাই দলগুলো তাদের ইফতারে কত বেশি কূটনীতিকের মেলবন্ধন বা সমাবেশ ঘটাতে পারে, সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন