আল্লাহর এক বিশিষ্ট ফেরেশতার নাম মালাকুল মউত, যিনি আযরাইল নামে পরিচিত। তিনি মানবের প্রাণহরণের দায়িত্বে নিয়োজিত। তাকে এ কঠিন দায়িত্ব প্রদান ও তা গ্রহণের একটি চমকপ্রদ কাহিনী বিভিন্ন তফসীর গ্রন্থে রয়েছে। এগুলোতে সমগ্র মানবজাতির জন্য রয়েছে শিক্ষা ও চিন্তার খোরাক। এ পর্যায়ে আমরা দু’টি মাত্র ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। একটি মানবমÐলীর প্রাণহরণের দায়িত্ব গ্রহণ এবং অপরটি এক ব্যক্তির প্রাণহরণে তার প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত।
আদম সৃষ্টি পূর্বকথা। আল্লাহ তা’আলা যখন মানব সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, তখন একে একে তার প্রধান চার ফেরেশতাকে একটি নির্দিষ্ট স্থান হতে এক মুঠো মাটি আনার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী, প্রথমে হজরত জিবরাইল (আ.) নির্দেশিত স্থানে গমন করেন এবং মাটি স্পর্শ করা মাত্র সে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলে উঠে তাকে স্পর্শ না করতে এবং যুক্তি হিসেবে বলে, সে এখানে আল্লাহর নির্দেশে অবস্থান করছে, এখানেই থাকবে, কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। মাটির বক্তব্য শুনে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) ব্যর্থ মনোরথ হয়ে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসেন এবং তার অপারগতা বর্ণনা করেন।
অতঃপর মাটি আনার জন্য ফেরেশতা মিকাইল (আ.) আদিষ্ট হন। তিনি মাটি আনতে গেলে তার সাথেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। সুতরাং এ ফেরেশতাও মাটি গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসেন এবং আল্লাহর দরবারে কৈফিয়ত পেশ করেন। অতঃপর তৃতীয়বার ফেরেশতা ইসরাফিল (আ.) মাটি আনার জন্য প্রেরিত হন। পূর্বের দুই ফেরেশতার ন্যায় এই তৃতীয় ফেরেশতাও মাটির সাথে বাকযুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফিরে যান। শেষবারের মতো মালাকুল মউত আজরাইল (আ.)-এর পালা। আদিষ্ট হওয়ার পর তিনি আরজ করেন, আমার প্রথম তিন সহকর্মী যে কাজটি করতে সক্ষম হননি, হে খোদা! তা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব?
আল্লাহর পক্ষ হতে বলা হলো, ‘যাও তুমি মাটি আনতে পারবে।’ নির্দেশ অনুযায়ী, ফেরেশতা আজরাইল (আ.) মাটির নিকট গমন করেন এবং মাটি স্পর্শ করতে উদ্যত হলে মাটি চিৎকার করে বলে উঠে, তাকে স্পর্শ করা যাবে না, সে আল্লাহর নির্দেশই এখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। ফেরেশতা তার বক্তব্য শ্রবণ করে বলেন, আমাকেও আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, মাটি নিয়ে যেতে। এই বলে তিনি খপ্ করে এক মুঠো মাটি নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হন।
ফেরেশতা কর্তৃক মাটি গ্রহণ এবং মাটি দ্বারা আদম সৃষ্টির সর্বশেষ ধাপ হিসেবে প্রাণও সঞ্চারিত হয়ে যায়। অতঃপর মানবের প্রাণহরণের প্রতিক্রিয়া। এ প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ উল্লেখিত চারজন ফেরেশতাকেই মনোনীত করেন এবং একে একে তাদের প্রত্যেককে এ দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বলেন। তাদের প্রথম তিন জনই প্রত্যেকেই এ বলে অপারগতা জ্ঞাপন করেন যে, মাটি আনার ন্যায় অতি সহজ কাজটি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। জীবিত মানবের প্রাণ হরণ করার মতো এ সুকঠিন কাজটি করা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না। আল্লাহ তাদের ওজর শ্রবণ করেন।
অবশেষে মালাকুল মউতের ডাক পড়ে।
খোদায়ী আদেশ অমান্য করার উপায় নেই। ভয়ে ভয়ে তিনি আরজ করেন, ‘হে খোদা! আদম সৃষ্টির জন্য আমার সুনাম-খ্যাতি বিনষ্ট হয়েছে এবং যথেষ্ট দুর্নামের ভাগী হয়েছি, মানবের প্রাণহরণের ন্যায় এ পাষাণ ও নিষ্ঠুর কাজটি করতে গেলে আমার দুর্নামের সীমা থাকবে না। আল্লাহ তা’আলা আজরাইল ফেরেশতার কথা শুনে বলেন, তোমার চিন্তার কোনো প্রয়োজন নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করে দেবো, যাতে তোমাকে প্রাণহরণকারী কেউ বলবে না, তুমি এ অভিযোগ হতে আড়াল হয়ে যাবে।
আজরাইল (আ.) সে ব্যবস্থা কি জানতে চাইলে, আল্লাহ তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, আমি মানুষের মধ্যে নানা প্রকারের রোগ সৃষ্টি করে দেবো এবং কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মৃত্যুবরণ করবে, তখন সবাই বলবে, অমুক রোগে লোকটি মৃত্যুবরণ করেছে, কেউ তোমার নামও উচ্চারণ করবে না। অতঃপর ফেরেশতা আজরাইল (আ.) প্রাণহরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ঘটনার নির্ভরযোগ্যতা যাই হোক না কেন, তবে এর যৌক্তিকতা বোধগম্য। এতে মানুষের ঈমানের পরীক্ষা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন