আন্দোলন-সংগ্রামে যুবদলের নেতাকর্মীদের ওপরই সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। কিন্তু বর্তমান কমিটির নেতারা বিগত সাড়ে ৫ বছর ধরে সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। একই সঙ্গে দীর্ঘ এই সময়ে সংগঠনকে গুটিকয়েকজনের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারা, তৃণমূল কমিটি গঠনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে। কমিটির নেতাদেরকে বার বার পূর্ণাঙ্গ করতে সময় বেঁধে দেয়ার পরও তা করতে ব্যর্থতার কারণে এবার ছাত্রদলের পথেই যুবদলকে নিয়ে এগুচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খুব শিগগিরই বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়া সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকদের সাথে কথা বলেন তারেক রহমান। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রত্যেক সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকের সাথে পৃথকভাবে (ওয়ান টু ওয়ান) কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি নেতাদের কাছে বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করতে বলেন এবং নতুন নাকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি চান এ বিষয়ে মতামত নেন। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমান কমিটির দীর্ঘ সময়ে যুবদলের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করতে বলেন। এছাড়া নতুন কমিটি হলে কেমন হবে বা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করলে কেমন হবে সে বিষয়ে মতামত দিতে বলেন। প্রত্যেকের কাছে পৃথকভাবে জানতে চান তিনি পূর্ণাঙ্গ নাকি নতুন কমিটির পক্ষে? ইনকিলাবের সাথে যেসব নেতার কথা হয়েছে তারা সকলেই জানিয়েছেন যে, তারা প্রত্যেকেই নতুন কমিটির পক্ষে মত দিয়েছেন।
তারা বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর হয়ে গেছে। এই কমিটি রাজপথে কতটা কি করতে পেরেছে তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। তাই আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামকে সফল ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হলে সংগঠনকে উজ্জীবিত করতে হবে। আর এটি সম্ভব হবে নতুন নেতৃত্ব আসলে। কয়েকজন সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটির উদাহরণ দিয়ে বলেন, ছাত্রদলে নতুন কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। নতুন নেতারা নতুন কৌশল নিয়ে এগুচ্ছেন। যুবদলেও যদি নতুন নেতৃত্ব আসে তাহলে কৌশল, কর্মপন্থা, পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনে ঝাঁকুনি তৈরি হবে। নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী এক নেতা বলেন, যাকেই দায়িত্ব দেয়া হোক সেটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত। কিন্তু একটা পরিবর্তন প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নতুন আংশিক কমিটি গঠনের সময়ও সদ্য বিলুপ্ত কমিটির (সুপার ফাইভ বাদে ৬০ সদস্যের বাকিদের) প্রত্যেকের ওয়ান টু ওয়ান মতামত নেন তারেক রহমান। প্রত্যেকে তাদের মতামত প্রদান করে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে সর্বময় ক্ষমতা সাংগঠনিক অভিভাবকের ওপর অর্পণ করেন। পরে ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সুপার ফাইভের সাথে বৈঠকে বসে হাইকমান্ড। তখন সুপার ফাইভের নেতারাও সাংগঠনিক অভিভাবকের ওপর নতুন কমিটির ব্যাপারে সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করেন। যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে বিএনপির হাইকমান্ড।
২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির নেতারা হলেনÑ সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। মেয়াদ শেষের প্রায় তিন বছর পর ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যুবদলের কেন্দ্রীয় ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন দায়িত্বশীল নেতারা। এ আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে যুবদল। তাদের নেতৃত্বে উপজেলা-থানা-পৌর শাখার কমিটি গঠন করতে ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। যুবদলের দফতর জানায়, টিমের তত্ত্বাবধানে সারাদেশের ৯৩৫টি ইউনিটের (উপজেলা-থানা-পৌর) বেশিরভাগ শাখায় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে প্রায় সবকটিতে কমিটি করা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যুবদলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন, নানা উপঢৌকন গ্রহণের মাধ্যমে পদায়নের অভিযোগ করা হয়। এজন্য একাধিক কমিটি স্থগিত করারও ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ৩৫১ সদস্যবিশিষ্ট একটি খসড়া কমিটি তারেক রহমানে কাছে পাঠায় যুবদল। তবে তারেক রহমান যুবদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আগ্রহী নন। তিনি বরং বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয়ার পক্ষে বেশি আগ্রহী। তবে যুবদলের বর্তমান ও পদবঞ্চিত অসংখ্য নেতা তারেক রহমানকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানান। তারা বুঝিয়ে বলেন যে, কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হলে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়বেন। যারা কোনো পরিচয় দিতে পারবেন না। অন্তত এক মাসের জন্যও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে অনেকেই পদ পেয়ে পরে রাজনীতি ভালোভাবে করতে পারবেন। দলের চলমান সঙ্কটময় মুহূর্তে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করাটা খুবই জরুরি। তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব। অবশ্য কমিটির বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নাখোশ বিএনপির হাইকমান্ড।
যুবদলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী যারা : যুবদলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে আলোচনায় আছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, সহ-সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহম্মেদ, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, হাবিবুর রশিদ হাবিব, আকরামুল হাসান প্রমুখ।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, কমিটি গঠন-পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দলের হাইকমান্ড যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সংগঠনের স্বার্থে দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্তই নেবেন সেটার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন