বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের নির্মাণাধীন বলেশ্বর নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার গাবতলা বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের মাঝে ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা এই ফাটল দেখা যায়। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ফাটলের স্থানে জড় হতে থাকে। এর আগে ফেটে যাওয়া এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা গাবতলা গ্রামের ছফেদ খানের ১০ কাঠা জমি গাছপালাসহ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এদিকে তিন বছর মেয়াদী বাধঁ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছয় বছরে গড়িয়েছে। এছাড়া নির্মাণের বাঁধের মধ্যে মাটি না দিয়ে বালু দেয়ায় এমন ফাটল ধরেছে বলে দাবি করেছেন জন প্রতিনিধি ও এলাকাবাসী।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের গাবতলা ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, গত বুধবার বিকেলে হঠাৎ করে বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মীত নতুন ওয়াপদা বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় ১৫/২০ ফুট জায়গা জুড়ে বাঁধে ফাটল ধরায় এলাকাবাসীর মাঝে আতংক দেখা ছড়িয়েছে। বাধ নির্মাণে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে মাটির বদলে বাঁধে বেশিরভাগ বালি ব্যবহার করা হয়েছে এবং নদী শাসন না করায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয় বলে ঐ মেম্বার জানিয়েছেন। গাবতলা গ্রামবাসী হাফেজ কাজী, খালেক হাওলাদার, আসাদ খান, আসাদুল খান ও তরিকুল ইসলামসহ অনেক গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যপক দুর্ণীতি করায় বাঁধ মজবুত হয়নি তাছাড়া নদী শাসন না হওয়ায় শত শত কোটি টাকার বেড়িবাঁধ মানুষের কাজে আসবে না।
সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বলেশ্বর নদী শাসন ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ পানিতে বিলীন হয়ে যাবে বলে চেয়ারম্যান আশংকা ব্যক্ত করেছেন।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই আলম সিদ্দিকি বলেন, নির্মাণাধীন বলেশ^র নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ফাটল ও ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা খোজ খবর নিয়েছি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিইআইপি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন তারা।
সিইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, আমদের লোকজন ঘটনাস্থলে রয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সিডরের আঘাতে প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলাবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)’ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জের কুমারখালী থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। এই বেড়িবাঁধের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন